গত বছর ৬ জুন নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের(আরএসএস) সদর দপ্তরে গিয়েছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে বেশ চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল৷ আজীবন কংগ্রেসি প্রণববাবু হিন্দুত্ববাদীদের দপ্তরে যাচ্ছেন কেন? সম্প্রতি সোনিয়া সিং নামে এক সাংবাদিককে তার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। সোনিয়ার সদ্য প্রকাশিত বইতে প্রণববাবু বলেছেন, ‘আমি সিংহের গুহায় ঢুকেছিলাম। সেখানে ঢুকেই ওদের বোঝাতে চেয়েছিলাম, ওরা কোথায় ভুল করছে।’
সোনিয়া সিংয়ের বইটির নাম ‘ডিফাইনিং ইন্ডিয়া : থ্রু দেয়ার আইজ’। বইতে প্রণববাবুর সাক্ষাৎকার রয়েছে। সেখানে তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার প্রসঙ্গ থেকে শুরু করে নরেন্দ্র মোদি ও ইন্দিরা গান্ধীর তুলনা, নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন প্রণববাবু।সোনিয়া লিখেছেন, প্রণব মুখোপাধ্যায় এখন আর সক্রিয় রাজনীতিতে নেই বটে, কিন্তু রাজনীতিতে এখনও ভীষণ প্রাসঙ্গিক। তাই তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি জানা খুব প্রয়োজনীয়। সে প্রসঙ্গেই সংঘ দপ্তরে তাঁর যাওয়ার বিষয় উঠে আসে। কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রকাশ্যেই তাঁকে নিষেধ করেছিল। বিষয়টি নিয়ে এতটাই হইচই হয় যে, প্রায় সমস্ত বৈদ্যুতিন মাধ্যম তাঁর ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করে। মঞ্চে বসে প্রণববাবুর ভাষণ মন দিয়ে শোনেন সংঘপ্রধানমোহন ভাগবত ও। এবং ‘সিংহের গুহা’য় দাঁড়িয়ে ভারতের বহুত্ববাদী চরিত্র সম্পর্কে সংঘকর্মীদের উপদেশ দেন প্রণববাবু। উদ্ধৃত করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ‘ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া’ থেকে। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ধর্ম-জাতি-ঘৃণা-অসহিষ্ণুতার ভিত্তিতে জাতীয় চরিত্র ব্যাখ্যা করতে গেলে আখেরে ভারতের আসল পরিচয়টাই হারিয়ে যাবে। তিনি বলেছিলেন, “ভারতের আত্মার মধ্যে রয়েছে বহুত্ববাদ ও সহিষ্ণুতা। শত শত বছর ধরে নানা মতাদর্শকে আমরা আত্মস্থ করেছি। এইভাবে আমাদের বহুত্ববাদের আদর্শের জন্ম হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি ধর্মনিরপেক্ষতায়। পরকে আপন করে নেওয়াই আমাদের ধর্ম। এই সংস্কৃতিই আমাদের জাতি হিসাবে গড়ে তুলেছে।” মুচকি হেসে বইটির লেখিকাকে প্রণববাবু জানিয়েছিলেন, সিংহের গুহায় ঢুকে ওদের ভুলটা ধরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।