গরমে ডাবের জল দিয়ে স্নান কোচবিহারের মদনমোহনকে। গরম পড়তেই সপ্তাহে চারদিন ডাবের জল দিয়ে স্নান করানো হচ্ছে কোচবিহারের মদনমোহনকে। কোচবিহার মদনমোহন বাড়ির প্রধান পুরোহিত তথা রাজপুরোহিত হীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, প্রথা মত গরমে নিয়ম করে সপ্তাহে চার দিন ডাবের জলে স্নান করছেন রাজপরিবারের আরাধ্য মনমোহন।
পুজোর বিশেষ কোন নিয়মে পার্থক্য নেই। সকাল 9 টায় নহবতের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গে বাবা মদনমোহনের, এরপর স্নান। বৈশাখ মাসে এই সময়ে সব সময় ঝরা দেওয়া হয় বাবার মাথায়। এই ঝরাতে থাকে দুধ-মধু গঙ্গাজল। ছোট কলসির নিচে ফুটো করে তাতে লাগিয়ে দেওয়া হয় কাশিয়া, তার মাধ্যমেই টপটপ করে ধরা থেকে জল পড়ে বাবার মাথায়। স্নানের পর সাধারণভাবে অন্নভোগ এবং নৈবিদ্য দেওয়া হয়।
বছরের যে সময় যে রকম ফল পাওয়া যায় সেরকম ফল ওঠে বাবার থালায়। এই সময় নতুন আম পাওয়া যায়। এরপর বৈকালী পুজো। সেইখানে জল দেওয়া হয় বাবাকে। সেটা হলো মিষ্টি থাকে, সামান্য ফল থাকে, আর সেই সাথে তাকে মিচ্ছরি। এরপর সন্ধারতি হয়ে গেলে লুচি দুধ দিয়ে রাতের খাবার সারেন বাবা মদনমোহন।
আর ও পড়ুন ভিটেমাটিতে ফিরে এলো সাতটি পরিবার
গঠনগত দিক থেকে মদনমোহন বাড়ির এক বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। মন্দিরের ভেতর শীতের সময় গরম থাকে এবং গরমের সময় ঠান্ডা থাকে। ইংল্যান্ডের তিনজন ইঞ্জিনিয়ার এই ভবনটি তৈরি করেছেন বলে জানা যায়। দেড় ফুট মোটা দেওয়াল এবং মাঝে রয়েছে হওয়া চলাচল করার জায়গা। যার ফলে ভেতরের গরম বা বাইরের ঠান্ডা কোনটাই দেওয়াল ভেদ করে ঢুকতে পারে না।
সেই কারণে মদনমোহনের প্রযুক্তিগত শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মেশিন এর প্রয়োজন হয় না। এই সময় সুতির হালকা বসন পড়ানো হয় বাবা কে। রাতে শোয়ার ক্ষেত্রে মশারি বাধ্যতামূলক। কোনরকম আলাদা উপকরণ ব্যবহার হয় না। বাবা মদনমোহন যেন ঠিক আমাদের ঘরের একজন। কোচবিহারের প্রবীণ নাগরিকদের চলতি কোথায় রয়েছে, মদনমোহন গরম সহ্য করতে পারেন না বলেই, দুদিন গরম পড়লে তিনদিনের দিন বৃষ্টি হয় কোচবিহারে। বহুলাংশে এই কথাটি সত্য। কোচবিহারের সামান্য গরম পড়লেই বৃষ্টি অবধারিত। আজব লীলা খেলা। মহিমা বাবাই জানেন।