‘বনমালি তুমি পর জনমে হোয়ো রাধা…’, মৃত্যুর ছ’বছর পরেও সমুজ্জ্বল ঋতুপর্ণ

‘বনমালি তুমি পর জনমে হোয়ো রাধা…’, মৃত্যুর ছ’বছর পরেও সমুজ্জ্বল ঋতুপর্ণ

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

বাক্স ভর্তি গয়না। একটার পর একটা গয়না অতি সযত্নে হাতে করে তুলে সাজিয়ে তুলছেন নিজেকে। টিপটা ঠিক জায়গায় বসেছে তো.. ভ্রু যুগল ঠিক আছে তো… আয়নার সামনে ঘন ঘন নিজেকে দেখে নিচ্ছেন। কী সুন্দর দেখাচ্ছে… খোপায় ফুল, বাজুবন্ধ-বালা, ঝুমকো জোড়া কিচ্ছুটি বাদ পড়েনি। অতঃপর ‘চপলা রানী’ তৈরি। শট রেডি তো? ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’-র মেক-আপ রুমের দৃশ্য। সেদিন নাকি শট ‘ওকে’ হওয়ার পরও অনেকক্ষণ নিজেকে মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলেন তিনি।ঋতুপর্ণ ঘোষ। চোখের মেক-আপের সময় লাইনার ব্যবহার করতে গিয়েও আবার ইনফেকশন বাঁধিয়ে ফেলেছিলেন। তাতে কী? ‘চপলা রানী’-র সাজটাই তো আসল তখন। আজ তাঁর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। না, মৃত্যুদিবস বলেই কলমের আঁচড় পড়েনি তাঁকে নিয়ে। আসলে প্রিয় শিল্পী হোক কিংবা প্রিয় মানুষ, তাঁদের নিয়ে আদিখ্যেতা করার কিংবা ভালবাসা জাহির করার একটা দিনের দরকার হয়। আর অলিখিতভাবে সেই দিনটি উদযাপন করার যাবতীয় দায় বর্তায় জন্মদিন আর মৃত্যুদিনের উপর।

সম্পর্কের চোরাবালি, জড়িয়ে যাওয়া সম্পর্কের সুতো বারবার তাঁর ছবির চিত্রনাট্যের উপকরণ হয়ে উঠেছে। কী অদ্ভুত সুন্দরভাবে নারীদের মনন-গাথা তুলে ধরেছিলেন তাঁর ফ্রেমে। রবিগুরুর একনিষ্ঠ শিষ্য তিনি। তবে অজানাকে জানার, অবুঝকে বোঝার জন্য বারবার নিজেকে ভেঙেছেন তিনি। গুরুর ভাবনাকে পাথেয় করে এগিয়েছেন। তবে, প্রয়োজনে সেই ভাবনাকে ডিঙিয়ে দিগন্তের পরপারে উঁকি মারতেও দ্বিধাবোধ করেননি কখনও। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঋতুপর্ণর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল। ঋতুপর্ণ ঘোষের কথায়- “প্রতিটি আঁধারের পিছনেই আলো আছে, এই বোধ আমি রবীন্দ্রনাথের লেখায় পেয়েছি। সত্যি তিনি আমার অন্তরঙ্গ সঙ্গী, যাঁর সঙ্গে নিত্য আলাপ, আবদার আর অভিমানের সম্পর্ক।” ‘চোখের বালি’, ‘নৌকাডুবি’, ‘চিত্রাঙ্গদা’-র মতো ছবির পরতে পরতে উঠে এসেছে তাঁর সেই আবেগ জড়ানো অনুভূতি।

‘চিত্রাঙ্গদা’ ছবির নাটকের মঞ্চের একটি নৃত্যের দৃশ্যের মহড়া নেওয়ার জন্য ঋতুপর্ণর অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল জার্মান নৃত্যশিল্পী পিনা বস্ক। আবহ সংগীত থেকে ছবির সেট, মেক-আপ প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি বিষয়ে নজর ছিল তাঁর। শুধু বাংলাই নয়। আয়ত্ত করেছিলেন ব্রজবুলি ভাষাও। এই ভাষাতেই ‘রেনকোট’ ছবির জন্য গানও লিখেছিলেন। ঋতুপর্ণ ঘোষের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের জন্য এসভিএফ প্রযোজনা সংস্থার তরফে এই প্রথম ‘রেনকোট’ ছবির গানের অফিশিয়াল অ্যালবাম লঞ্চ করা হল। পরিচালক হিসেবে ঋতুপর্ণর অধিকাংশ ছবিই তাঁকে জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে সেরার শিরোপা দিয়েছে। ২০১৩ সালের ৩ ০মে তাঁর সেই আকস্মিক অভিসারে চলে যাওয়ায় আজও উত্তর খুঁজে ফেরে গোটা টলিউড। না জানি, আরও কত মণি-মাণিক্য বাকি ছিল তাঁর সিনেদর্শকদের উপহার দেওয়ার জন্য।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top