মুসলিম ধর্মের মানুষের হাতের তৈরি হিন্দু ধর্মের প্রতিমা! সম্প্রীতির অনন্য নজির তৈরি করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে ইসমাইল!ভিন ধর্মের মানুষ হয়েও ইসমাইল চিত্রকরের তৈরি কালীপ্রতিমা পুজিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে৷ তাঁর এই কাজ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির তৈরি করেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে! প্রতি বছরই বিভিন্ন দেব দেবীর পূজার সময় দেব দেবীর মূর্তি কিনতে ক্রেতারা ভিড় জমান ইসমাইলের বাড়িতে৷ ঠাকুর কিনতে মানুষজন আসেন ভিন জেলা থেকেও৷
প্রায় চার দশক ধরে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি, পট তৈরি করে চলেছেন ইসমাইল৷ এই কাজে তার স্ত্রী, ও দুই মেয়ে তাঁকে সাহায্য করেন৷ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার নাড়াজোল গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল চিত্রকর। বয়স ৬১ বছর৷
পট আর মূর্তি তৈরি করেই সংসার চালান ইসমাইল৷ স্ত্রী ও মেয়েদের সহযোগিতায় একের পর এক গড়ে তোলেন লক্ষ্মী, সরস্বতী, কালী, কার্তিক, গণেশের প্রতিমা৷ এলাকায় তাঁর কাজের কদর রয়েছে। তাই ক্রেতার অভাব হয় না৷ ফলে সারা বছরের খোরাকিটুকু জুটে যায়।
রাজন আমল থেকে এই কাজ করে আসছেন তাঁদের পূর্বপুরুষেরা। এখন রাজার রাজত্ব না থাকলেও বাপ, ঠাকুরদার পেশা ছাড়তে পারেননি সেও৷ হিন্দু দেবদেবীর প্রতিমা গড়ে রোজগার করতেই স্বাচ্ছন্দ্য় বোধ করেন ইসমাইলরা৷
গত বছর করোনা আবহে বরাত তেমন জোটেনি। তবে এবছর কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছে ইসমাইল ও তার পরিবারের সদস্যরা৷ কালীপুজোয় ভালই কাজ পেয়েছেন বৃদ্ধ শিল্পী। সেই কাজ এখনও চলছে জোরকদমে।
আর ও পড়ুন কাঁচড়াপাড়ার রঘু ডাকাতের কালি বাড়ির খ্যাতি ক্রমশ বাড়ছে
কারণ, হাতে আর সময় নেই বললেই হয়। দাসপুরের এই ঘটনা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়েছে৷ রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে সমস্ত মানুষ ধর্মকে শিখণ্ডি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছে৷ তাঁদের গালে জোর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ইসমাইলের মতো মানুষরা তে ধর্ম যার যার উৎসব সবার৷ ইসমাইলের পাশে রয়েছেন অমর কুণ্ডুর মতো প্রতিবেশীরাও৷ যাঁদের কাছে হিন্দু, মুসলমানের হানাহানি একেবারেই অনভিপ্রেত৷
অমর কুনডু বলেন, ইসলাম ধর্মের এই শিল্পী হিন্দু দেবীর অবয়ব গড়ছেন, এমন দৃশ্য দেখেই বড় হয়েছেন তাঁরা৷ তাই তাঁদের কাছে সাম্প্রদায়িক বলে কিছু নেই। তাঁরা ভালবাসেন মিলেমিশে থাকতে, এবং এক সাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উৎসব এ মেতে উঠবেন বলে জানিয়েছেন তারা।