জোজিলা টানেল নির্মাণে পাহাড় খনন করে কাজের সূচনা

জোজিলা টানেল নির্মাণে পাহাড় খনন করে কাজের সূচনা

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

নয়াদিল্লি, ১৪ অক্টোবর, ২০২০:কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রী  নীতিন গড়করি আগামীকাল জম্মু ও কাশ্মীরে জোজিলা টানেল  নির্মাণের জন্য বিস্ফোরণের মাধ্যমে পাহাড় খনন কাজের সূচনা করবেন।

এই সুড়ঙ্গটি নির্মিত হলে ১ নম্বর জাতীয় সড়কে লেহ-এর সঙ্গে কাশ্মীর উপত্যকার মধ্যে সব মরশুমের উপযোগী যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। সেইসঙ্গে, নবগঠিত জম্মু ও কাশ্মীর তথা লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সার্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক -সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন আরও সুদৃঢ় করতে সাহায্য করবে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার মিটার উচ্চতায় ১৪.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেল নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে যে সুড়ঙ্গটি রয়েছে সেখানে বছরে কেবল ছ’মাস গাড়ি যাতায়াত করে থাকে। এই টানেলটি দ্রাস ও কার্গিলসেক্টরের সঙ্গে শ্রীনগর ও লেহ-র মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে। এই গিরিপথটি বর্তমানে মোটরগাড়ির যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ পথ। নতুন এই  নির্মিত হলে তা কৌশলগত দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ  হয়ে উঠবে। ২০০৫ সালে প্রথমবার জোজিলা টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ২০১৩ সালে সীমান্ত সড়ক সংস্থা (বিআরও) এই গিরিপথ সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। এরপর চারবার এই প্রকল্প নির্মাণের বরাত দেওয়া হলেও তা সফল হয়নি। ২০১৬-র জুলাই মাসে এনএইচআইডিসিএল সংস্থাকে এই টানেল নির্মাণের জন্য বরাত দেওয়া হয়েছিল। তবে সংস্থাটি  টানেল নির্মাণের দায়িত্ব অন্য একটি সংস্থাকে দেয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী২০১৮-র ১৯ এপ্রিল লেহ-তে এক অনুষ্ঠানে এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। সূচনার পর ২০১৯-এর জুলাই পর্যন্ত কাজকর্মের অগ্রগতি হয় এবং তারপর যে সংস্থাকে এই টানেল নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের আর্থিক সমস্যার দরুণ কাজে বিঘ্ন ঘটে। এর ফলশ্রুতিস্বরূপ, নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তিটি ২০১৯-এর ১৫ জানুয়ারি বাতিল করে দেওয়া হয়। এরপর ২০২০-র ফেব্রুয়ারিতে এই গিরিপথ প্রকল্পের সমস্ত দিক বিশদে পর্যালোচনা করে দেখেন। প্রকল্প খাতে খরচ কমাতে এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে বিষয়টি একটি বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীর কাছে বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়। এরপর ওই বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী সর্বাধিক কম সময়ে এবং কম খরচে কিভাবে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করা যায়, সে সম্পর্কে মতামত পেশ করে। গিরিপথ নির্মাণে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পর ওই বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী গত ১৭ মে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। জমা পড়া প্রতিবেদনটি সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রী গত ২৩ মে অনুমোদন করেন। বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীর ওই পরামর্শে যে সমস্ত বিষয় উল্লেখ করা হয় তার মধ্যে রয়েছে – দুই লেনবিশিষ্ট দ্বিমুখী যাতায়াতের উপযোগী টানেল নির্মাণ; খাদের সংখ্যা কমিয়ে তিন থেকে দুই করার প্রস্তাব করা হয়; টানেলে ঘন্টায় সর্বাধিক গতি ৮০ কিলোমিটার রাখার প্রস্তাব করা হয়; সংশোধিত খরচ স্থির করা হয় ৪,৪২৯ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা; সব মরশুমের উপযোগী যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য হিমবাহ থেকে টানেলের সুরক্ষায় সংযোগকারী সড়ক জোজিলার দিক থেকে নির্মাণের প্রস্তাব করা হয় এবং বর্তমানে ঐ পথে যাত্রার সময় প্রায় চার ঘন্টা থেকে কমিয়ে অপর প্রান্তে পৌঁছতে ১৫ মিনিট করার প্রস্তাব করা হয়। মন্ত্রকের কাছ থেকে এই নির্মাণে অনুমোদন পাওয়ার পর এনএইচআইডিসিএল সংস্থা গত ১০ জুন দরপত্র আহ্বান করে। মোট তিনটি সংস্থাকে এই টানেল নির্মাণে কারিগরি দক্ষতার দিক থেকে চিহ্নিত করা হয়। দরপত্রগুলি খতিয়ে দেখার পর মেসার্স মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে টানেল নির্মাণের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই সংস্থার পক্ষ থেকে টানেল নির্মাণে ৪,৫০৯ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা খরচের হিসাব দেওয়া হয়। এই প্রেক্ষিতে সংস্থাটির সঙ্গে গত ২৫ আগস্ট প্রয়োজনীয় নথিপত্র বিনিময় হয়। প্রস্তাবিত জোজিলা টানেলের বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে – প্রতি ৭৫০ মিটার অন্তর ইমার্জেন্সি লে-বাই; মনুষ্যচালিত ফায়ার অ্যালার্ম পুশ বাটন এবং সহজে বহনযোগ্য অগ্নি নির্বাপণ সামগ্রী; আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যোগাযোগের জন্য টেলিফোনের সুবিধা; টানেলের ভেতর আলোর ব্যবস্থা; ভিডিও ক্যামেরায় নজরদারি; স্বয়ংক্রিয় ফায়ার ডিটেকশন এবং অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা; কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top