রবিবার থেকে শান্তিপুরে শুরু হবে ভাঙা রাস । নবদ্বীপে রাস শেষ হতেই রবিবার শুরু হয়ে যাবে শান্তিপুরের ভাঙ্গা রাস। তবে এ বছর করো না পরিস্থিতির কারণে ভাঙ্গা রাসের উল্লেখযোগ্য তাৎপর্য সচল রাই রাজা পরিক্রমা হচ্ছে না। এর পরিবর্তে নগর পরিক্রমা বের হবে শান্তিপুর শহরে। অর্থাৎ শান্তিপুরের মোট মন্দির থেকে বিগ্রহ মূর্তি পরিক্রমা করবে দর্শনার্থীদের জন্য। পাশাপাশি বিভিন্ন বারোয়ারী কমিটি তাদের প্রতিমা নিয়ে পরিক্রমায় বের হবে।
তবে এখানকার ভাঙ্গা রাশের তাৎপর্য কী এই বিষয়ে অনেকেই ভাবনা চিন্তার মধ্যে নিমজ্জিত থাকেন। শান্তিপুরের রাধা কৃষ্ণের রাস পাশাপাশি বেশকিছু বারোয়ারী কমিটি বিভিন্ন ধরনের মূর্তি তৈরি করে রাস উৎসব পালন করে থাকেন। শান্তিপুরের রাসের আদলটা একটু ভিন্ন ধরনের।
নবদ্বীপে রাস উৎসব আর শান্তিপুরের পরিচিতি নাম ভাঙ্গা রাস। এই ভাঙ্গা রাস কেন ?এই সম্পর্কে জানা গিয়েছে যে শান্তিপুর ডুবুডুবু নদে ভেসে যায় রাসের রসে। একদিকে চৈতন্য ধাম নবদ্বীপ অন্যদিকে অদ্বৈত ভূমি শান্তিপুর। শান্তিপুরের রাস কমপক্ষে সাড়ে তিনশ বছরের অধিক সময় কাল ধরে হয়ে আসছে। এখানে রাসেল বিষয়টি এবং বৈশিষ্ট্য হলো রাধা কৃষ্ণের রাস তারপর আধুনিকতার পরিবর্তন ঘটেছে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি নিয়ে পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
তবে ভাঙ্গা রাশের নামকরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক পৌরাণিক কাহিনী। বলা হয় দ পড়ে মহাদেব ছদ্দবেশী মহাদেবের অনুপ্রবেশে ভেঙে গিয়েছিল বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের রাস। মহাদেব বলেছিলেন কলিতে তিনি সকলকে রাস দর্শন করাবেন। ভক্তদের বিশ্বাস মহাদেবের অংশ অদ্বৈত আচার্য দ্বাপরের ভেঙে যাওয়ার রাস ফের শুরু করলেন।
তাই উৎসব এর পরিচিত হল ভাঙ্গা রাস নামে সকলের মুখে মুখে ভাসছে। বলা হয় অদ্বৈত আচার্য প্রথম শান্তিপুরে অনাড়ম্বর ভাবে রাসের শুভ সূচনা করেছিলেন। এই ভাঙ্গা রাস দেখতে রাত ভোর লক্ষাধিক দর্শনার্থী অপেক্ষা করে থাকতেন কিন্তু করণা পরিস্থিতিতে এবার ভাঙ্গা রাস অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এর পরিবর্তে নগর পরিক্রমা বের হবে।
জানা গিয়েছে যে শান্তিপুরের ভাঙ্গা রাসের প্রধান আকর্ষণ থাকে সচল রাই রাজা। একে ঘিরে অজস্র কাহিনী আছে তবে দেশ-বিদেশ থেকে রাই রাজা পরিক্রমা দেখতে বহু মানুষের উপস্থিতি লক্ষণীয় থাকে। শান্তিপুরের বিভিন্ন বিগ্রহ বাড়ির আয়োজনে ভাঙ্গা রাসের শোভাযাত্রা শেষে থাকেন রায় রাজা। কোন ব্রাহ্মণ পরিবারের কন্যাকে রাই রাজা সাজিয়ে সুসজ্জিত সিংহাসনে বসিয়ে নগর পরিক্রমা করা হয় পথের দু’ধারে লাখো লাখো মানুষের ভিড় থাকে কিন্তু এবারে রাই রাজা শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে না।
বড় গোস্বামী বাড়ির গৃহদেবতা রাধারমন এবং শ্রীমতি কে ঘিরে রাশির নগর পরিক্রমা বের হবে। তারপর যুগলে থাকেন অনেক বিগ্রহ। একে একে চৌধুরীবাড়ী পাগলা গোস্বামী বাড়ি,চাকফেরাবাড়ি, বাশবুনিয়া গোস্বামী বাড়ি সাহা বাড়ি মদন গোপাল গোস্বামী পাতাবুনিয়া ঘোষ স্বামীর বাড়ি হাটখোলা গোস্বামীর বাড়ি সব মিলিয়ে একাধিক বিগ্রহ বাড়ি শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে থাকে।
নবদ্বীপ শহরে রাস শুরু হলেও শান্তিপুরে দুইদিন রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আজ শান্তিপুরের ভাঙ্গা রাস অর্থাৎ সমাপ্ত রাস। একদিকে চিটিংবাজ অন্যদিকে রাসমঞ্চে রাস উৎসব পালন হয় বিভিন্ন বিগ্রহকে নিয়ে। আলোক সজ্জায় সেজে উঠেছে শান্তিপুর শহর।
ভারতমাতা পুটাপুটি বিগ্রহ এবিসিডি ক্লাব বউ বাজার পাড়া বারোয়ারী সহ একাধিক পূজো বারোয়ারী কমিটি তারা নগর পরিক্রমায় অংশগ্রহণ করবে। পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নির্দেশ কোনভাবেই রাই রাজা পরিক্রমা করা হবে না তার পরিবর্তে নগর পরিক্রমা হবে। শান্তিপুরে কমপক্ষে ১৫ টি বিগ্রহ নগর পরিক্রমায় অংশগ্রহণ করবে। এছাড়াও থাকবে একাধিক বারোয়ারী কমিটি বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি।
নগর পরিক্রমা যাতে শান্তিতে ঘটে তার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মুড়ে ফেলা হয়েছে শান্তিপুর শহর। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে যে আমরা প্রত্যেক পুজো কমিটিকে বলেছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুজো করতে হবে এবং নগর পরিক্রমায় অংশগ্রহণ করতে হবে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আর ও পড়ুন দীঘায় কাঁকড়া খেয়ে পর্যটকের মৃত্যু
শান্তিপুরের রাস সমাপ্তি ঘটে নিখাদ বৈষ্ণবীয় রীতিতে। কুঞ্জ ভঙ্গ নামে একটি বিশেষ উৎসব পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় ভাঙ্গা রাস। তারপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন গোস্বামী বাড়ির বিজ্ঞানী পুনরায় রাসমঞ্চ বসানো হয় এই একটি দিনই মহিলারা শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ স্পর্শ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। শান্তিপুরে বড় বড় মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য মন্ডল অমৃতসরের সোনার মন্দির তৈরি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষের ভিড় লক্ষণীয়। তাই আজকের রাত সব দেখতে ভিড় করবেন বহু দর্শনার্থী। পুলিশ প্রশাসন নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলেছে কোটা শহর। নবদ্বীপের আড়ং শেষ হতেই শুরু হয়ে গেল রবিবার থেকে শান্তিপুরের ভাঙ্গা রাস অর্থাৎ এ বছর হবে নগর পরিক্রমা।