বাঙালির তালপাখার ইতিকথা

বাঙালির তালপাখার ইতিকথা

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

বাঙালির তালপাখার ইতিকথা। হাতপাখার বিবর্তনের ইতিহাস আজ থেকে প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বে। জানা গিয়েছে প্রাচীন ভারতবর্ষের মত, গ্রিক রোমানদের যুগেও এই হাতপাখার প্রচলন ছিল। এ বিষয়ে গবেষণালব্ধ তথ্য পাওয়া গিয়েছে যে প্রথম দিকটায় পাখাগুলো ছিল একটা সম্পূর্ণ অংশ।কারণ, আধুনিক যুগের ভাঁজ বা ফোল্ডিং পাখা আরো অনেক পরে এসেছে এবং তখন পাখা বেশ দুর্মূল্যই ছিল।

 

মণিমুক্তো ও হাতির দাঁত ও ব্যবহার করা হত।প্রসঙ্গত,শীত শেষ হতেই তালপাতার পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়।বর্তমানে বাংলায় তালগাছের পাতা কাটা, তাকে জলে ডুবিয়ে রেখে জাঁক দিয়ে পাতাকে সোজা করে সেই পাতাকে সাইজ করে কেটে, সরু লম্বা কাঠি দিয়ে বেঁধে, রং করা ইত্যাদি নানা পর্বের মধ্য দিয়ে পাখা সম্পূর্ন রকম তৈরী হলেই তবে তার বিপণনের ব্যবস্থা করা হয়।

 

এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, অতীতে সোনা-রুপোর পাত বসানো হাতপাখাগুলোয় নিপুণ হাতে শিল্পীরা আঁকতেন সেই সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক চেতনা কিংবা ধর্মীয় নানা কাহিনী, ফুল লতাপাতাসহ সমসাময়িক নানান বিষয়াবলী। কিন্তু আঠারো শতকের গোড়া থেকে আবার ইউরোপে হাতপাখা তৈরি শুরু হয়। তবুও চীন থেকে আসা পাখার আবেদন তখনও সবচেয়ে বেশী ছিল।

 

লন্ডনের গ্রিনউইচের এই মিউজিয়ামের প্রদর্শনীতে যে পাখাগুলো স্থান পেয়েছে তার ঐতিহাসিক মূল্যও প্রচুর। হেলেন অফ ট্রয়, আইভরি পার্ল ফন্টেজ, ট্রাইফোল্ড প্রভৃতি ৩,৫০০ এর কাছাকাছি দুষ্প্রাপ্য সব হাতপাখা রয়েছে এই জাদুঘরের সংগ্রহশালায়।আবার,এই ইংরেজ আমলে এমন কি ইংরেজ আমলের পরেও জজ-ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে, রেল পোস্ট অফিসে ধরনের দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকদের জন্য সরকারি খরচে নিযুক্ত থাকতেন আর্দালি, যাদের একমাত্র কাজ ছিল বড় বড় পাখা দিয়ে বাতাস করা।

 

তার পরবর্তীকালে দড়ি দিয়ে টেনেও বাতাস করা হত।কিন্তু, গ্রাম বাংলায় হাত পাখার কদর বর্তমানেও কমে নি। গ্রামবাংলার সৌন্দর্যের দিক থেকে সবচেয়ে সুন্দর পাখা হল রঙিন সুতোর ‘নকশি পাখা’। নকশিকাঁথার মতোই এ পাখা।তবে পাখার জমিন যেহেতু ছোট, সেহেতু সেখানে কারুকাজের সুযোগও কম হয় তাই সুতো দিয়েই পাখার গায়ে পাখি, ফুল, লতা-পাতা নানান শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তোলেন বাড়ির মহিলারা।

 

কত রকমের পাখা সেই সময় বাড়িতে পাওয়া যেত যেমন,কাপড়ের পাখা, বাঁশের চাটাইয়ের রঙিন পাখা, তালপাতার পাখা, ভাজ পাখা, চায়না পাখা, ঘোরানো পাখা ইত্যাদি। ইলেকট্রিক পাখা আসার পর বাংলায় জামাইষষ্ঠীতে মাঙ্গলিক হিসেবে ব্যবহার করা হতো। যদিও প্লাস্টিক হাতপাখার দাপটে এখন তা লুপ্তপ্রায়। তবে, জানা গিয়েছে স্বল্প হলেও তালপাখার চাহিদা রয়েছে আজও‌। এ রকমই এক তাল পাখা ব্যবসায়ী উত্তর ২৪ পরগনার বজ বজ থেকে ব্যবসায়িক কারণে নদীয়ায় আগত যিনি প্রায় ১০-১২ বছর ধরে নিয়মিত সারাবছরই নদীয়ার বিভিন্ন প্রান্তে হাতপাখা পাইকারি বিক্রি করে থাকেন বলে জানিয়েছেন।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top