গলসির সন্তোষপুরে খুন ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অসহায় মৃতের স্ত্রী ও তাঁর পরিবার,মানুষ শূন্য গ্রাম । গলসির সন্তোষপুর গ্রামে রবিবার উৎপল ঘোষ নামে এক ব্যক্তি খুন হয়ে যাওয়ার পরদিন উত্তেজিত গ্রামবাসীদের তাণ্ডবে গোটা গ্রামজুড়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। দুটো বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি উৎপল ঘোষের খুনে অভিযুক্ত প্রতিবেশী মনোজ ঘোষের একটি মোটর সাইকেল এবং তাঁর কাকা হারাধন ঘোষের দুটি ট্রাক্টর, একটি চারচাকা গাড়ি ও খড়ের পালুইয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল উত্তেজিত গ্রামবাসীরা। মুহূর্তে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল সন্তোষপুর গ্রামে। কার্যতঃ যে বাড়ি দুটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঘটনাচক্রে সেই মুহূর্তে কোন মানুষ বাড়িতে না থাকায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
উলেখ্য মৃত উৎপল ঘোষের স্ত্রী সাধনা ঘোষকে দীর্ঘদিন ধরে কটূক্তি করায় ও অশ্লীল মনোভাব দেখানোর প্রতিবাদ করায় খুন হন উৎপল ঘোষ।
তথাকথিত প্রভাবশালী হারাধন ঘোষের বাড়িতে ও তার চার চাকা গাড়ি, ট্রাকটর সহ খড়ের পালুইয়ে আগুন ধরিয়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল উত্তেজিত গ্রামবাসীরা তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই পুলিশ ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে সোমবার ৩৯জনকে এবং বুধবার আরো দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনায় আরো কারা যুক্ত ছিল জানতে পাঁচ জনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
পূর্ব বর্ধমানের গলসির লোয়া সন্তোষপুরের সাধনা ঘোষ সব হারিয়ে এখন বড় অসহায়। গত বছর করোনার সময় এক দিনে হারিয়েছিলেন নিজের বাবা তারাপদ চক্রবর্তী ও দাদু গুরুপদ চক্রবর্তীকে। এবার হারালেন স্বামী উৎপল ঘোষকে। সব হারিয়ে তিনি এখন বড় একা। বাড়িতে তার ছয় বছরের ছেলে অরিন ঘোষ আর বয়স্ক শ্বশুর শ্বাশুড়ি। আজ তাদের পরিবারের ক্ষৌরকাজে কিন্তু পুরোহিত নাপিত কেউই আসতে চাইছেনা গ্রামে। এমনকি তাদের বাড়িতে কাজ করাও লোকজন পাওয়া দুস্কর হয়ে পরেছে।
এদিকে তার স্বামী খুনের ঘটনায় তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও শোকাচ্ছন্ন রয়েছে পরিবার। মূলত অভিযুক্ত মনোজ ঘোষ ও তার কাকাদের বাড়ি ও গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে শুরু হয় পুলিশি ধরপাকড়। তখন থেকেই পুরুষ শুন্য রয়েছে গ্রাম। গ্রামে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ। মৃতের পরিবারের লোকেরা জানান, বাড়ির কাছেই পুকুর পাড়ে একটি তাল গাছের আড়ালে কুড়ুল হাতে লুকিয়ে ছিল মনোজ। কাছে আসতেই উৎপলের কানের পাশে গলার কাছে কুড়ুল দিয়ে কোপা মারলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যায় উৎপল।
আর ও পড়ুন টাকি রোডে নজরে সিসিটিভি, নাকা চেকিংয়ে গাঁজা ফেনসিডিল আটক
এদিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায় গ্রাম খাঁ খাঁ করছে। রাস্তায় জনপ্রানী দেখা নেই। কবে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেই আশায় তাকিয়ে রয়েছে উৎপল স্ত্রীর পরিবার গ্রামের মানুষরা।
তাঁরা চাইছেন এই ঘটনায় সিবি আই তদন্ত হোক।
মৃত উৎপলের স্ত্রী সাধনা ঘোষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,মিডিয়া ইতিমধ্যে রামপুরহাট বগটুই গ্রামের ঘটনায় রাজনৈতিক রং লাগাচ্ছে। এছাড়া যারা অভিযুক্ত তারা গায়ে হাওয়া দিয়ে বুক ফুলিয়ে গ্রামে রয়েছে। এটাই কি পুলিশ প্রশাসনের ন্যায় বিচার?
কার্যতঃ এই মুহূর্তে স্বামী হারা অসহায় সাধনা ঘোষ ন্যায় বিচার চাইছেন। এখন দেখার পুলিশের তদন্তে আসল তথ্যটি কি উঠে আসে সেদিকে তাকিয়ে মৃতের পরিবার ও গ্রাবাসীরা।