সৌমিত্র নাকি উত্তম? কে সেরা? এই প্রশ্ন তাঁর জীবনেও অতিশয় ঘোরাফেরা করত। কিন্তু তিনি কী মনে করতেন? উত্তম কুমারকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতেন সৌমিত্র? আজ, ১৫ নভেম্বর অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। তাই ১৫ নভেম্বর,আপামর বাঙালির বড্ড বিষাদের দিন। কারণ এই বিশেষ দিনেই এমন এক ব্যক্তিত্ব হারিয়ে গেছে চিরকালের মতো, যার মৃত্যুতে বাঙালি সহ গোটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। বিনোদন জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে বাঙালির মন আজ ভারাক্রান্ত। দেখতে দেখতে বছর ঘুরলেও প্রিয় নায়ক-অভিনেতা-কবি-নাট্যকারের সেই উজ্জ্বল উপস্থিতি সকলের মণিকোঠায় অমলিন হয়ে রয়েছে।
একবছর আগে এই দিনটিতেই টলিউড থেকে আপামর সৌমিত্র ভক্তকুলকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিয়েছিলেন তিনি। উত্তম যুগের সূচনাকাল থেকে যে মানুষটি টলিউডে দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, আজ তাঁর শূন্যতায় খাঁ খাঁ করছে থিয়েটার মঞ্চ থেকে টলিপাড়া। ফেলুদার মগজাস্ত্র আবার কখনও অপু, বাঙালি যাঁর কাছে চির ঋণী, তিনিই অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
যদিও তাঁকে শুধু অভিনেতা বললে ভুল হবে, তিনি শিল্পীও। উত্তম-সৌমিত্র যুগের অবসান ঘটলেও, তাঁদের মধ্যে সেরার লড়াই বাঙালি চিরকাল চালিয়ে যাবে। উত্তম সৌমিত্র উত্তমকুমারের রোম্যান্টিক কমেডিতে মুগ্ধ হতেন। তাঁর কথা উল্লেখ করলে, “প্রেমিক কিন্তু স্টাইল কমিক- ওই প্রেমে পড়ে বোকা হয়ে গিয়ে যেসব হাস্যরসের উদ্ভবগুলো হয়।”
উত্তমকুমারের ‘চিরকুমার সভা’র ‘পূর্ণ’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’-র ‘ভূতনাথ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন সৌমিত্র। চিরকাল সত্যজিতের ছবির মধ্যমণি হয়ে থেকেছেন সৌমিত্র। সত্যজিৎ ছক ভেঙে উত্তমকুমারকে কাস্ট করলেও, তাতে যে বিশাল কিছু সফলতা পেয়েছেন এমনটা নয়। উল্টে, সত্যজিতের ছবিতে উত্তমকুমারের অভিনয় নিয়ে আজও প্রশ্ন ওঠে বিস্তর। তবে সৌমিত্রের চোখে উত্তমকুমার কত বড় অভিনেতা তা সত্যজিতের ছবি থেকেই বোঝা যায়। তাঁর মতে, ‘চিড়িয়াখানা’-তে অভিনয়ের পর ওঁর অভিনয়ের রীতিই বদলে যায়। ‘চিড়িয়াখানা’-য় উত্তমকুমারের অভিনয় তাঁকে ‘নায়ক’-এর থেকেও বেশি নজর কেড়েছে। সেসময় টলি পাড়া দেখেছে উত্তম-সত্যজিৎ-সৌমিত্রের দাপট। টলিউডের স্বর্ণযুগ।
আর ও পড়ুন আক্রান্ত হলো সলমন খুরশিদের বাড়ি
আজ উত্তম-সত্যজিৎ-সৌমিত্র যুগের অবসান হয়েছে। তবে, বাঙালির আড্ডায়, তর্কে বিতর্কে ধরা দিয়ে যায় উত্তম-সৌমিত্রের মধ্যে সেরার লড়াই। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘অগ্রপথিকেরা’ বইতে তিনি উল্লেখ করেছেন উত্তমকুমারের সঙ্গে কাটানো সময়ের। টলিউডে তখন দাপুটে দুই অভিনেতা উত্তম-সৌমিত্র। সেসময় শুরু হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার লড়াই। আজ তাঁরা দু’জনই তারার দেশে। জীবনের কয়েক যুগ কাটিয়ে এসে সৌমিত্র খোলাখুলি জানান, ‘কম্পিটিশন আমার মধ্যে কোনওদিন কাজ করেনি, এমন কথা আমি বলছি না।
কিন্তু সেই সঙ্গে খুব অনেস্টলি বলছি যে সমাজের এই প্রতিযোগিতা আমার বিশ্বাসের জায়গা থেকে তা বিশ্বাস করি না। উত্তমদার দশ বছর পর আমি অভিনয়ে এসেছি। উত্তমদার নিজের ভিতরে কী করে কাল্টিভেট করতে হয় সেটা ছিল, আমার ভিতরে সেটা বরঞ্চ কম মাত্রায় ছিল।’ তাঁর সাফ বক্তব্য,”উত্তম-সুচিত্রার সেই রাইজিং সময়টায় আমি কিন্তু উত্তমদার অভিনয় বেশি পছন্দ করতাম।”