নিউজ ডেস্ক, ১৫ ফেব্রুয়ারি,২০২০: দীর্ঘ যুদ্ধের অবসান। বিনোদন জগতে নেমে এল শোকের ছায়া। চলে গেলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে জীবন যুদ্ধের লড়াই করছিলেন ফেলুদা। করোনা আক্রান্ত হয় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তখন ১৬ জন চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে চলছিল চিকিৎসা। এরপর থেকে থেকে হঠাৎই অবস্থার অবনতি হতে থাকে।এবং ফুসফুস ও মস্তিষ্কে প্রস্টেটে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ায় ভেন্টিলেশনে দিতে হয়েছিল তাঁকে।পরে শরীরে করোনা সংক্রমণ মুক্ত হলেও বাড়তে থাকে শারীরিক অসুস্থতা। শেষ অব্দি রাখা হয়েছিল ভেন্টিলেশন এবং লাইফ সাপোর্টে। গত ৬ ই অক্টোবর থেকে জীবন যুদ্ধের লড়াই চালাচ্ছিলেন তিনি। তবে আর সেই ভেন্টিলেশন থেকে ফিরে এলেন না অপুর সংসারের অপু।

১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি জন্ম গ্রহন করেছিলেন কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ১৯৫৯ সালে প্রথম সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসারে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে সৌমিত্র থেকে অপু তে পরিচিতি পেলেন তিনি। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। সত্যজিৎ রায়ের ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তিনি একজন অভিনেতাই নন, একইসাথে একজন কবি, অনুবাদক, আবৃত্তি শিল্পীও। কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়ের আমহার্স্ট স্ট্রীট সিটি কলেজে থেকে সাহিত্য নিয়ে স্নাতক পাশ করেন। এরপরেই শুরু হয় অভিনয়ের যাত্রা। পরবর্তীকালে তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মত পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। সিনেমার পাশাপাশি চালিয়ে গিয়েছেন থিয়েটার।

২০০৪ সালে অভিনয়ের জন্য ভারত সরকারের কাছ থেকে পদ্ম ভূষণ পুরষ্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি। ২০১২ সালে ভারত সরকারের তরফ থেকে পেয়েছেন দাদা সাহেব ফালকে সন্মান। ২০১৭ সাল্রে ফ্রান্স সরকারের তরফ থেকে পেয়েছেন লিজিওন অফ অনার। ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার। যদিও ২০১৩ সালে এই পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অপুর সংসারের অপু, কখন যে সোনার কেল্লার ফেলুদা, কখনও বেলাশেষের রোম্যান্টিক আবার অভিমানী বিশ্বনাথ।

এক সময় যখন বাংলা সিনেমা যখন মানুষের মন থেকে মুছতে বসে ছিল সেই সময় কাণ্ডারি হিসেবে বাংলা সিনেমাকে আবার প্রান ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পারমিতার একদিন, অসুখ, পাতালঘর, শাখাপ্রশাখা, বাক্স বদল, কাপুরুষ, দেবী, স্বরলিপি থেকে একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। আজ শুধু যাওয়ার বেলা প্রাক্তনের সেই কবিতার লাইন যা হয়েতো আর কোন দিন শোনা যাবে না ফেলুদার মুখ দিয়ে, আমাদের গেছে যা দিন একেবারেই গেছে, কিছুই কি নেই বাকি।।