হাওড়া শহরজুড়ে একে একে পুকুর ভরাট করে বড় বড় বাড়ি তৈরি হচ্ছে । জমির মাফিয়াদের নজরে সরকারি জমি । পৌর প্রতিনিধি না থাকায় রমরমিয়ে চলছে কাজ । বিগত কয়েক বছর ধরে শহরজুড়ে একে একে পুকুর ভরাট করে বড় বড় বাড়ি তৈরি হচ্ছে। বাদ পড়ছে না জল জমি । আর এবারে সরকারের খাস জমি দখলের অভিযোগ উটল । প্রকাশে এমন আইন বিরুদ্ধ কাজ হতে দেখলেও প্রশাসনের দিক থেকে পদক্ষেপ দূরঅস্ৎ, কোনও নজরদারিও দেখতে পান না এলাকাবাসী।
ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দাসনগর থানার অন্তর্গত কাশিপুর এলাকায় । স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পৌর-প্রশাসনের একাংশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতেই এক শ্রেণির অসাধু প্রোমোটারেরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। আর তাদের ভয়ে বাসিন্দাদের অনেকেই মুখ খোলার সাহস পান না। কিন্তু পুকুর ভরাট করে বাড়ি তৈরির এই কারবারের এখন এতটাই রমরমা যে, অদূর ভবিষ্যতে হাওড়া শহরে একটি জলাজমি ও সরকারের খাস জমি বেঁচে থাকবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান এলাকাবাসীরা।
আগামীদিনে জলাজমিহীন হাওড়া শহর ঠিক কতটা বিপদের সামনে দাঁড়াতে চলেছে, তা নিয়ে পৌর প্রশাসনের কারও মাথা ব্যাথা নেই বলে এলাকাবাসীদের অধিকাংশের অভিযোগ। ওই এলাকার এক বাসিন্দা অরবিন্দ কয়াল অভিযোগ করে বলেন তিনি ওই এলাকায় পাঁচ সাত বছর রয়েছেন। বারবার কাজ বন্ধ হয় আবার তা চালু হয়। একবারই পুলিশ এসে কাজ বন্ধ করেছিল। তার পর থেকে আর কখনো পুলিশকে দেখতে পান নি। লোক মুখে শুনেছেন সরকারি জমি এটা।
কিন্তু সেই জমি কে কিনেছে তা তার জানা নেই বলেই দাবি করেন তিনি। অপর এক স্থানীয় বাসিন্দা নারণ সোম দাবি করেন তিনি ছোটবেলা থেকে শুনে আসছিলেন এখানে একটি বৃদ্ধাশ্রম হবে। কিন্তু হঠাৎ করেই এই জলাজমি ভরাট হতে শুরু করে। তিনি আরো বলেন এখন পৌর প্রতিনিধি নেই। নজরদারি করার কেউ নেই। তারই সুযোগে এই কাজ চলছে। কখনো প্রকাশ্য দিবালোকে কখনো বা রাতের অন্ধকারে এই কাজ চলে। এভাবে পরিকল্পনাহীন ভাবে জলা জমি ভরাট করলে আগামীদিনে আরো জল জমার সমস্যা বাড়বে। তিনি আরো দাবি করেন এই জমি সরকারের খাস জমি বলেই চিহ্নিত।
তিনি চান এই জমিতে বৃদ্ধাশ্রম তৈরি হোক। এতে এলাকার পরিবেশ ভালো হবে। যদিও এলাকার বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখার জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী দেশের কোনও জলা জমি ভরাট করে দেওয়া নিষিদ্ধ। সেখানে হাওড়ার দাসনগরের জলাজমি ভরাট করে বড় বড় বাড়ি তৈরি হয়ে যাচ্ছে! এতে পরিবেশের উপর বড় আঘাত হানা হচ্ছে বলেই পরিবেশবিদদের মত। যদিও পৌরনিগম সূত্রে খবর ওই এলাকার সরকারি খাস জমি ভরাট করে বাড়ি তৈরির কোনো অনুমোদন দেওয়া হয় নি পৌরনিগমের তরফে।
স্বভাবতই তাই প্রশ্ন উঠছে, ‘অনুমতি’ না দিলেও ওই সব তথাকথিত বেআইনি বাড়িগুলির জন্য পৌরনিগম পৌর পরিষেবার জোগান কেন দিচ্ছে? দেখা যাচ্ছে, পুকুর বা জলাজমি বুঝিয়ে যে সব বসতবাড়ি তৈরি হচ্ছে, তার পাশে পৌরনিগম দিব্যি ব্যবহারের কংক্রিটের রাস্তা তৈরি করে দিচ্ছে। জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হয়। এমনকী, সহজেই পাওয়া যাচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগও। অনুমোদন না মেলার পরেও ওই সব বেআইনি বাড়িতে কীভাবে যাবতীয় পৌর পরিষেবা পেয়ে যাচ্ছে, তার কোনও সদুত্তর মিলছে না।
এমনকী, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকেও এ ব্যাপারে কোনও বাধা দেওয়া হয়নি বলেই স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন। অথচ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের পরিসংখ্যানই বলছে পৌরনিগমের তকমা পাওয়া এই শহরের চারিদিকে যে অজস্ব ছোটবড় পুকুর ও জলাজমি ছিল, সেই সংখ্যাটি কমতে কমতে এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। এলাকাবাসীর পর্যবেক্ষণ, যে গুটিকয়েক জলাজমি এখনও বেঁচে রয়েছে, তার অধিকাংশই জমিদালালদের কবজায় কিংবা নজরে। বিভিন্ন উপায়ে সেগুলি ভরাট করা চলছে।
আর ও পড়ুন বিপর্যয় কাটিয়ে ফের শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত যাত্রা শুরু করলো টয় ট্রেন
ইতিমধ্যেই অনেক ছোট বড় জলাশয় বুজিয়ে দেওয়া এবং সরকারের খাস জমি কেনাবেচা হয়ে গেছে। তবে, এখনও কিছু রয়ে গেছে, যেগুলি পৌরনিগমের নজরদারিতে সংস্কার করলে এলাকার মানুষ উপকৃত হতেন। কিন্তু তা না করে বরং জলা জমি ভরাটকারীদেরই প্রচ্ছন্ন মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পৌরনিগমের বিরুদ্ধে।
অবশ্য এ বিষয় নিয়ে হাওড়া পুরসভা প্রশাসক মন্ডলীর প্রধান ডক্টর সুজয় চক্রবর্তী জানান, জলাজমির কোনভাবেই ভরাট করা যাবে না । তবে উক্ত জমিটি পুরসভার কিনা তা খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি । আর গোটা বিষয় নিয়ে সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি । বিজেপির যুব সভাপতি ওম প্রকাশ সিং এর বক্তব্য সরকার সব জানে। এ সরকার কাটমানি সরকার । সরকারের দুটোই প্রকল্প টোটো আর টুলো । দুদিন পরে নতুন প্রকল্প আসবে জলা জমি ভরাট প্রকল্প ।