রাজা চন্দ পরিচালিত ‘কিডন্যাপ’ সামাজিক প্রেক্ষাপটে তৈরি। যেখানে তুলে ধরা হয়েছে নারী পাচারের মতো বিষয়। চন্দন দাসের মেয়ে তৃষাকে (শ্রীরূপা সাহা রায়) কয়েকজন লোক তুলে নিয়ে যায়। হাজার খোঁজ করে, পুলিসের কাছে গিয়েও লাভ হয় না। শেষে মুখ্যমন্ত্রীকেই চিঠি লেখেন তৃষার বাবা। শুরু হয় তদন্ত। এরপরের দৃশ্য দুবাই। একটি পাবে গান গাইছে দেব (দেব)। সেখানেই মেঘনার (রুক্মিণী) সঙ্গে তার আলাপ। ছোট-বড় নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তারা। এরপর দুবাই থেকে কলকাতায় নিজের বাড়িতে আসে মেঘনা। কিন্তু বিমানবন্দরে নামার পরই হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় সে। দুবাই থেকে কলকাতায় এসে হাজির হয় দেবও। পাগলের মতো খুঁজতে থাকে প্রেমিকাকে। খুলতে থাকে রহস্যের জাল। বাকিটা জানতে হলে কিন্তু প্রেক্ষাগৃহে যেতে হবে।
পরিচালক ছবিতে এমন একটি সামাজিক সমস্যাকে তুলে ধরেছেন, যা সত্যিই তারিফযোগ্য। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা ভারত থেকে বহু মেয়েকে অপহরণ করে দুবাই, সিরিয়ার মতো দেশে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত অর্থলোলুপ মানুষদের রূপ ছবির পরতে পরতে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। স্টাইল, অ্যাকশন, গরম গরম সংলাপে বাজার মাতিয়েছেন দেব। কিডন্যাপ কমার্শিয়াল মালমশলার মোড়কে তৈরি হলেও চরিত্রের ক্ষেত্রে কিন্তু চেনা ছকের বাইরেই হেঁটেছেন দেব। সিরিয়াস রোলেও মানিয়েছে তাঁকে। যোগ্যসঙ্গত দিয়েছেন রুক্মিণীও। সাজগোজ, হাবভাবে বেশ বলিউডি ধাঁচ লক্ষ্য করা যায়। দুবাই, ব্যাংককের মতো শ্যুটিং লোকেশনগুলিও দুর্দান্ত। ছবিতে পুলিসি অসহযোগিতার যে রূপ তুলে ধরা হয়েছে সেটিও প্রশংসার দাবি রাখে। তবে ছবির শেষাংশে চেনা ফর্মুলায় হাতাহাতির দৃশ্য না রাখলেই বোধহয় ভালো হতো। অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে হাজারো ‘দুষ্টু’ লোকেদের চালানো গুলি নায়কের গায়ে লাগছে না। অথচ নায়কের চালানো মামুলি পিস্তল, ছুরিতে সকলে ঘায়েল। ধরাবাঁধা এই ছকের বদল দরকার ছিল। ক্লাইম্যাক্সে ভিলেনের বাঁচার আকুতি কিছুটা হলেও মাত্রাতিরিক্ত। ব্যাংককে নৌকায় মারামারিকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন পরিচালক। একই শ্যুটিং স্পটে ‘বাঘবন্দি খেলা’-র রিপিট টেলিকাস্ট দেখা গিয়েছে। চন্দন সেনের মতো গুণী অভিনেতাকে হয়তো আর একটু ব্যবহার করা যেত। ছবির ‘ওই ডাকছে আকাশ’, ‘মনটা কথা শোনে না’ গানগুলি ভালো। অ্যাকশন আর গানে শেষপর্যন্ত দেব ঈদের বাজার কতটা দখল করতে পারলেন তার উপরেই ছবির ভাগ্য নির্ভর করবে।