কলকাতা – রমরমিয়ে চলছিল প্রতারণার জাল। একাকীত্ব কাটানোর অজুহাতে সঙ্গ দেওয়ার প্রলোভন, আর সেই টোপেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ। অবশেষে মিন্টো পার্ক এলাকার কুখ্যাত ডেটিং অ্যাপ চক্রের পর্দাফাঁস করল কলকাতা পুলিশ। জানা গিয়েছে, অভিযুক্তরা জনপ্রিয় কয়েকটি ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে অনলাইন পরিচয় গড়ে তুলত। তারপর ধীরে ধীরে বিশ্বাস অর্জন করে অর্থ ও মূল্যবান জিনিস হাতানোর পরিকল্পনা করত তারা।
তদন্তে উঠে এসেছে, এই প্রতারণা চক্রটি মূলত যুবক ও মধ্যবয়সী পুরুষদের নিশানা করত। সুন্দরী মহিলার পরিচয়ে ভুয়ো প্রোফাইল তৈরি করে তারা গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করত। কিছুদিন কথাবার্তা চলার পর ঘনিষ্ঠতার আড়ালে শুরু হতো প্রতারণার খেলা। অনেক ক্ষেত্রেই টাকার পাশাপাশি উপহার বা গয়নার দাবি করা হতো। কেউ একবার এই জালে পা দিলেই, তার সঞ্চিত অর্থ কয়েক দিনের মধ্যেই উধাও হয়ে যেত। পুলিশ জানিয়েছে, একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে হাজার হাজার, এমনকি কয়েক লক্ষ টাকাও হাতিয়েছে এই চক্র।
কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনায় মোট ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৬ জনই মহিলা। তাঁরা ছিলেন যোগাযোগ ও প্ররোচনার দায়িত্বে। গ্রাহকদের সঙ্গে নিয়মিত কথাবার্তা চালিয়ে তাঁদের বিশ্বাস অর্জনের কাজ করত এই মহিলারা। অভিযানে ধৃতদের কাছ থেকে একাধিক মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্ক্রিপ্ট, ব্যাঙ্ক সম্পর্কিত নথি, পাসবুক ও রেজিস্টার জব্দ করেছে পুলিশ। পাশাপাশি চক্রের অন্য সদস্যদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে এই ধরনের প্রতারণা এখন দ্রুত বাড়ছে। সঙ্গ দেওয়ার নামে এমন অপরাধ রুখতে নাগরিকদের আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ধৃতদের বুধবার আদালতে তোলা হবে এবং তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের পুরো কাঠামো উন্মোচনের চেষ্টা চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইনে অচেনা মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য ভাগ করা বা অর্থ লেনদেনে জড়ানো থেকে বিরত থাকা উচিত। পুলিশও জানিয়েছে, নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে তারা নিয়মিত প্রচার চালাবে এবং এই ধরনের প্রতারণা রুখতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
মিন্টো পার্কের এই ঘটনা ফের একবার মনে করিয়ে দিল, ভার্চুয়াল বন্ধুত্বের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে ভয়ঙ্কর ফাঁদ। স্থানীয়রা বলছেন, এই ঘটনার পর এলাকা ও শহরের মানুষ আরও সতর্ক হবেন বলে আশা। পুলিশও আশ্বস্ত করেছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং পুরো চক্রকে নির্মূল করতে অভিযান চলবে।
