রাজস্থান – মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে কেঁপে উঠল জয়পুর। রবিবার গভীর রাতে শহরের বিখ্যাত সাওয়াই মান সিং হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারের আইসিইউতে আগুন লেগে মৃত্যু হয়েছে অন্তত সাতজন রোগীর। ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। পরিবারের অভিযোগ, শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার পর ভবনের দ্বিতীয় তলায় কর্মীরা পালিয়ে যাওয়ায় সময়মতো রোগীদের সরানো সম্ভব হয়নি, তাই এত প্রাণহানি ঘটেছে।
সূত্রের খবর, রবিবার রাতে হঠাৎই আইসিইউতে শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যেই ধোঁয়ায় ভরে যায় গোটা তলা, চারদিক অন্ধকারে ঢেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের মধ্যে। আগুনের তীব্রতায় পুড়ে যায় হাসপাতালের নানা গুরুত্বপূর্ণ নথি, আইসিইউর যন্ত্রপাতি, রক্তের নমুনা টিউবসহ অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। অন্যদিকে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার তিনি চিকিৎসা শিক্ষা কমিশনার ইকবাল খানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। কমিটিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ, হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, রোগী নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দিল্লি সফরও বাতিল করেছেন।
তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার সময় হাসপাতালে মোট ২১০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে চারটি আইসিইউতে ছিলেন প্রায় ৪০ জন রোগী। কিন্তু রাতে প্রতিটি আইসিইউতে ছিলেন মাত্র একজন করে কর্মী। অভিযোগ, আগুন লাগার কিছুক্ষণ পরই সেই কর্মীরা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যান, ফলে অসহায় অবস্থায় থেকে যান রোগীরা।
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দমকল বাহিনী। টানা দুই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে তার আগেই প্রাণ হারান সাতজন। ট্রমা সেন্টারের ওয়ার্ড বয় বিকাশ জানান, “আমরা তখন অপারেশন থিয়েটারে ছিলাম। আগুনের খবর পেয়ে ছুটে যাই রোগীদের বাঁচাতে। তিন-চারজনকে উদ্ধার করতে পেরেছিলাম, কিন্তু আগুন তীব্র হয়ে ওঠায় পরে আর ভেতরে ঢোকা সম্ভব হয়নি। যতটা সম্ভব বাঁচানোর চেষ্টা করেছি।”
পুরো ঘটনাটি ঘিরে এখন রাজ্যজুড়ে শোকের ছায়া। হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক দায়িত্বহীনতা নিয়ে উঠছে একের পর এক প্রশ্ন। তদন্তের রিপোর্টের পরই জানা যাবে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ ও দায় কার।
