বিহার – পাটনায় ঘটল এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। ঘুমের মধ্যে হঠাৎই ভেঙে পড়ল বাড়ির ছাদ, মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যু হল একই পরিবারের পাঁচজনের। ঘটনাটি ঘটেছে আখিলপুর থানার অন্তর্গত মানাস গ্রামে। মৃতদের নাম বাবলু খান, তাঁর স্ত্রী রোশন খাতুন, ছেলে মহম্মদ চাঁদ, মেয়ে রুখসার এবং কনিষ্ঠ কন্যা চাঁদনি। জানা গিয়েছে, বাড়িটি বহু বছর আগে ‘ইন্দিরা আবাস যোজনা’-র আওতায় তৈরি হয়েছিল, তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরেই ভগ্নদশায় ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, বিপজ্জনক ঘোষণা করার পরও পরিবারটি সেখানে বসবাস চালিয়ে যাচ্ছিল।
রবিবার রাতে খাবার খেয়ে ঘুমোচ্ছিলেন পরিবারের পাঁচ সদস্য। সেই সময় আচমকাই পুরনো ছাদটি ধসে পড়ে। মুহূর্তে তারা সবাই ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়েন। প্রতিবেশীরা আওয়াজ পেয়ে ছুটে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করলেও ততক্ষণে মৃত্যু হয় পাঁচজনেরই। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল। মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাড়িটির ছাদে গত কয়েক মাস ধরে একাধিক ফাটল দেখা দিয়েছিল। প্রশাসন ও পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বাড়িটি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হলেও পরিবারটি আর্থিক কারণে অন্যত্র যেতে পারেনি। এক গ্রামবাসীর কথায়, “ওই বাড়িতে থাকা মানে মৃত্যুকে ডাক দেওয়া—সবাই জানত, তবু তাদের যাওয়ার জায়গা ছিল না।” এই মর্মান্তিক ঘটনায় গোটা মানাস গ্রাম জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
এদিকে, স্থানীয়দের আশঙ্কা, গ্রামে ‘ইন্দিরা আবাস যোজনা’-র আওতায় নির্মিত আরও বেশ কিছু বাড়ির অবস্থাও একই রকম। অনেক জায়গায় ছাদে ফাটল, দেয়ালে স্যাঁতস্যাঁতে ভাব, এমনকি কিছু বাড়ির ছাদ আংশিকভাবে ভেঙেও পড়েছে। ফলে এই দুর্ঘটনার পর আতঙ্ক ছড়িয়েছে পুরো এলাকায়। প্রশাসনের একাংশ জানিয়েছে, ওই প্রকল্পের আওতায় তৈরি পুরনো বাড়িগুলির অবস্থা দ্রুত খতিয়ে দেখা হবে।
দুর্ঘটনাটি কেবল পাটনা নয়, দেশের আরও বিভিন্ন প্রান্তে পুরনো ও অবহেলিত বাড়ি ধসে পড়ে প্রাণহানির ঘটনার করুণ পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে। আর্থিক অনটন বা শরিকি ঝামেলার কারণে অনেকেই পুরনো ভগ্নদশা বাড়ি ছাড়তে পারেন না। পশ্চিমবঙ্গেও বিশেষত কলকাতার পুরনো এলাকাগুলিতে একই সমস্যা দীর্ঘদিনের। উত্তর কলকাতার মানিকতলা, বেলেঘাটা, শ্যামবাজার প্রভৃতি এলাকায় পুরনো ভবন ধসের পর একাধিকবার কলকাতা পুরসভা উদ্যোগ নিয়ে বিপজ্জনক বাড়ি থেকে মানুষ সরিয়েছে এবং সতর্কতা জারি করেছে।
এই ঘটনার পর প্রশাসন ও সরকার উভয়ের দিকেই প্রশ্ন উঠছে—দরিদ্রদের মাথার উপরে সুরক্ষার ছাদ দিতে যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, সেটিই আজ মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে কেন? পাটনার এই মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি সেই প্রশ্ন আবারও তীব্র করেছে।




















