আতঙ্কে দিন কাটছে হাওড়ার অনেক ডাক্তারি পড়ুয়াদের পরিবার । হাওড়া ইছাপুরের বাসিন্দা দেবারতি দাস। ডাক্তারি পড়তে ইউক্রেনে গিয়েছে গত ২০২০ সালে। এদিকে এই মুহূর্তে সে দেশে যুদ্ধের যা পরিস্থিতি তাতে মেয়ে কী ভেবে দেশে ফিরবে তা ভেবেই আতঙ্কে দিন কাটছে দেবারতির পরিবারের। উদ্বিগ্ন পরিবার চাইছেন দ্রুত দেশে ফিরে আসুক মেয়ে সহ আটকে থাকা ভারতীয় সব পড়ুয়ারাই। সরকারের কাছে কাতর আবেদন জানাচ্ছেন পরিবার।
জানা গেছে, ইউক্রেনের খারকিভে আটকে আছেন দেবারতিরা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে মেডিকেল নিয়ে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ইউক্রেন রওনা দিয়েছিলেন তিনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের খারকিভের ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটি ৫ নম্বর হোস্টেলে এই মুহূর্তে দেবারতি ও তার সহপাঠীরা রয়েছেন। পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওখানে প্রায় চার হাজার ভারতীয় মেডিকেল স্টুডেন্টরা রয়েছেন। দেবারতির মেয়ে নন্দলাল দাস জানান, মেয়ে দেবারতি দাস ইউক্রেনের খারকিভে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত মেয়ে ভালো আছে। তার সঙ্গে আরও দুইশো থেকে আড়াইশো বন্ধুবান্ধব আটকে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা নিয়েছে। ৯ তলা হোস্টেল বিল্ডিংয়ের নিচে বাঙ্কারে তারা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সারাদিন প্রথমে সামান্য শ্বাসকষ্ট হয়েছিল। এখন ভালো আছে তারা। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিল দেবারতি। বৃহস্পতিবার ভিডিও কলে সে যোগাযোগ করেছে। আগে থেকে চেষ্টা করা হয়েছিল তাকে ফিরিয়ে আনার। কিন্তু টিকিটের মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধি এবং পরবর্তীকালে বিমান পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মেয়েকে আর ইউক্রেন থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ কেউ খাবার জল, চা পৌঁছে দিচ্ছে। দু’জন হোস্টেল আ্যাটেনডেন্ট সঙ্গে আছেন। সরকারের কাছে আবেদন প্রথম বছরের ডাক্তারি পাশ করে গিয়েছে। দ্বিতীয় বছরের পরীক্ষা সামনে। এই অবস্থায় মেয়েকে ভারতের যে কোনও মেডিকেল কলেজে যদি ভর্তি করা যায় সেই চিন্তায় রয়েছেন। ওখানে প্রায় ৪ হাজার মেডিকেল স্টুডেন্ট আছেন।
আর ও পড়ুন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের বিমানঘাঁটির দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আবেদন মেয়েকে ফিরিয়ে আনার জন্য যাতে সবরকম সহায়তা করেন এবং তার পাশাপাশি যেন মেডিকেল কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। এদিকে, ইছাপুরের দেবারতি দাসের পাশাপাশি হাওড়ার বেলুড়ের পেয়ারী মোহন মুখার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দা অন্বেষা দাস, বালির বাসিন্দা সঞ্চিতা চ্যাটার্জি, সালকিয়ার শারদীয়া থেকে শুরু করে আন্দুলের ঋষভ প্রমুখ আরও অনেকের কথা জানা গিয়েছে যারা ইউক্রেনে পড়তে গিয়েছিলেন। অন্বেষা, সঞ্চিতারা টারনোপিল ন্যাশনাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ছাত্রী বলে জানা গেছে। সেখানে পড়তে গিয়ে তাঁরা আটকে গিয়েছেন। এই ছাত্রীরা ফেরার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মাত্র তিনটি বিমান দেওয়া হয়েছিল।
সেই কারণে তাঁদের জায়গা হয়নি। এর পাশাপাশি অনেক বেশি ভাড়া ছিল। কষ্ট করে টাকা সংগ্রহ করা হলেও কারও মার্চের ৮ বা ১৩ তারিখে টিকিট পাওয়া গিয়েছে। ইতিমধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। ইউক্রেনের আকাশে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বিমান চলাচল। দেশজুড়ে সেখানে জরুরি অবস্থা। ঘনঘন সাইরেন বাজছে। দোকানপাট বন্ধ। জিনিসপত্র বাজারে নেই। এটিএমে টাকা নেই। আতঙ্কের মধ্যে সাধারণ মানুষজন। রাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোকজনদের বাঙ্কারে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখান থেকে বেরোতে তারা ভয় পাচ্ছেন মানুষজন। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটছে তাদের দিন। সকলেই এখন দেশে ফেরার অপেক্ষায়।