কলকাতার মেয়র হিসাবে শপথ নিলেন ফিরহাদ হাকিম। কলকাতা পুরসভার ৩৯ তম মেয়র হিসাবে শপথ নিলেন ফিরহাদ হাকিম। শপথ নিয়েই ফিরহাদ বলেন, আমি জনগণের প্রধান সেবক। মঙ্গলবার তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রোটেম চেয়ারম্যান রাম পেয়ারি রাম।
এনিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য কলকাতার মহানাগরিক হিসাবে শপথ নিলেন তিনি। এদিনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল গোটা পুরভবন। পুরসভার ভিতরের লনে তৈরি করা হয়েছিল শপথগ্রহণ মঞ্চ। মেয়রের পরই পুরসভার চেয়ারপার্সন হিসাবে শপথ নেন মালা রায়। এর পর একে একে মেয়র পারিষদদের ১৩ জন সদস্যও এদিন শপথ নেন। ডেপুটি মেয়র হয়েছেন অতীন ঘোষ।
এদিনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সাংসদ ডা: শান্তনু সেন, দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, বিধায়ক তাপস রায়, বিবেক গুপ্তা ও স্বর্ণকমল সাহা, চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন, ডা: কুণাল সরকার সহ সমাজের বিশিষ্টরা। কলকাতার মেয়র হিসাবে শপথ গ্রহণের পরই ফিরহাদ হাকিম জানান ‘মমতা ব্যনার্জি অনেক প্রত্যাশা করে এই বোর্ডকে মনোনীত করেছেন।
তাই আমরা সকল কাউন্সিলরদের কাছেই একটাই শপথ থাকবে যে মানুষকে সেবার দেওয়ার যে অঙ্গীকার মমতা ব্যনার্জি নিয়েছেন, কলকাতাকে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শহর করে গড়ে তোলা-সেগুলিকে পূরণ করতে হবে। নতুন মেয়রের অভিমত মানুষকে এমন পরষেবা দিতে হবে যে মানুষ চিরদিন মনে রাখবে। আমরা সকলেই সেবক। সেখানে আমি হচ্ছি প্রধান সেবক। তাই আমরা সকলে মিলে একসাথে কলকাতার মানুষের সেবা করবো।
তিনি আরও বলেন ‘মানুষ যখনই ডাকবে তখনই যদি তাকে পায়, সেই কাউন্সিলর মানুষের বিচারে শ্রেষ্ঠ কাউন্সলর। তাই আমরা সকলে যদি দায়িত্ব নিয়ে নিজের নিজের ওয়ার্ডে কাজ করি, তবে কলকাতা এমনিতেই ভাল হয়ে উঠবে। এদিকে নতুন মেয়র, ডেপুটি মেয়র, চেয়ারপার্সন ও মেয়র পারিষদদের ঘরে নামফলক বসানো হয়েছে। নতুন মেয়রের অফিসঘরও নতুন করে সাজানো হয়েছে। মেঝেতে বসানো হয় নতুন কার্পেট ও দেওয়ালে নতুন ওয়াল পেপার। বদল আনা হয়েছে আলোকসজ্জাতেও। মেয়রের ঘরের টেবিল-চেয়ার সবকিছুতেই নতুন করে পালিশ করা হয়েছে। সেই সাথে মেয়র পারিষদদের অফিসঘরগুলিকেও নতুন করে সাজানো হয়েছে।
গত ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (পুরসভা) এর ১৪৪ টি ওয়ার্ডে ভোট গ্রহণ হয়। সেই ভোট গণনায় ১৩৪ টি ওয়ার্ডে জয়ী হয় তৃণমূল, যার মধ্যে ৮২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন ফিরহাদ হাকিম। বিরোধী দল বিজেপি জয়ী হয় ৩ টি ওয়ার্ডে, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস ২ টি করে এবং ৩ টি ওয়ার্ডে জয়ী হয় স্বতন্ত্র দলের প্রার্থীরা। সেক্ষেত্রে টানা তিনবার কলকাতা পুরসভা নিজেদের দখলে রাখলো তৃণমূল। যদিও এবারের পুরভোটে ফিরহাদকে প্রার্থী নাও করা হতে পারে বলে জল্পনা ছড়িয়েছিল। তার কারণ সম্প্রতি দলে এক ব্যক্তি, এক পদ নীতির ঘোষনা দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যনার্জি।
আর ও পড়ুন বিজেপি নেতা নেত্রীদের মারধরে অভিযুক্ত সকলকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ
কিন্তু প্রার্থীতালিকা ঘোষনার দিন ফিরহাদের নাম ঘোষনা করে তার ওপর আস্থা রাখেন দলনেত্রী মমতা ব্যনার্জি। সেই আস্থার মর্যাদা দিয়েই ৮২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৪ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন ফিরহাদ। ফিরহাদের সাথেই কলকাতার ৬ বিধায়ক ও ১ সাংসদকে প্রার্থী করা হয়েছিল এবং তাদের প্রত্যেকেই নিজের ওয়ার্ডে জয়ী হন। তবে ফিরহাদ হাকিম ছাড়াও কলকাতার মেয়র পদের দৌড়ে ছিলেন অতীন ঘোষ, দেবাশিস কুমারের মতো অভিজ্ঞ নেতা ও বিধায়করাও। কিন্তু পুরভোটে জয়ী কাউন্সিলরদের বৈঠকে পুরসভার দলনেতা হিসাবে রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদের নাম প্রস্তাব করেন মমতা। বাকীরা তাতে সম্মতিও জানান।
তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও কলকাতা মেয়রের পদে দায়িত্ব সামলেছেন ফিরহাদ। রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে একাধিক টানাপোড়েন ও বিতর্কের কারণে ২০১৮ সালে কলকাতার সেই সময়কার মেয়র শোভন চ্যাটার্জি যখন মেয়র পদ ছেড়ে দেন, সেসময় কিছুটা আকস্মিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গের ততকালীন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের হাতে মেয়রের দায়িত্বভার তুলে দেন মমতা ব্যনার্জি। সেক্ষেত্রে ফিরহাদ-ই কোন মুসলিম ধর্মাবলম্বী নেতা যিনি ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর কলকাতার মেয়র পদে বসেন। ২০২০ সালের মে মাসে ফিরহাদ হাকিমের মেয়াদ শেষ হয়।