
পুরসভায় আর্থিক তছরুপের অভিযোগে গ্রেপ্তার (Arrest) হলেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর পুরসভার ৩৪ বছরের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
অভিযোগ,তিনি বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন শহরের উন্নয়ন খাতে ৫৫ টি প্রকল্পের প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। পুরসভার অডিট রিপোর্টে সেই গরমিলধরা পড়ে। চিপ ভিজিলেন্স অফিসার বিষ্ণুপুর মহকুমাশাসক অনুপ কুমার দত্তকে বিষয়টি জানান।
মহকুমা শাসকের দায়ের করা লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার সকালে পুলিশ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার (Arrest) করে। পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় সংবিধানের জামিন অযোগ্য ৪০৯ ধারায় সরকারি অর্থ তছরুপ করা সহ একাধিক ধারায় মামলা রজু করে রবিবার বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে তোলে। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ওই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন এবং এই গ্রেফতার (Arrest) রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে সাফাই দিয়েছেন শ্যামাপ্রসাদ বাবু।
আর ও পড়ুন রিয়েলিটি শোয়ে পা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন শিল্পা শেঠি (Shilpa Sethi)
জানা গিয়েছে,শ্যামাপ্রসাদ বাবুর রাজনৈতিক উত্থান জাতীয় কংগ্রেসের হাত ধরে। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করার পর তিনি পুরসভার ১৯ জন কাউন্সিলর কে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১১সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের ময়দানে নেমে জয়লাভ করেন। সেবারই তিনি প্রথমে রাজ্যের আবাসন মন্ত্রী ও পরে বস্ত্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
একইসঙ্গে তিনি বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যানের পদেও ছিলেন। সেই সময়কালে বড়জোড়ায় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের একটি সিমেন্ট কারখানা বাজার মূল্যের থেকে অনেক বেশি দামে সারদা চিটফান্ডের মালিক সুদীপ্ত সেনকে বিক্রি করার অভিযোগে সিবিআইয়ের জালে তাঁর নাম জড়ায়।
আর ও পড়ুন আজব ঘটনা (Strange fact), পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ছে দুধ, আবার খনিক দূরে গিয়ে তা দুধে পরিণত হচ্ছে
যদিও সেই সময় সিবিআইয়ের জেরার মুখে পড়লেও প্রাক্তন মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে সেই সময় থেকেই তিনি দলে জমি হারাতে শুরু করেন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রবল মোদি ঝড়ে ফের তিনি রাজনৈতিক পালাবদল করে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন। যদিও বিষ্ণুপুর বিজেপি তাঁকে নেতা হিসাবে কোনো দিনও মেনে নেয়নি। তাই বিজেপিতে ঠাঁই না পেয়ে বিপুল ভোটে তৃণমূলের প্রত্যাবর্তনের পর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ফের তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা করেন।
সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুরে একটি সরকারি কর্মসূচিতে এলে সেখানে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেন। যদিও সে যাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে দেখা করা তো দূরের কথা কোনো বার্তাও দেননি। এই পালা বদল পর্বের মধ্যেই তিনি বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যানের পদটিও হারান। সরকারি নির্দেশে শ্যামাপ্রসাদ বাবুকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে তাঁরই ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়। এতো সব ঘটনার পর ২ দলেই ব্রাত্য হয়ে পড়ার পর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বাধ্য হয়ে রাজনৈতিক অবসর নিয়েছিলেন।
এই বিষয়ে তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অলক মুখার্জী বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প গুলি টেন্ডার করেও উনি কাজ করেননি, অন্যায়ের শাস্তি তো আমাকে পেতেই হবে। বিজেপির জাতীয় পরিষদের সদস্য স্বপন ঘোষ বলেন শ্যামাপ্রসাদ বাবু আমাদের দল ছেড়ে ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে গেছিলেন বলে শুনেছি , কাজেই এটা আমাদের দলের অস্বস্তির কোন কারণ নেই।
আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এদিন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তদন্তের স্বার্থে তাঁকে ৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও আদালতের রায় শোনার পর এই বিষয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় মুখ খোলেন নি। আগামী ২৮ আগস্ট ফের তাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।