দেশ- আমেরিকার সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি হলেও ভারতের স্বার্থই থাকবে সর্বাগ্রে — ফের একবার এই অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। রবিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি জানান, “দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা চলছে, তবে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।”
জয়শঙ্কর বলেন, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার কিছু বাণিজ্য সংক্রান্ত সমস্যা রয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে, বাণিজ্য আলোচনায় স্থায়ী সমাধানে না পৌঁছানোর কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসিয়েছে। বিদেশমন্ত্রীর মতে, আমেরিকা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম বাজার, তাই সেই দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক বোঝাপড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেই সমঝোতা হতে হবে এমনভাবে, যেখানে ভারতের সীমা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা পায়। তাঁর কথায়, “যে কোনও আলোচনায় কিছু বিষয়ে সমঝোতা করা যায়, আবার কিছু বিষয়ে আপস একেবারেই সম্ভব নয়।”
বিদেশমন্ত্রীর আরও অভিযোগ, আমেরিকার চাপানো কিছু শুল্ক ভারত প্রথম থেকেই ‘অন্যায্য’ বলে মনে করে আসছে। বিশেষত রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনার কারণে ভারতের ওপর যে অতিরিক্ত শুল্ক বসানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ‘অযৌক্তিক’। জয়শঙ্কর বলেন, “অন্যান্য দেশও রাশিয়া থেকে জ্বালানি নিচ্ছে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্কের হার দ্বিগুণ করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে সেই হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার জন্য ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা ভারত সরকার সরাসরি ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক’ বলে উল্লেখ করেছে।
তবে এই বাণিজ্যিক টানাপড়েন দুই দেশের সামগ্রিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করছে না বলে জানান জয়শঙ্কর। তাঁর কথায়, “সমস্যা আছে, কিন্তু আমরা আলোচনা করে সমাধানের পথ খুঁজছি।” তিনি আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পর্ক আগের মতোই চলছে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে আগের চেয়েও ভালোভাবে এগোচ্ছে।
বর্তমানে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে নতুন করে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এস জয়শঙ্কর আশাবাদী, খুব শীঘ্রই এমন একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে, যেখানে দুই দেশের স্বার্থই সুরক্ষিত থাকবে এবং বোঝাপড়া হবে পারস্পরিক সম্মান ও বাস্তবতার ভিত্তিতে।
