সম্পাদকীয় নীতিভঙ্গের অভিযোগে বিবিসির দুই শীর্ষকর্তার পদত্যাগ, বিশ্ব সংবাদমহলে চাঞ্চল্য

সম্পাদকীয় নীতিভঙ্গের অভিযোগে বিবিসির দুই শীর্ষকর্তার পদত্যাগ, বিশ্ব সংবাদমহলে চাঞ্চল্য

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram



বিদেশ – বিশ্বজুড়ে খবরের জগতে নির্ভরযোগ্যতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি)-র দুই শীর্ষকর্তার পদত্যাগে তোলপাড় শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমহলে। সংস্থার মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং নিউজ বিভাগের প্রধান ডেবোরাহ টারনেস পৃথক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বিবিসি’র খবর পরিবেশনে সম্পাদকীয় নীতি ভঙ্গের ঘটনা ঘটেছে এবং তার নৈতিক দায় নিয়েই তাঁরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিবিসির মতো আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর খবর প্রচারের অভিযোগ এবং তার পরপরই দুই শীর্ষকর্তার পদত্যাগের ঘোষণায় বিশ্ব সংবাদ অঙ্গন তোলপাড় হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনার পর অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলিও সম্পাদকীয় মান বজায় রাখার ব্যাপারে নতুন করে চাপের মুখে পড়তে পারে।

ঘটনার সূত্রপাত একদিন আগে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বিবিসির একটি তথ্যচিত্রকে ‘১০০ শতাংশ ভুয়া’ বলে আখ্যা দেন। তাঁর অভিযোগ, সেই তথ্যচিত্রে ট্রাম্পের বক্তব্য এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে, যাতে মনে হয় ২০২১ সালের ক্যাপিটাল হিল হিংসাত্মক ঘটনায় তিনিই উসকানি দিয়েছিলেন। লেভিট দাবি করেন, ট্রাম্প কখনও হিংসা উস্কে দেননি, কিন্তু বিবিসি ওই তথ্যচিত্রে বক্তব্য বিকৃত করেছে—যা সম্পূর্ণ অপপ্রচার।

যদিও বিবিসির দুই শীর্ষকর্তার পদত্যাগের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের মন্তব্যের সরাসরি সম্পর্ক নেই, তবে সংস্থার অভ্যন্তরেই সাম্প্রতিক কালে সম্পাদকীয় মান ও নিরপেক্ষতা নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছিল। বিবিসির এডিটরিয়াল গাইডলাইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস কমিটির প্রাক্তন পরামর্শদাতা মাইকেল প্রেসকট সম্প্রতি ইমেল পাঠিয়ে সংস্থার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও নীতিভঙ্গের অভিযোগ তোলেন। একই সময়ে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, বিবিসি ট্রাম্পের দুটি পৃথক বক্তব্যকে জুড়ে তথ্যচিত্রে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে।

এছাড়াও গাজার সাম্প্রতিক সংঘাত এবং ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু নিয়ে বিবিসির কভারেজ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সংস্থার ভিতরে ও বাইরে। তবে অভিযোগের এই ঢেউ নতুন নয়। অতীতে বহু দেশ বিবিসির বিরুদ্ধে একতরফা সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগ তুলেছে। তিন বছর আগে গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে একটি তথ্যচিত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অন্যায়ভাবে দায়ী করার অভিযোগ ওঠে। ভারত সরকার সে সময় ওই তথ্যচিত্রের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় এবং পরবর্তীতে বিবিসি কর সংক্রান্ত তদন্তেও জড়িয়ে পড়ে।

একইভাবে কারগিল যুদ্ধের সময় পাকিস্তান অভিযোগ তোলে যে, বিবিসি ভারতের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট প্রচার চালাচ্ছে, এমনকি ব্যঙ্গ করে তাকে “ভারত ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন” বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। বাংলাদেশেও বিবিসির প্রতিবেদন নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে—শেখ হাসিনার প্রশাসন থেকে শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার পর্যন্ত বিবিসির নিরপেক্ষতা নিয়ে সরব হয়েছে।

তবে এবারের অভিযোগ বিশেষভাবে গুরুতর, কারণ এটি সরাসরি একটি বিশ্বনেতার বক্তব্য বিকৃত করার অভিযোগ। সংবাদ বিশ্লেষকদের মতে, বিবিসির মতো আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার জন্য এটি অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত এবং ভাবমূর্তিতে বড় আঘাত। যদিও সংস্থা এখনও সরকারিভাবে পদত্যাগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি এবং নিজেদের প্ল্যাটফর্মেও খবরটি প্রকাশ করেনি। কিন্তু টিম ডেভি ও ডেবোরাহ টারনেসের পদত্যাগ বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে এক নতুন নৈতিক বিতর্কের সূচনা করেছে।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top