
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
দড়ি লাফে ( jumping rope ) হৃৎপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এটি কার্ডিওভাসকুলার ব্যবস্থা ও হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখে। দড়ি লাফের ( jumping rope ) ফলে ব্যায়ামকারীর শরীরে ‘ভিওটু ম্যাক্স’ বাড়ে। ভিওটু ম্যাক্স হলো একজন ব্যক্তির ব্যায়ামের সময় শরীরে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ অক্সিজেন ব্যবহার করতে পারে, তার পরিমাণ। যার ভিওটু ম্যাক্স যত বেশি হবে, তার কার্ডিওভাসকুলার ব্যবস্থার সক্ষমতা তত বেশি হবে। ফার্মেসি ও টেকনোলজি নামক মার্কিন গবেষণা সাময়িকীর ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন দুই বার করে ১২ সপ্তাহ দড়ি লাফ করেছে এমন কলেজ শিক্ষার্থীদের ভিওটু ম্যাক্স একই বয়সী কিন্তু অন্য ব্যায়াম করেছে এমন শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি।
এ ছাড়া কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও দড়ি লাফে উপকার পেতে পারেন। ইউরোপিয়ান জার্নাল অব অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজি নামক গবেষণা সাময়িকীর ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রিহাইপারটেনশন’ এবং রক্তচাপ বিপৎসীমার কাছে থাকা কিশোরীদের ১২ সপ্তাহে ধরে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় দড়ি লাফ ( jumping rope ) করার ফলে কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। একই গবেষণায় আরও বলা হয়, দড়ি লাফ করার ফলে কিশোরীদের পুরো শরীরে থাকা মেদ ও তলপেটের মেদের পরিমাণ কমে যায় এবং নাড়ির স্পন্দন বা পালস রেট আরও ভালো হয়। এর সবই হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে প্রভাব ফেলে।
সবচেয়ে বেশি ক্যালরি পোড়ায়
ক্যালরি পুড়িয়ে শরীর সুস্থ ও সবল রাখার জন্যই আমরা ব্যায়াম করি। আর শরীরের ক্যালরি তখনই পোড়ে, যখন ব্যায়ামের কারণে শরীর গরম হয়ে ওঠে। হাঁটা বা দৌড়ানোর ফলে শরীর গরম হতে যে সময় নেয়, দড়ি লাফে শরীর গরম হয় আরও কম সময়ে। তাই একই সময় ধরে ব্যায়াম করলেও অন্য ব্যায়ামের চেয়ে দড়ি লাফে বেশি ক্যালরি পোড়ে।
শরীরকে করে তোলে আরও ভারসাম্যপূর্ণ
দড়ি লাফের শুরুটা যেমনই হোক, নিয়মিত চর্চায় কিছুদিনের মধ্যেই এতে দক্ষ হয়ে ওঠা যায়। এমনকি এক লাফের মধ্যে দুই বার দড়ি ঘোরানো বা একপায়ে দড়ি লাফের মতো দক্ষ হয়ে ওঠেন কেউ কেউ। দড়ি লাফের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন হয় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে একটি ছন্দ। যেমন পা তখনই ওপরে উঠবে যখন কবজি ঘুরে নির্দিষ্ট একটি স্থানে থাকবে। আর দড়ি লাফের সময় শরীরের বেশির ভাগ পেশীই কাজ করে। এ ভাবেই দড়ি লাফ আমাদের শরীরকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলে। ২০১৭ সালে মার্কিন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ভারসাম্যহীনতার সমস্যায় প্রায়ই ভোগে এমন বিশেষ শিশুদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে নিয়মিত দড়ি লাফে। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা অনুযায়ী, ৯ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৮ সপ্তাহ নিয়মিত দড়ি লাফ করেছে এমন শিশুরা একই বয়সী অন্যদের চেয়ে ফুটবল খেলায় বেশি নৈপুণ্য দেখাতে পেরেছে।
আর ও পড়ুন ঢাকার আর্টিজান জঙ্গি হামলার ঘটনা নিয়ে এবার সিনেমা (Cinema) হচ্ছে বলিউডে (Bollywood)
হাড় মজবুত করে
দড়ি লাফে শরীরের হাড় আরও মজবুত হয়। হাড়ের পুরুত্ব নির্ধারণ করে এর শক্তি। আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের মতো খনিজের পরিমাণ বেশি থাকলে হাড় আরও শক্ত হয় এবং আঘাতে ভেঙে পড়ার ঝুঁকি কমে যায়। হাড়ের পুরুত্ব বেশি হলে বৃদ্ধ বয়সে অস্টিয়োপরোসিস রোগের ঝুঁকি কমে। বিশেষত প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধ বয়সে নারীদের মধ্যে নিয়মিত দড়ি লাফ এই রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। অস্টিয়োপরোসিস হলো হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া রোগ, ফলে হাড় ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্স গবেষণা সাময়িকীতে ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের মধ্যে যারা নিয়মিত দড়ি লাফ করে, তাদের শরীরের হাড়ের পুরুত্ব অন্যদের চেয়ে বেশি। দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষণা সাময়িকী কোরিয়ান সোসাইটি ফর বোন অ্যান্ড মিনারেল রিসার্চ-এর ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে হাড়ের শক্তি বাড়াতে প্রতিদিন ১০ মিনিট করে দড়ি লাফ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক অস্টিয়োপরোসিস ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, দুর্বল হাড়ের ব্যক্তিরাও দড়ি লাফ থেকে উপকার পেতে পারে। তবে এটি শুরু করার আগে তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি কমায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, দড়ি লাফে ভারসাম্য বাড়লে আরও কিছু বিষয়ে সুফল পাওয়া যায়। যার একটি হলো শরীরে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি কমে যাওয়া। শরীর ভারসাম্যপূর্ণ হওয়ার কারণে অন্য ব্যায়াম বা দৈনন্দিন অন্যান্য কাজে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। মার্কিন প্রশিক্ষক জিলিয়ান মাইকেল বলেন, দড়ি লাফের কারণে শরীরের ওপর ও নিচ এই দুই অংশের নড়াচড়ার মধ্যে সমন্বয় বাড়ে। এর ফলে আমরা আরও কর্মদক্ষ হয়ে উঠি। একই সঙ্গে আমাদের শরীরের সংবেদনশীলতারও উন্নতি হয়। আর এসব কারণে আমাদের শরীরে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকিও কমে যায়।