দিল্লি – দিল্লিতে ফের রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে বায়ুদূষণ। ঘন ধোঁয়াশায় ঢেকে গেছে গোটা শহর, তাপমাত্রাও নেমে গেছে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটা নিচে। দূষণ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় রবিবার সন্ধ্যায় ইন্ডিয়া গেটে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল হন দিল্লিবাসী। এই বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন বহু অভিভাবক ও তাঁদের সন্তানরাও। সকলেরই এক দাবি—সরকার অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক, নইলে শ্বাস নেওয়াই দুরূহ হয়ে উঠবে রাজধানীতে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের (CPCB) তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল ৭টায় দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) রেকর্ড হয়েছে ৩৫৪, যা ‘খুবই খারাপ’ (Very Poor) শ্রেণির মধ্যে পড়ে। রবিবারের AQI ছিল আরও ভয়াবহ—৩৯০। অর্থাৎ টানা দুই দিন রাজধানী কার্যত ‘রেড জোন’-এ প্রবেশ করেছে। শহরের বেশ কিছু জায়গায় পরিস্থিতি আরও সংকটজনক। আনন্দ বিহারে AQI ছিল ৩৭৯, আইটিও-তে ৩৭৬, চাঁদনি চক ৩৬০, ওখলা ফেজ-২ এ ৩৪৮, জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ৩১৬, এবং দিল্লি বিমানবন্দরের টার্মিনাল ৩-এ ৩০৫।
দিল্লির পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতেও দূষণের প্রকোপ ভয়ানক রূপ নিচ্ছে। নয়ডার সেক্টর ৬২-তে AQI ৩৪২, সেক্টর ১-এ ৩২৫ এবং সেক্টর ১১৬-এ ৩৩৯। গ্রেটার নয়ডার নলেজ পার্ক-III ও V-তে যথাক্রমে ৩১৬ ও ৩১৪। গুরুগ্রামের সেক্টর ৫১-এ AQI ৩২৭। তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো অবস্থায় রয়েছে ফারিদাবাদের নিউ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউন ও সেক্টর ১১, যেখানে সূচক যথাক্রমে ২৩০ ও ২৩৮।
বায়ুদূষণের পাশাপাশি তাপমাত্রাও ক্রমশ নামছে। রবিবার দিল্লির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ১.৪ ডিগ্রি কম। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.৭ ডিগ্রি। চলতি মরশুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি রেকর্ড হয়েছিল শনিবার।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েক দিন দিল্লির বায়ু মান ‘খুবই খারাপ’ অবস্থাতেই থাকবে। দীপাবলির পর থেকেই রাজধানীর AQI ক্রমাগত ‘খারাপ’ থেকে ‘খুবই খারাপ’-এর মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, কখনও কখনও পৌঁছে যাচ্ছে ‘গুরুতর’ (Severe) স্তরেও।
রবিবার ইন্ডিয়া গেটে আয়োজিত দূষণবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন শতাধিক নাগরিক, যাঁদের মধ্যে ছিলেন পরিবেশকর্মী, অভিভাবক এবং ছোট ছোট শিশুরাও। তাঁদের স্লোগান—“We Want Clean Air”, “Save Delhi, Save Our Children”। তাঁদের দাবি, রাজধানীর বাসযোগ্যতা রক্ষা করতে অবিলম্বে দূষণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ করুক কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসন।
তবে দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার দেবেশ কুমার মাহলা জানিয়েছেন, “ইন্ডিয়া গেটে বিক্ষোভের অনুমতি ছিল না। শুধুমাত্র জনতার মঞ্চই নির্ধারিত বিক্ষোভস্থল। তাই কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।”
রাজধানীর দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে এখন উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ মহল। চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন—দূষিত বাতাসে শিশু ও বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও চোখের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। দিল্লির নাগরিকরা তাই প্রশ্ন তুলছেন—কখন ফিরবে স্বচ্ছ আকাশ ও নিঃশ্বাস নেওয়ার মুক্তি?




















