মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে মাটি মাফিয়াদের দাপট

মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে মাটি মাফিয়াদের দাপট

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram
হরিশ্চন্দ্রপুরে

মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে মাটি মাফিয়াদের দাপট, যথেচ্ছ হারে কাটা হচ্ছে মাটি, যুক্ত প্রশাসনিক আধিকারিকরা, ভরাট হয়ে যাচ্ছে জলা জমি, নজর নেই প্রশাসনের, অন্যদিকে ভূমি সংস্কার দপ্তর আধিকারিকদের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে তৃণমূল-বিজেপি।  মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানা জুড়ে চলছে ব্যাপক হারে মাটি মাফিয়াদের দাপট। কার্যত প্রশাসনের নাকের ডগা তেই সরকারি রেভিনিউ ফাঁকি দিয়ে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। আবার সেই মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হচ্ছে জলা জমি।

 

অভিযোগ এলাকার মাটি মাফিয়ারা ভূমি সংস্কার দপ্তরের যে পরিমাণ মাটি কাটা রেভিনিউ দিচ্ছে তার থেকে কয়েকশ গুণ বেশি মাটি কেটে নিচ্ছেন এবং সেই মাটি দিয়ে জলা-জমির ভরাট থেকে ইটভাটায় বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। আর বাকি টাকা চলে যাচ্ছে ভূমি সংস্কার দপ্তর আধিকারিকদের পকেটে, এমনকি সেই মাটি ট্রাকটারের খোলার দাঁড়াতেই পরিবহন করা হচ্ছে সরকারি নির্দেশিকা কে অমান্য করে। ফলে সেই কাঁচা মাটি রাস্তায় পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা ক্রমেই বেড়ে চলেছে সারা হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকাজুড়ে। নজর নেই ভূমি সংস্কার দপ্তর আধিকারিক থেকে স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকদের।

 

এলাকার বাসিন্দা থেকে রাজনৈতিক মহল এমনকি বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় অভিযোগ তুলছেন মাটি মাফিয়াদের সঙ্গে এই অবৈধ কাজে যুক্ত আছেন ভূমি সংস্কার দপ্তর আধিকারিক এবং কিছু দালালরা। এদিকে হরিশ্চন্দ্রপুর জুড়ে মাটি মাফিয়াদের তান্ডবের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন শাসক দলের নেতারাও। তাদের বক্তব্য অবিলম্বে প্রশাসন এবং সংস্কার দপ্তর এই বিষয়ে করা নজরদারি চালাক। না হলে এই মাটি মাফিয়াদের দাপটে অবিলম্বে হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। ঘটবে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

 

সম্প্রতি হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার পাওয়ার হাউজ সংলগ্ন এলাকায় লখনও বাগান এলাকার একটি আম বাগান থেকে অবৈধভাবে মাটি খনন করা হচ্ছে বলে খবর পেয়ে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা সেখানে পৌঁছায়। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি দেখতে পেয়ে কিছু মাটি মাফিয়া তাদের বাধা দিতে আসে। এলাকার বাসিন্দারা প্রতিবাদ করলে তারা পালিয়ে যায়।এলাকার বাসিন্দাদের আরো অভিযোগ হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার দুটি ব্লকের ভূমি সংস্কার দপ্তর অফিস ঘুঘুর বাসা তে পরিণত।

 

দালাল না ধরলে কোন কাজ হয় না। সাধারণ মানুষদের হয়-রানির শিকার হতে হয়। এদিকে মাটি মাফিয়ারা মোটা টাকার বিনিময় পিছনের দরজা দিয়ে ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে অশুভ আঁতাত তৈরি করে দিনের-পর-দিন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এবার এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন এলাকার বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতি দলের প্রতিনিধিরা। এমনকি শাসক দলের প্রতিনিধি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন।অন্যদিকে ভূমি সংস্কার দপ্তর আধিকারিকদের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিজেপি।

 

আর ও পড়ুন    বিদ্যালয়ে রাতের অন্ধকারে তালা ভেঙে একের পর এক দুঃসাহসিক চুরি

 

স্থানীয় বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় রাজনৈতিক মহলের দাবি প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনের আলোতে দিনের-পর-দিন সরকারি রেভিনিউ ফাঁকি দিয়ে মাটি মাফিয়ারা মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার সেই মাটি দিয়ে অবৈধ ভাবে জলা জমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে দিনের আলোতে। সব কিছু দেখে নিশ্চুপ ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিক বৃন্দ। কোন নজরদারী নেই। এমনকি মাটি কাটার কম রেভিনিউ দিয়ে বেশি পরিমাণ মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে প্রকাশ্য দিবালোকে। এই মাটি আবার চলে যাচ্ছে সরাসরি ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এর ফলে সরকারের রেভিনিউ মার খাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে সরকারী সম্পত্তির।

 

অন্যদিকে অবৈধভাবে জলা জমি ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। অথচ এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোন হুশ নেই। হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। এলাকাবাসীর মনে প্রশ্ন তাহলে কি এই অবৈধ কাজে যুক্ত রয়েছেন ভূমি সংস্কার দপ্তর আধিকারিক এবং অন্যান্য প্রশাসনের কর্তারা? এদিকে এই বিষয়ে ভূমি সংস্কার দপ্তর এর আধিকারিকের কাছে বক্তব্য নিতে গেলে তিনি স্পষ্ট বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন। পাল্টা এই খবর কেন করা হচ্ছে তার কৈফত চাওয়া হয়। এমনকি সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেন খবর করলে পুলিশ কেশের হুমকিও দেন।

 

এলাকার সমাজসেবী স্থানীয় বাসিন্দা চন্দ্রনাথ রায় এবারে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তিনি জানান এ ব্যাপারে তিনি তথ্য জানার অধিকার আইনের দ্বারস্থ হবেন। তিনি আরো বলেন এলাকার কিছু জমি মাফিয়া ও মাটি মাফিয়া সম্মিলিত ভাবে সরকারের রয়েলটি ফাঁকি দিয়ে বেশি পরিমাণে মাটি কেটে নিচ্ছে। আর ওই মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে জলা জমি। সমস্ত তা করছে প্রকাশ্য দিবালোকে।

 

বিশেষ করে এই কাজ করা হচ্ছে শনিবার,রবিবার ছুটির দিন। কারণ ওই দিন গুলিতে ভূমি সংস্কার অফিস বন্ধ থাকবে এবং অভিযোগ করার মতো কাউকে পাওয়া যাবে না। তাই ইচ্ছে করেই এই কাজ করানো হচ্ছে বিশেষ দিনগুলোতে। এর পেছনে প্রশাসনিক আধিকারিকদের মদদ রয়েছে বলে মনে করছি। বেআইনি ভাবে জলাজমির ভরাট করাতে গিয়ে অল্প বৃষ্টি হলে হরিশ্চন্দ্রপুরের বিভিন্ন জায়গায় জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। জল নিকাশি ব্যবস্থা স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। যথেচ্ছ ভাবে খোলা ডালা যুক্ত গাড়িতে মাটির পরিবহন করা হচ্ছে রাস্তায় যত্রতত্র পড়ে থাকছে কাঁচামাটির দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। কেন নজর দিচ্ছে না প্রশাসন। আমি অবিলম্বে এই ব্যাপার নিয়ে তথ্য জানার অধিকার কমিশনের কাছে যাবো।

 

অন্যদিকে সুর ছড়িয়েছেন বিজেপির নেতারা।বিজেপি জেলা সাধারণ সম্পাদক কিষান কেডিয়া জনান বিগত ৯০ দশকের থেকেই হরিশ্চন্দ্রপুর ভূমি সংস্কার দপ্তর এ ভূমি সংস্কার আধিকারিকের মদদে এবং এলাকার শাসক দলের নেতাদের প্রশ্রয় এ দিনের-পর-দিন বেআইনি কাজ হয়ে যাচ্ছে। দালাল চক্র সক্রিয় ভূমি সংস্কার অফিসের। একজনের জমি অন্যজনের নামে হয়ে আছে রাতারাতি। মাটিকাটা তে সরকার রয়ালটি পাচ্ছে না ঠিকমত। সরকারি কোষাগারে রাজস্ব ঢুকছেনা। সমস্তটাই কাটমানি হয়ে যাচ্ছে।বর্তমানে শাসক দলের নেতারাও এই কাজে যুক্ত আছেন। না হলে ভূমি সংস্কার দপ্তর এর আধিকারিকদের এতটা সাহস হতো না।

 

এই প্রসঙ্গে শাসকদলের হরিশ্চন্দ্রপুর অঞ্চল চেয়ারম্যান সঞ্জীব গুপ্তা জানান এগুলো ভিত্তিহীন অভিযোগ। শাসকদল এগুলো ব্যাপারে প্রশ্রয় দেয় না। আমরা এর আগেও এই মাটি কাটার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলাম। হরিশ্চন্দ্রপুরে বিভিন্ন জায়গায় যথেচ্ছ ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে সরকারের রাজস্ব যে রকম আমদানি হচ্ছে না তেমনি প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আমরা অবিলম্বে এ ব্যাপারে প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে আলোচনায় বসবো। যাতে তারা এই ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ নেন।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top