যে কারণে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির জয়। দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বড় জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন বিজেপি। এ জয়ের পেছনে সম্ভব্য কিছু কারণ সামনে এসেছে। ‘উত্তরপ্রদেশ আবারও যোগীর’ শিরোনামে বলা হয়, সেখানে নির্বাচনের ফলাফলের প্রবণতা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট- উত্তরপ্রদেশে লড়াই হয়েছে সরাসরি বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টির মধ্যে। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কংগ্রেস এবং মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি উত্তরপ্রদেশে এ বিধানসভা নির্বাচনে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।
তারা নিতান্তই শক্তিহীন হয়ে পড়েছে। উত্তরপ্রদেশের ইতিহাসে সাধারণত কেউ পরপর দুইবার মুখ্যমন্ত্রী হন না। যোগী হলে সম্ভবত দ্বিতীয়বার এ ঘটনা ঘটবে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশে এবার যোগীই ছিলেন বিজেপির মুখ। মোদী নন। তাকে সামনে রেখেই ভোটে গিয়েছিল বিজেপি। আর অনিবার্যভাবে যোগী প্রচারপর্বে হিন্দুত্বের প্রসঙ্গ তুলেছেন। বিভাজনের চেষ্টা করেছেন। মন্দির-মসজিদ প্রসঙ্গ তুলেছেন, সেই সঙ্গে ৮০-২০-র কাহিনি শুনিয়েছেন।
৮০ শতাংশ হিন্দু ও ২০ শতাংশ মুসলিমকে বিভাজনের কাহিনি। তিনি বারবার অযোধ্যায় রামমন্দির, মথুরায় কৃষ্ণজন্মভূমি ও কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের করিডোরকে প্রচারে সামনে এনেছেন। ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, যোগীর ৮০-২০-এর কৌশল সফল হয়েছে। বিজেপিকে পঞ্চাশটির মতো আসন হারাতে হলেও তারা সমাজবাদীর পার্টির থেকে প্রায় দেড়শ আসনে এগিয়ে আছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশে পরপর দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর যোগীর রাজনৈতিক উচ্চতা বাড়তে বাধ্য।
সারা ভারতেই তিনি হিন্দুত্বের মুখ হিসেবে আরও অনেক সামনে আসবেন বলে বিজেপি নেতারাই মনে করছেন। স্বরাজ পার্টির নেতা ও সাবেক ভোটবিশেষজ্ঞ যোগেন্দ্র যাদব বলেন, সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক বিষয় হলো, কিছুদিন আগেই করোনাকালে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন। অক্সিজেন না পেয়ে মারা গেছেন। গঙ্গা দিয়ে একের পর এক শব ভেসে এসেছে। তারপরও মানুষ মনে করছে, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে যোগী ভালো কাজ করছেন এবং তারই থাকা উচিত।
উত্তরপ্রদেশ ভোটপর্ব ঘুরে দেখার সময় মনে হয়েছে, দুটি বিষয় বিজেপিকে সাহায্য করছে। দরিদ্রদের বিনা পয়সায় প্রতি মাসে চাল, গম, তেল, ছোলা, নুন দেয়া এবং স্থানীয় স্তরে গুণ্ডামি বন্ধ করা। তাতে পুলিশরাজের অভিযোগ উঠলেও সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে ছিলেন। অখিলেশের ভোট পাওয়ার হার গতবারের তুলনায় অনেক বেড়েছে। গতবার তার দল পেয়েছিল প্রায় ২২ শতাংশ ভোট। এবার তাদের ভোট পাওয়ার হার গিয়ে পৌঁছেছে ৩৪ শতাংশে।
বিজেপিও তাদের ভোটের হার চার শতাংশ বাড়াতে পেরেছে। তারা এবার প্রায় ৪৫ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছে। ভোটপ্রাপ্তির হারে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মায়াবতীর দল। তারা গতবার ভোটের হারে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। এবার তাদের ভোট পাওয়ার হার অর্ধেক হয়েছে। এ হিসাব থেকেই স্পষ্ট, গতবারের তুলনায় অখিলেশ অনেক ভালো ফল করেছেন। কিন্তু বিজেপির কাছাকাছি তিনি পৌঁছতে পারেননি।
উত্তরপ্রদেশের এই ফলাফল বিজেপিকে নিঃসন্দেহে স্বস্তি দেবে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে হার, করোনাকালের কঠিন সময়, অর্থনীতির বেহাল অবস্থার পর উত্তরপ্রদেশ হাতছাড়া হলে সেটা হতো মোদি-শাহের কাছে বড় ধাক্কা। কিন্তু কঠিন সময়ে এ জয়ের ফলে তারা রাজনৈতিক দিক থেকে আবার অন্যদের অনেক পিছনে ফেলে দেবেন।