বাক্স ভর্তি গয়না। একটার পর একটা গয়না অতি সযত্নে হাতে করে তুলে সাজিয়ে তুলছেন নিজেকে। টিপটা ঠিক জায়গায় বসেছে তো.. ভ্রু যুগল ঠিক আছে তো… আয়নার সামনে ঘন ঘন নিজেকে দেখে নিচ্ছেন। কী সুন্দর দেখাচ্ছে… খোপায় ফুল, বাজুবন্ধ-বালা, ঝুমকো জোড়া কিচ্ছুটি বাদ পড়েনি। অতঃপর ‘চপলা রানী’ তৈরি। শট রেডি তো? ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’-র মেক-আপ রুমের দৃশ্য। সেদিন নাকি শট ‘ওকে’ হওয়ার পরও অনেকক্ষণ নিজেকে মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলেন তিনি।ঋতুপর্ণ ঘোষ। চোখের মেক-আপের সময় লাইনার ব্যবহার করতে গিয়েও আবার ইনফেকশন বাঁধিয়ে ফেলেছিলেন। তাতে কী? ‘চপলা রানী’-র সাজটাই তো আসল তখন। আজ তাঁর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। না, মৃত্যুদিবস বলেই কলমের আঁচড় পড়েনি তাঁকে নিয়ে। আসলে প্রিয় শিল্পী হোক কিংবা প্রিয় মানুষ, তাঁদের নিয়ে আদিখ্যেতা করার কিংবা ভালবাসা জাহির করার একটা দিনের দরকার হয়। আর অলিখিতভাবে সেই দিনটি উদযাপন করার যাবতীয় দায় বর্তায় জন্মদিন আর মৃত্যুদিনের উপর।
‘চিত্রাঙ্গদা’ ছবির নাটকের মঞ্চের একটি নৃত্যের দৃশ্যের মহড়া নেওয়ার জন্য ঋতুপর্ণর অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল জার্মান নৃত্যশিল্পী পিনা বস্ক। আবহ সংগীত থেকে ছবির সেট, মেক-আপ প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি বিষয়ে নজর ছিল তাঁর। শুধু বাংলাই নয়। আয়ত্ত করেছিলেন ব্রজবুলি ভাষাও। এই ভাষাতেই ‘রেনকোট’ ছবির জন্য গানও লিখেছিলেন। ঋতুপর্ণ ঘোষের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের জন্য এসভিএফ প্রযোজনা সংস্থার তরফে এই প্রথম ‘রেনকোট’ ছবির গানের অফিশিয়াল অ্যালবাম লঞ্চ করা হল। পরিচালক হিসেবে ঋতুপর্ণর অধিকাংশ ছবিই তাঁকে জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে সেরার শিরোপা দিয়েছে। ২০১৩ সালের ৩ ০মে তাঁর সেই আকস্মিক অভিসারে চলে যাওয়ায় আজও উত্তর খুঁজে ফেরে গোটা টলিউড। না জানি, আরও কত মণি-মাণিক্য বাকি ছিল তাঁর সিনেদর্শকদের উপহার দেওয়ার জন্য।