বয়স কেবল একটা সংখ্যামাত্র, আবারো তা প্রমাণ করে দিলেন অরুণা দেবী, ১০৩ বছর তাঁর বয়স। এবং এই বয়সে রীতিমত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁর নিজ হাতে তৈরী জেএলএম মেমোরিয়াল স্কুলে, ঊষা এমব্রয়ডারী স্কুলে, শিল্পী মিউজিক এবং আর্ট স্কুলে। শুধু স্কুল সামলাচ্ছেন না। তাঁর সাথে আবার ‘আনন্দধারা আপনগেহ’ বৃদ্ধাশ্রমও গড়েছেন।
সবকিছু নিজেই তদারকির করছেন। ৭২ বছর ধরে ভাত-তরিতরকারি-মাছ-মাংসের পরিবর্তে শুধু চা বিস্কুট খেয়ে বেমালুম কাজ করে যাচ্ছেন আপনবেগে আপনমনে। তাঁর একটাই কারণ, দেশভাগের পর ছিন্নমূলীদের জোটেনি দু মুঠো ভাত। সেই কষ্ট সহ্য করতে পারেননি। তাই নিজের অন্ন তুলে দিয়েছিলেন তাদের মুখে। সেই থেকে শুধু চা-বিস্কুট খেয়েই কাটিয়ে দেন আজও।
তিনি নিজের চোখে দেখেছিলেন দেশভাগ হতে, শ্মরণার্থীদের কষ্টের ভাগীদার, আর্তের মুখে তুলে দিয়েছেন নিজের অন্ন এই রক্তমাংসের দেবী অন্নপূর্না। ক্রমে ক্রমে হয়ে উঠেছিলেন ছিন্নমূলীদের ‘মা’। অধুনা বংলাদেশের কন্যা হলেও গুয়াহাটির কটন কলেজের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক স্বামী যদুলাল মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে চলে আসেন গুয়াহাটিতে। সেই সময় থেকেই চলছে লড়াই।
বর্তমানে কানে কম শোনা, কিংবা দৃষ্টিশক্তির প্রখরতা হ্রাসের মত কিছু বার্ধক্য জনিত রোগে ভুগছেন অরুনা দেবী। তবে তাঁর লড়াই কোনও অংশেই কমেনি। বরং নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন নানান কর্ম দায়িত্বের ভার। তাঁর এই অসীম জীবন যুদ্ধ হয়ে উঠেছে আজকের এই বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের এক বলিষ্ঠ উদাহরণ।