বাঘের আতঙ্কে গোটা গ্রাম, বাঘ ধরতে খাঁচা তৈরি, জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে এলাকা। দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলার কুলতলিতে লোকালয়ে পরপর দুইদিন বাঘের আতঙ্ক। গায়েনের চক গ্রাম থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে আর এক গ্রাম ৫ নম্বর গরানকাঠি। শুক্রবার সেই গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গলে মিলেছে বাঘের দেখা। কাকভোরে নদীতে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন এক মহিলা।
আচমকা দেখেন হলুদ রঙের ডেরাকাটা দাগ। সুন্দরবনের মহারাজ রাজকীয় ভঙ্গিতে বসে আছে। তা দেখেই আতঙ্কে মহিলা দিকবিদিগ হয়ে গ্রামের দিকে ছুটে আসেন। তাঁর প্রবল চিৎকারে লোকজন জড় হয়ে যায়। এদিকে, বাঘের খোঁজে পাশের গ্রামেই ছিল বনদপ্তরের কর্মীরা। তড়িঘড়ি সেই খবর পেয়ে তাঁরা ছুটে আসেন এলাকায়। কুলতলি থানার পুলিসও চলে আসে এলাকায়।
গ্রামের লোকজন আতঙ্কে ঘর বন্দি হয়ে যায়। গ্রামে আসেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগীয় সহ আধিকারিক অনুরাগ চৌধুরী সহ চিতুরি, পিয়ালি বিটের বন দপ্তরের অফিসাররা। ৫ নম্বর গরানকাঠি গ্রামের রাস্তার একেবারে পাশেই একদিকে পিয়ালি আর একদিকে মাতলা নদীর শাখা। তার কাছেই জঙ্গল। দুপুরের পর নদিতে ৫-৬টি বোট নামিয়ে প্রায় ১৫০ জন বন দপ্তরের কর্মীরা নেমে পড়েন জঙ্গলের এলাকা জাল দিয়ে ঘিরতে। প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা নদীতে নেমে নাইনলের জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় গোটা এলাকা।
আর ও পড়ুন চায়ের দোকানে বচসা, বোমাবাজিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠলো বেলডাঙ্গা
কিছু দক্ষ গ্রামবাসী বনদপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে নেমে পড়েন কাজে। কুলতলি থানার পুলিস এসে জঙ্গল সংলগ্ন রাস্তা থেকে মানুষজনকে দূরে সরিয়ে দেয়। বনদপ্তরের কর্মীরা নাইলনের জাল দেওয়ার কাজ করতে গিয়ে বাঘের উপস্থিতি টের পান। মাইকে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্য পুলিস ঘোষণা করতে শুরু করে। তৈরি রাখা হয়েছে খাঁচা। শুক্রবার ৫ নম্বর গরানকাঠির মহিলা মৎস্যজীবী চম্পা নস্কর কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের দর্শন পান। গ্রামবাসীরা নিশ্চিন্ত হয়ে যান, বাঘ গায়েনের চক এলাকা থেকে বেরিয়ে ৫ নম্বর গরানকাঠির জঙ্গলে ঢুকেছে।
এর মধ্যেই কৈখালী থেকে খবর আসে একটি মৃত গরুকে ভক্ষণও করেছে সুন্দরবনের রাজা। ৫ নম্বর গরানকাঠির বাসিব্দা অরবিন্দ হালদার বলেন, এই প্রথম কুলতলির এই এলাকায় পর পর দুইদিন বাঘের আতঙ্ক চেপে বসেছে। এর আগে সেই ১৯৮৮ সালে ঢুকেছিল তাও এখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কেল্লার কাছে। গ্রামের কাছে জঙ্গলে বাঘ রয়েছে জেনে কয়েকশো মানুষ সকাল থেকেই নাওয়া-খাওয়া ভুলে রাস্তায় এসে ভিড় করলেও সন্ধ্যা নামার পরেই পুলিস তাঁদের সরিয়ে দেয়। গ্রামে জেনারেটর বসিয়ে আলো রেডি রাখা হচ্ছে। বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, রাতে সার্চ লাইট, আলো তৈরি রাখা হয়েছে। খাঁচাতে ছাগল টোপ হিসেবে দেওয়া হতে পারে।