রাজ্য – চিন্তা বাড়াচ্ছে উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস পরিস্থিতি। শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত মাত্র বারো ঘণ্টার টানা বর্ষণে কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র অঞ্চল। স্থানীয়দের মতে, সাম্প্রতিক অতীতে এত পরিমাণ বৃষ্টি আগে দেখা যায়নি। এখন পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এবং বহু মানুষ, বিশেষ করে পর্যটকরা পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় আটকে রয়েছেন।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে রাজ্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার সারাদিন কলকাতা থেকে পরিস্থিতির ওপর নজরদারি করেন এবং ঘোষণা করেন যে, সোমবার তিনি শিলিগুড়ি পৌঁছে সরেজমিনে ক্ষয়ক্ষতির পর্যালোচনা করবেন। দুপুর তিনটে নাগাদ তাঁর সেখানে পৌঁছানোর কথা।
অতিবৃষ্টির ফলে কোথাও সেতু ভেঙে পড়েছে, কোথাও ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। এর ফলে কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন। প্রশাসন এখনও পর্যটকদের সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেনি, তবে তা যে কয়েক হাজার ছাড়িয়েছে, এমনটাই অনুমান করা হচ্ছে। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী পাঁচ জেলার—দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার—জেলাশাসকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। নবান্নে চালু হয়েছে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম, এবং একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিক ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “মিরিক, দার্জিলিং, কালিম্পং—সব জায়গায় প্রায় সাতটি ল্যান্ডস্লাইড হয়েছে। মিরিকে লোহার সেতু ভেঙে গিয়েছে, দার্জিলিংয়েও একটি সেতু ধসে পড়েছে। কালিম্পংয়ের রাস্তা বন্ধ। যারা পর্যটক আটকে রয়েছেন, তারা যেন যেখানে আছেন সেখানেই থাকেন। অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া যেন না দিতে হয়, প্রশাসন সেটা দেখবে। প্রয়োজনে সরকার দায়িত্ব নেবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা সকলকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনব। কেউ যেন তাড়াহুড়ো করে যাত্রা না করেন। সকলেই আমাদের দায়িত্ব।”
রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে উদ্ধার অভিযান। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও নিরলসভাবে কাজ করছে SDRF, সেনা ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিরিক ও সুখিয়াপোখরি এলাকা, যেখানে একাধিক গ্রাম ধসে মাটির তলায় চাপা পড়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মাত্র ১২ ঘণ্টায় প্রায় ২৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে—যা উত্তরবঙ্গের সাম্প্রতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি তাঁদের মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যা ও ধসের স্মৃতি। রাজ্য প্রশাসন এখন সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করছে যাতে যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হয় এবং ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেওয়া যায়।
