রাজ্য – এক রাতের অতি ভারী বৃষ্টিতে কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। নাগরাকাটা, বানারহাট-সহ একাধিক জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ফুলবাড়ীর একাধিক গ্রাম ভেসে গিয়েছে মহানন্দার জলে। শনিবার গভীর রাত থেকে একনাগাড়ে বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে শিলিগুড়ির বহু এলাকা। দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার অবস্থাও অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পাহাড়ি রাস্তা ও সংযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। পুরো পরিস্থিতির দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আটকে পড়া পর্যটক ও স্থানীয়দের উদ্ধারের জন্য নবান্নে চালু করা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম। জরুরি নম্বর হিসেবে রাখা হয়েছে ১০৭০, ৮৬৯৭৯৮১০৭০, ২২১৪-৩৫২৬ এবং ২২৫৩-৫১৮৫। পুরো পরিস্থিতির তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তারা ইতিমধ্যেই কলকাতা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় রওনা দিয়েছেন।
শনিবারের পর রবিবারেও প্রবল বৃষ্টির দাপটে উত্তরবঙ্গে জারি হয়েছে লাল সতর্কতা। তিস্তা ও মহানন্দা নদী সংলগ্ন এলাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। শিলিগুড়ি শহরেও বাড়ছে জলবন্দি মানুষের সংখ্যা। ডুয়ার্স অঞ্চলে বন্যা মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে রাজ্য সরকার; ইতিমধ্যেই একাধিক ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে এবং দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জলবন্দি মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তর করা হচ্ছে। বানারহাট ব্লকের বিন্নাগুড়ি ও গয়ারকাটার বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
ভুটান পাহাড়ে অতিবৃষ্টির ফলে হাতিনালা দিয়ে নেমে আসা জল গ্রামাঞ্চলে ঢুকে পড়েছে, যার জেরে নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি জলে ডুবে গেছে। গরুমারা জঙ্গলের রামসাই অংশ থেকে জলঢাকার জলে কিছু বন্যপ্রাণী ভেসে আসার খবর পাওয়া গেলেও বন দফতর ও জেলা প্রশাসন নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। পানবাড়ি এলাকায় বাসিন্দাদের ত্রাণশিবিরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিস্তা নদীর জলস্তর ক্রমবর্ধমান থাকায় বিপদ এড়াতে প্রশাসন সমস্ত সতর্কতা অবলম্বন করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা, খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ, এবং অবিরাম নজরদারি চালানো হচ্ছে।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে প্রশাসন দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং তাঁদের প্রয়োজনীয় সমস্ত সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে জিটিএ দার্জিলিংয়ের টাইগার হিল, রক গার্ডেনসহ জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। দার্জিলিং জুড়ে টয়ট্রেন পরিষেবা বন্ধ, পাশাপাশি আলিপুরদুয়ারেও ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে উত্তরবঙ্গ পরিবহন নিগমের তরফে বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অতিবৃষ্টি ও বন্যার দাপটে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গ এখন রাজ্য সরকারের নজরে। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ ও ত্রাণ তৎপরতা কিছুটা আশার আলো দেখালেও, প্রকৃতির প্রলয়ংকরী রূপে উত্তরবঙ্গবাসীর দুঃসহ দিন কাটছে।
