দক্ষিন 24 পরগনা – অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি—রাজ্যের একাধিক জেলাকে পিছনে ফেলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর দু’নম্বর ব্লকের রায়দিঘি বিধানসভার নগেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম কনকনদিঘি গঠিত হয়েছে জৈব গ্রাম হিসেবে। প্রায় তিন হাজার পরিবারের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ পরিবার রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসল খেয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।
বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এলাকার মানুষ এখন নিজেরাই তৈরি করছেন ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। পাশাপাশি, গাছের রোগ ও পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জৈব ওষুধ ব্যবহার করে সাফল্য পেয়েছেন চাষিরা। ফলে এলাকার কৃষিক্ষেত্রে এসেছে এক ইতিবাচক পরিবর্তন।
প্রায় প্রতিটি পরিবারেই এখন জমিতে হচ্ছে মিশ্র ফসলের চাষ। একটি বাগানে ফলগাছের পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি ও স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ফসলের সমন্বয়। একই জমিতে লাগানো হয়েছে জামরুলসহ নানা ফলের গাছ, আর সেই গাছের চারপাশে চাষ হচ্ছে শসা, কুমড়ো ও নানান শাকসবজি। শসার জন্য তৈরি করা হয়েছে জালের মাচা, কুমড়ো ফলছে নিচে, আর মাঝখানে বেড়ে উঠছে লিচু গাছ, যা চার বছরের মধ্যে ফলন দেবে।
সব ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হচ্ছে নিজেদের তৈরি কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট। বাগানে স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক সেচব্যবস্থা, যেখানে মাটির নিচে পাইপ বিছানো রয়েছে। এতে অল্প জল ব্যবহার করেই মেশিনের মাধ্যমে পুরো বাগানে গাছের গোড়ায় সমানভাবে জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
‘মুক্তি’ নামক সংস্থার উদ্যোগে এলাকার বহু চাষি মিশ্র চাষের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। তাঁদের সহায়তায় আজ প্রায় তিন হাজার পরিবারের মধ্যে অধিকাংশই জৈব ফসল উৎপাদনে আত্মনির্ভর হয়েছে। নিজেরা সেই ফসল খাওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ফলন বিক্রি করে রোজগারের পথও খুলে গেছে। রাসায়নিক সার ত্যাগ করায় রোগবালাই কিছুটা হলেও কমেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা।

















