দোলের বিশেষ মিষ্টি মঠের উৎস সন্ধানে

দোলের বিশেষ মিষ্টি মঠের উৎস সন্ধানে

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

দোলের বিশেষ মিষ্টি মঠের উৎস সন্ধানে। মিষ্টি টি কিন্তু বাঙালি নয়। তবু বাঙালির কাছেই পেয়েছে ভালবাসা।কয়েক দশক আগে অবধিও রংভরা দোল যাত্রায় মিষ্টিমুখ করতেই হবে। আর এই মিষ্টিমুখের জন্য পাতে অবশ্যই থাকতে হবে মঠ ও ফুটকড়াই। কখনও বা তার সাথে সাদা মুড়কি। দেবতার পায়ে ‘আবির’ দিয়ে পরিবারের সকল বয়স্কদের পায়ে আবির মাখিয়ে শুরু হয় সনাতনী হিন্দু ধর্মের দোল যাত্রা। খেলা চলে দু’দিন ধরে। আর রঙ এই খেলার মাঝেই আত্মীয়-পরিজনদের মধ্যে গোলাপি, হলুদ, সাদা রঙের মঠ মুঠো মুঠো চালান যায় মুখে। এবার আসা যাক এই মঠ ঠিক কি সেই প্রসঙ্গে। এটি হল চিনির তৈরি উঁচু শক্ত একটি মিষ্টি।

 

সেটা মোমবাতি, পাখি-সহ বিভিন্ন আকারের আর বৈচিত্রের মঠ পাওয়া যায় দোকানে। একটি বড় থালায় প্রচুর মঠ সাজানো থাকে আর পাশে থাকে ফুটকড়াই।এটি হল কালচে ভাজা মটরের ওপর চিনির আস্তরণ। মুখে দিয়ে চিবলে কড়মড় করে আওয়াজ হয় । এই দুটো জিনিস হল বাঙালির দোলের অতি আবশ্যিক সামগ্রী। এবার এই মঠের ইতিহাসের উৎস সন্ধানে গেলে বলতে হবে মঠ বেশ সুপ্রাচীন। দোল পূর্ণিমায় রাধামাধবের প্রসাদের থালায় বাতাসা কদমার মাঝখানে সাজানো মন্দিরের চূড়ার আকারের মিষ্টিটাই হলো মঠ।কিন্তু এই মঠ মিষ্টান্নটি বাঙালির কৃষ্টি নয়। কিন্তু বাঙালি একে আপন করে নিয়েছে তার সংস্কৃতিতে।

 

মঠ হল মূলত পর্তুগিজ মিষ্টি।জানা যায়, হুগলির ব্যান্ডেল চার্চে প্রথম এই মিষ্টি প্রভু যিশুর প্রসাদী থালায় স্থান করে নেয়। পরে বাঙালি ময়রারা পরম স্নেহে মঠকে বাঙালি বানিয়ে ফেলেছেন। তাকে গোলাপি, হলুদ, লাল নানান রঙে রাঙিয়ে দোলের আঙিনায় ছেড়ে দোলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ করে ফেলেছেন। চিনির কড়া পাক দিয়ে সেই সান্দ্র তরল কাঠের ছাঁচে জমিয়ে বা ফুটো পাত্রের ভিতর দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা ফেলে এই মঠ প্রস্তুত করা হয়। এটি ৫-৬ সেন্টিমিটার উঁচু একটি শুকনো ও অত্যন্ত পরিচিত মিষ্টি।

 

আর এই বিশেষ মিষ্টি মঠ তৈরির ধারাটি আজ ও ধরে রেখেছেন হাওড়ার উনসানি শিউলি পাড়ার স্বপন মন্ডল ও তার পরিবার। নিজের বাড়িতে যত্নের সঙ্গে তারা এই মঠ বানান। এ তাদের বাপ-ঠাকুরদার ব্যবসা। একে সম্বল করেই চলছে স্বপ্নবাবুর সংসার। ১৫দিন আগে থেকে দোলের মঠ প্রস্তুতি শুরু হত অতীতে।যদিও এখন তা ৭ দিন আগেই শুরু হয়। দোলের সময়ে এই মঠের চাহিদা থাকে। সারাবছর থাকে না বলে জানান তিনি। তাই অগত্যা সংসার চালাতে দুই ধরনের বাতাসা ও সাদা মুড়কি বানান। তবে তিনি জানান, এই বছরে মঠের সেভাবে চাহিদা নেই । সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের এখন সুগার।

আর ও  পড়ুন      নন্দীগ্রাম দিবসে টুইটে ২০০৭-র ঘটনা স্মরণ করলেন মমতা

তাই এই ধরণের মিষ্টি এখন খান না অনেকেই। এখন তাই শুধু পুজোর কাজেই ব্যবহার হয় এই মঠ। এছাড়াও,মঠ প্রস্তুতকারী উনসানীর বাসিন্দা স্বপন মন্ডল বলেন,”অধিকাংশ কারীগরেরাই এখন অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। কারণ পর্যাপ্ত কাজ না থাকায় এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাই কারিগর পাওয়াটাও দুঃসাধ্য হয়ে যাচ্ছে।” তিনি আরো বলেন, “দীর্ঘ ১৮ বছর এই কাজ করছি । চিনি,গুড় দিয়েই প্রধানত তৈরি হয় মঠ। তবে ৫ জন মিলে একশো কেজি বাতাসা তৈরি করতে ৬ঘন্টা সময় লাগে। কোভিডের আগে ব্যবসা ভালো চললেও কোভিডের পর থেকে ব্যবসা মন্দার দিকেই রয়েছে। আগে ব্যবসায় অনেক লাভ হত। এখন সেই লাভ তলানিতে এসে ঠেকেছে। ”

স্বপন বাবুর কথা কে সমর্থন করে এই ব্যবসায় যুক্ত এক শ্রমিক প্রকাশ মোখান বলেন, “এখন চাহিদা সেভাবে নেই। খরিদ্দারের সংখ্যাও অনেক কম। কোভিডের পর মানুষের হাতে সেভাবে টাকা নেই তাই বিক্রির পরিমাণও কমে গেছে।”

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top