বিহার – বিহারের রাজনীতিতে ফের উত্তেজনা শুরু হয়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বিধান পরিষদে বিরোধী দলনেত্রী রাবড়ি দেবীকে পাটনার ১০ সার্কুলার রোডের আইকনিক সরকারি বাংলো ছাড়তে বলা হয়েছে প্রায় দুই দশক পর। নিতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের ভবন নির্মাণ বিভাগ এই নির্দেশ জারি করেছে এবং তাঁকে নতুন ঠিকানা হিসেবে হার্ডিং রোডের সেন্ট্রাল পুল হাউস নম্বর ৩৯ বরাদ্দ করেছে। সরকার এই পদক্ষেপকে নিয়মমাফিক রদবদল বলে দাবি করলেও আরজেডি এটিকে সরাসরি “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা” বলে আক্রমণ শানিয়েছে।
১০ সার্কুলার রোড বিহারের রাজনীতির অন্যতম প্রতীকী জায়গা। ২০০৫ সাল থেকে লালু যাদব পরিবারের রাজনৈতিক ও পারিবারিক কেন্দ্র ছিল এই বাংলো। লালু যাদব, রাবড়ি দেবী, তেজস্বী যাদব, তেজপ্রতাপ—সকলেই এখান থেকেই রাজনীতির নানা গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছেন। যদিও ২০১৯ সালে হাইকোর্ট সাবেক মুখ্যমন্ত্রীদের জন্য আজীবন বাংলো বরাদ্দকে অবৈধ ঘোষণা করে। রাবড়ি দেবী তখন বিরোধী দলনেত্রী হওয়ায় সেই বাংলো ধরে রাখতে পেরেছিলেন, কিন্তু ২০২৫-এর নির্বাচনে এনডিএ-র জয়ের পর পরিস্থিতি বদলেছে।
নতুন সরকার গঠনের পর থেকেই ভবন বিভাগের তরফে দ্রুত বাংলো ছাড়ার নোটিস জারি হয়েছে, যা আরজেডির মতে স্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দলের মুখপাত্র মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারি অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিজেপির নির্দেশে লালু পরিবারকে হয়রানি করছে এবং রাবড়ি দেবীর অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। তেজস্বী যাদবও সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, তাঁরা নতুন বাড়িতে যাবেন ঠিকই, তবে এই “অন্যায়”র বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন।
সরকার অবশ্য আরজেডির অভিযোগকে পুরোপুরি অস্বীকার করছে। তাদের দাবি, এটি কেবল নিয়ম এবং আইন মেনে করা প্রশাসনিক প্রক্রিয়া; সাবেক মুখ্যমন্ত্রীদের আজীবন বাংলো রাখার নিয়মই নেই। জেডিইউ নেতা বিজয় কুমার সিনহা বলেছেন, সবার ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রযোজ্য, তাই এই পরিবর্তনকে রাজনৈতিক বলা ভুল।
তবে এই পুরো বিতর্কের মধ্যেই সামনে এসেছে আরজেডির ‘দ্বৈত মানসিকতা’-র অভিযোগ। কয়েক মাস আগে দার্ভাঙ্গায় রাহুল গান্ধীর মঞ্চ থেকে আরজেডি–কংগ্রেস জোটের এক কর্মী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মৃত মায়ের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করেন। সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী নিজেও আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, তাঁর মা রাজনৈতিক ব্যক্তি না হয়েও অপমানিত হয়েছেন, যা “বিহারের সব মায়ের অপমান”। বিজেপির অভিযোগ, যারা তখন ক্ষমা চায়নি, তারাই আজ বাংলো ছাড়ার নোটিসকে প্রতিহিংসা বলছে, যা স্পষ্ট দ্বিমুখী অবস্থান। নিতীশ কুমারও তখন ঘটনাটির কঠোর নিন্দা করেছিলেন।
সামগ্রিকভাবে এই বাংলো বিতর্ক শুধুই আবাস পরিবর্তনের বিষয় নয়—বরং বিহারের রাজনৈতিক উত্তাপ ও ক্ষমতার পালাবদলের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ২০২৫ নির্বাচনের পর নিটোল রাজনৈতিক সংঘাত যেন আরও গভীর হয়ে উঠছে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে।




















