পূর্ব বর্ধমান – রাজ্যে ভোটার তালিকা পরিমার্জনের কাজ পুরোদমে চলছে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে এনুমারেশন ফর্ম পৌঁছে দিচ্ছেন বিএলও-রা। কিন্তু এই দায়িত্ব এসে পড়েছে বহু প্রাথমিক শিক্ষকের কাঁধে, যা নিয়ে শিক্ষা মহলে বাড়ছে উদ্বেগ। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের হালাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র আরও চিন্তার। চারজন শিক্ষক-শিক্ষিকা—লক্ষ্মীকান্ত মালিক, সুজিত বাগ, অভিজিৎ মিত্র ও সুজাতা মিশ্র মুখোপাধ্যায়—চারজনই বিএলও। মাত্র ১১২ জন পড়ুয়া নিয়ে এই স্কুলে সামনেই বার্ষিক পরীক্ষা, অথচ পঠনপাঠনের অবস্থা কার্যত বিপর্যস্ত।
প্রধান শিক্ষক সুজিত বাগের কথায়, ৪ নভেম্বর থেকে নির্বাচনমুখী দায়িত্বের কারণে স্কুলে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পড়ুয়াদের পড়ানো, ক্লাস নেওয়া থেকে মিড-ডে মিল—সবকিছুই বিঘ্নিত। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিক্ষকরা পালা করে দিনে একবার স্কুলে আসার চেষ্টা করছেন, যাতে স্কুল বন্ধ না হয়ে যায় এবং মিড-ডে মিল বন্ধ না হয়। সংকট চরমে পৌঁছনোর পর ব্লক স্কুল পরিদর্শকের নির্দেশে ইটলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহম্মদ আসিফ ফিদৌসিকে অস্থায়ীভাবে হালাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি কোনওরকমে স্কুলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, যদিও চাপ যে প্রবল তা স্বীকার করেছেন তিনিও।
সহ-শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র জানিয়েছেন, চারজন শিক্ষককে একসঙ্গে বিএলও করা হওয়ায় পড়ুয়াদের প্রতি ন্যায্য দায়িত্ব পালন করা যাচ্ছে না, যা তাঁদের কাছেও মানসিক চাপের। অভিভাবকেরাও দুশ্চিন্তায়—স্কুলের এক পড়ুয়ার মা দেবিকা পোড়েল বলছেন, ডিসেম্বরেই পরীক্ষা, আর এই অবস্থায় কীভাবে সিলেবাস শেষ হবে তা বুঝতে পারছেন না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য পুরো বিষয়টির জন্য নির্বাচন কমিশনকেই আংশিক দায়ী করছেন। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সরকার ও শিক্ষা দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে এই পরিস্থিতি তৈরি হত না। ফলে বার্ষিক পরীক্ষার মুখে স্কুলের পড়ুয়া থেকে শিক্ষক—সকলেই কার্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।




















