রাজ্য – গত বছরের ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ সমাবেশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন, বহু পুরসভায় রদবদল অনিবার্য। তিনি বলেছিলেন, ‘লোকসভা ভোটে কোনো পুরসভায় তৃণমূল পিছিয়ে থাকলে শুধু চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, বরং টাউন সভাপতির বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে গ্রাম প্রধান নয়, ব্লক সভাপতিরও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পুজোর আগেই ব্লক স্তরে সেই রদবদল সম্পন্ন হয়েছে। জেলা ও ব্লক পর্যায়ে যাঁদের পারফরম্যান্স ভালো, তাঁরা টিকে গেছেন বা পদোন্নতি পেয়েছেন। আবার যাঁদের পারফরম্যান্স খারাপ বা যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের সরানো হয়েছে। বড় মন্ত্রী বা জেলা নেতা হোক, কেউ এই রদবদলের বাইরে থাকেননি।
কালীঘাট সূত্রে জানা গেছে, এবার পুরসভাগুলির পালা। আইপ্যাক একটি সমীক্ষা করেছে, সংগঠনের স্তরেও মূল্যায়ন হয়েছে। যদি কৌশলে পরিবর্তন না আসে, তাহলে মাস খানেকের মধ্যে বেশ কিছু পুরসভায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান বদল করে নতুন মুখ আনা হতে পারে। তৃণমূল সূত্রের মতে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে অনড়। তিনি একুশের মঞ্চে বলেছিলেন, ‘শুধু নিজের কথা ভাবলে চলবে না। পুরসভা ভোটে আপনি কাউন্সিলরের টিকিট পাবেন, জিতবেন, কিন্তু লোকসভা ভোটে দল আশানুরূপ ফল না পেলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দল। বড় নেতার ছত্রছায়ায় থাকলেও তা প্রযোজ্য।’
গত লোকসভা ভোটে বাংলায় তৃণমূল কমবেশি ৭৪টি পুরসভায় পিছিয়ে ছিল। শিলিগুড়ি পুরসভায় ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩২টিতেই ফলাফল খারাপ ছিল। এবারের রদবদলের পর ঠিক কতগুলো পুরসভায় চেয়ারম্যান বদল হবে, তা স্পষ্ট নয়; তবে প্রাথমিক অনুমান ৩০ থেকে ৪০টি পুরসভা হতে পারে।
পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ কৌশলগত। বর্তমান তৃণমূল সরকার ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় রয়েছে, ফলে স্বাভাবিকভাবে স্থানীয় বিরোধিতা তৈরি হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও স্থানীয় নেতাদের কারণে অসন্তোষ বেশি। ছাব্বিশের ভোটের আগে এই রদবদল স্থানীয় স্তরে বিরোধিতা মোকাবিলায় কার্যকর হতে পারে।
সন্দেহ নেই, পুরসভা স্তরে এই রদবদল তৃণমূলের অন্দরমহলকে আন্দোলিত করবে। বিধায়কদের পারফরম্যান্স খারাপ বা দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তাঁরা এবার টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনাও নিয়ে চিন্তিত হবেন। রদবদলের এই কৌশল তৃণমূলকে স্থানীয় স্তরে শক্তিশালী করতে পারে, বিশেষ করে ভোটের আগে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা কমাতে।
