ভূগর্ভস্থ স্তর নেমে যাওয়ায় ফলে মিঠা জল সংকটে সুন্দরবনের মানুষ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটের সন্দেশখালির একনম্বর ব্লকে সেহারা রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬ টি মৌজাতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। চৈত্র মাসের গরম পড়তেই মিঠা জল সংকটে ভুগছেন এলাকার মানুষ । গ্রীষ্মের দাবদাহে উত্তপ্ত যখন গোটা দক্ষিণ বঙ্গ তখন সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা মিষ্টি পানীয় জল সংকট। স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে রাস্তায়, বাড়িতে চাপকল বসালেও ভুগর্ভস্থ জলস্তর হটাৎ নীচে নেমে যাওয়ায় চরম হাহাকার পানীয় জলের।
আম্ফান ও ইয়াস পরবর্তী সময়ে গ্রামে গ্রামে সামুদ্রিক নোনা জল ঢুকে থাকা পুকুর,খাল, বিল গুলি ঠিক মত সংস্কার না হওয়ায় এই বিপত্তি বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। সামুদ্রিক ঝড় জঞ্ঝা বিধ্বস্ত গ্রাম গুলিতে এখনো চাপকল থেকে ঘোলা ও নোনা জল উঠছে যা পানের অযোগ্য। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় অসহায় গ্রামবাসীরা বাধ্য হয়ে সেই নোনা ও ঘোলা জলকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গ্রাম্য কায়দায় ফিল্টার করে পান করছেন। সেই জল খেয়ে আট থেকে আশি একদিকে যেমন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অন্যদিকে পেটের নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন । কারো আবার শরীরের নানা জায়গায় চর্ম রোগ দেখা দিচ্ছে।
বিশেষ করে শিশুদের গায়ে ঘা পাঁচড়া তৈরি হচ্ছে। এইসব অঞ্চলে গরমকালে পানীয় জল সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে বিগত কয়েক বছর ধরেই। বিশেষ করে সুন্দবন জঙ্গলসংলগ্ন এই পঞ্চায়েতের ছোটসেহারা, রাধানগর, কালিনগর, বড় সেহেরা সহ একাধিক গ্রাম গরম পড়তেই জল সংকটে ভোগে। বাড়ির কাজ বন্ধ করে দিয়ে প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে গ্রামের মহিলাদের পানীয় জল আনতে হয়।
আবার কখনো বৃষ্টির জল আসলে সেটাকে ধরে রেখে সেই জল পান করতে হয়। সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যা থেকেই যায় । ইতিমধ্যে ওই এলাকায় যাদবপুর ইউনিভার্সিটির এক বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদল গিয়ে মাটির সয়েল টেস্ট করেন। জানা যায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার ফলে গরম পড়তেই ভূগর্ভস্থ জল স্তর ঠিক থাকে না। ইতিমধ্যে পঞ্চায়েত তরফ থেকে বিনামূল্যে বাড়ি বাড়ি পরিশোধিত পানীয় জল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে তবে সেটা যৎসামান্য। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
রাধানগর সেহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কালীকিংকর দাস বলেন, ইতিমধ্যে সন্দেশখালি ব্লকের এক নম্বর বিডিও সুপ্রতিম আচার্য, ব্লক জনস্বাস্থ্য কারিগরী আধিকারিক সহ একাধিক প্রশাসনিক দপ্তরে লিখিতভাবে জানানোর পরও কোনো সমাধান হয়নি।তারা জানাচ্ছেন ভূগর্ভস্থ জল ঠিকমতো নেই। যার কারণে শীতকাল ও বর্ষাকালে যদিও বা থাকে, গরম পড়তেই জল সংকট দেখা দেয়।আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত জেলা পরিষদ ও রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করবো যাতে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করে। আপাতত পানীয় জল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি, আরো বেশি যাতে দেওয়া যায় তার আমরা চেষ্টা করছি।
পাশাপাশি বলেন পঞ্চায়েতের তরফ থেকে পানীয় জলের কল গুলো সচল রয়েছে। কিন্তু ইয়াস পরবর্তী সময় জনসাস্থ কারিগরি দপ্তর থেকে এগারোটা টাইম কল বসানো হয়েছিল। সেই পরিষেবা পেত আড়াই হাজার পরিবার ।পাম্প হাউস থেকে জলের ব্যবস্থা করলেও সেগুলো সম্পূর্ণ অচল। যার কারণে গরম পড়লেই এইসব অঞ্চলে জল সংকট দেখা দেয়। আমরা পঞ্চায়েত এর তরফ থেকে পানীয় জলের সমস্যা যাতে না হয়, তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবস্থা করার চিন্তা ভাবনা করছি।