
জীবন সায়াহ্নে গ্রাম বাংলার দরিদ্র প্রবীণদের আত্মবিশ্বাসের সাথে ,জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বাঁচার পথ দেখিয়েছে রাজ্য সরকারের ‘জয় বাংলা’ পেনশন প্রকল্প। পরনির্ভরতা কাটিয়ে জয়বাংলা প্রকল্প ষাট বছরের বেশি বয়স্ক মানুষদের কে আত্মনির্ভর করে তুলছে বাংলার গ্রামে গ্রামে । এই প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিজেরাই এখন অনেকটাই আত্মনির্ভর। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা আর্থিক সুবিধা পেয়ে যথেষ্ঠই খুশি এই প্রবীণরা।এই মুহুর্তে জেলায় জয় বাংলা পেনশনের অধীনে ‘ তপশিলি বন্ধু’ প্রকল্পে ২৭৫৭৬ জন, এবং ‘জয় জোহার’ প্রকল্পে ১৮৬৭৮ জন সরকারি অনুদান পাচ্ছেন।বিগত অর্থ বর্ষে জেলায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা এই প্রকল্পে অনুদান দেওয়া হয়েছে।
আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম ব্লকের দক্ষিন নারারথলির বাসিন্দা জীতেন্দ্র সরকারের বয়স প্রায় ৬৫ । বেশ কিছুদিন ধরেই শারিরিক অসুস্থতার কারনে কাজ কর্ম করা সম্ভব হচ্ছিলো না ওনার। এতে পরিবারে চরম আর্থিক সংকট দানা বাধে। সংসারের ন্যূনতম চাহিদার জন্য ওনাকে সবসময় ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হত। ছেলে ভুটানের বেসরকারি সংস্থায় দিনমজুরের কাজ করে ।ছেলের পাঠানো টাকা দিয়েই পরিবারের খরচ চলে এবং ওনার ঔষধও আসে ছেলের দেওয়া টাকায়। লক ডাউনের আবহে অনেক সময় ভুটান থেকে টাকা পাঠানো সম্ভব হত না ছেলের পক্ষে।
এমনও সময় গেছে যে ছেলের পাঠানো টাকার জন্য কয়েক মাসও অপেক্ষা করতে হয়েছে জীতেন্দ্রবাবুকে। কিন্তু জয়বাংলা প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে এখন জীতেন বাবুকে আগের মতন ছেলের টাকার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। প্রতি মাসে ব্যাংক থেকে সরকারি পেনশনের টাকা তুলে সরাসরি বাজারে গিয়ে নুন, তেল ও মাসকাবারি ঔষধ কিনে নিচ্ছেন। আর ছেলের পাঠানো টাকা সংসারে অন্য কাজে ব্যবহার করছেন তিনি।এমন কি ছেলের টাকা পাঠাতে দেরি হলেও কুছ পরোয়া নেই।
জীতেনবাবু জানান,” জয় বাংলা প্রকল্প চালু হওয়ায় অনেকটাই সুবিধা হয়েছে। ছেলে কবে টাকা পাঠাবে তার অপেক্ষায় থাকতে হয় না”।
আর ও পড়ুন ; ত্রিপুরায় ‘খেলা হবে দিবস’ নিয়ে ততপর হয়ে উঠেছে তৃণমূল
ওই এলাকার বছর সত্তোরের যতীন্দ্র সরকার ও ওনার স্ত্রী জয় বাংলা প্রকল্পে সুবিধা পাচ্ছেন। তিনি জানান, “দুই ছেলেই বিয়ে করে আলাদা সংসার। এই অবস্থায় সরকারি ভাতাই তাদের স্বামীস্ত্রীর বেঁচে থাকার পথ সহজ করে দিয়েছে”। প্রতি মাসে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সংসারের যাবতীয় জিনিস খরিদ করছেন। সরকারি এই প্রকল্পের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হচ্ছেন গ্রাম বাংলার হাজার হাজার মানুষ।
আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের পারোকাটার বাসিন্দা ষাটোর্ধ জগদীশ বিশ্বাস ও ওনার স্ত্রীও এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। তিনি জানান, “এই বয়সে আমরা কর্ম করার ক্ষমতা হারিয়েছি , টাকা জোগারের কোনো রাস্তাই খোলা নেই। তাছাড়া ছেলে মেয়েরাও বড় হয়েছে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে তাদের আলাদা সংসার।ইচ্ছে থাকলেও আমাদের জন্য সমস্ত কিছু করে উঠতে পারে না তারা। এই অবস্থায় সাংসারিক খচর ছাড়াও ঔষষপত্র কেনার ব্যাবস্থা সবসময় করতে পারতাম না । গত প্রায় এক বছর থেকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধা পেয়ে অনেকটাই নিশ্চিৎ আছি । মুখ্যমন্ত্রী কে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই”।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের ষাট বছরের বেশি বর্ষীয়ান নাগরিকদের জন “জয় বাংলা” প্রকল্প চালূ করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই সম্প্রদায়ের বহু মানুষ এই সরকারি অনুদানের সুবিধা পাচ্ছেন।
এই প্রসঙ্গে জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা বলেন,” এই পেনশন প্রকল্পে যারা আবেদন করেছেন তাদের আবেদন খতিয়ে দেখে দ্রুত অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে,যারা এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য তাদের রাজ্য সরকার সেই সুবিধা প্রদান করেছেন”।