Deprecated: version_compare(): Passing null to parameter #2 ($version2) of type string is deprecated in /home/u517603494/domains/shinetv.in/public_html/wp-content/plugins/elementor/core/experiments/manager.php on line 170
সীতাকুণ্ডে দীর্ঘ সময় ধরে আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ 'হাইড্রো...

সীতাকুণ্ডে দীর্ঘ সময় ধরে আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’

সীতাকুণ্ডে দীর্ঘ সময় ধরে আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

সীতাকুণ্ডে দীর্ঘ সময় ধরে আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’। শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টা। ফেসবুকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে করা এক ফেসবুক লাইভে বঙ্গোপসাগরের উত্তর উপকূলে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ী ইউনিয়নে স্মার্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা চাক্ষুষ করলো পৃথিবী। আগুন নেভাতে কনটেইনার ডিপোতে স্থানীয়রাসহ কর্মীদের অনেকেই যান। অনেকে আবার ঘটনাটির লাইভ অথবা ভিডিওধারণ করতে থাকেন। তেমনই একটি লাইভে রাত ১০টার দিকে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা যায়।

 

সীতাকুণ্ডের বিস্তৃত এলাকার পাশাপাশি হাটহাজারী, রাউজান ও মিরসরাইয়ের অনেক এলাকা কেঁপে ওঠে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে মাটি ছেড়ে উপরে উঠে যায় কনটেইনারসহ নানা পণ্য। আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বিশাল কনটেইনার ডিপোর পাশাপাশি পাশের দু’টি বাড়িতেও আগুনের বিস্তার ঘটে। কয়েক কিলোমিটার দূরের ভবনে কাঁচ ভেঙে যায় শকওয়েভের ধাক্কায়। এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি সর্বনাশা আগুন। মারা গেছেন ফায়ার সার্ভিসের নয় কর্মীসহ ৪১ জন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। দীর্ঘ সময় ধরে এ আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ হিসেবে ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্ঘটনার সময় ডিপোটিতে চার হাজারের অধিক কন্টেইনার ছিল।

 

এর মধ্যে কোনটিতে রাসায়নিক বা ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’ আছে তা নিশ্চিত না হওয়ায় কাজ করতে হচ্ছে সতর্কতার সঙ্গে। এতে কিছুটা সময় লাগছে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে। তাছাড়া যেসব কন্টেইনারে আগুন লাগেনি সেগুলো আলাদা করা হচ্ছে। যাতে আগুন লাগা কন্টেইনার থেকে হিটের মাধ্যমে এসব কন্টেইনারে আগুন ছড়িয়ে না পড়ে। এক্ষেত্রে কন্টেইনারগুলো আলাদা করা হচ্ছে মুভার দিয়ে। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ সহকারী পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী জানান, বিএম ডিপোর আগুন এখনও নেভেনি। আমাদের টিম কাজ করছে। একটি কনটেইনার নামাতে সেটিং করতে অনেক সময় লেগে যায়।

 

নামানোর পরে আগুনের তাপের কারণে দরজা খোলা যায় না। দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দরজার লোহা বড় হয়ে গেছে। তখন দরজাকে কাটতে হয়। স্টিলের দরজা কাটতেও অনেক সময় লেগে যায়। এরপর এগুলোতে পানি দিয়ে আগুন নেভাতে হয়। তিনি বলেন, ভেতরে আরও ১৫টি কনটেইনার আছে যেগুলো থেকে ধোঁয়া ও মাঝে মধ্যে আগুন দেখা যাচ্ছে। সারাদিন তিনটা কনটেইনার নিরাপদ করে স্থানান্তরিত করা যাচ্ছে। এখন ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট শিফট ভাগ করে কাজ করছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে ছড়িয়ে আছে আগুনে পোড়া ধ্বংসাবশেষ। কোথাও পুড়ে যাওয়া পোশাক, আবার কোথাও বিস্ফোরিত হওয়া বিভিন্ন রাসায়নিকের প্লাস্টিকের জার।

 

বিস্ফোরণের পর লোহার টুকরা, কনটেইনার এবং কাভার্ড ভ্যানের ধ্বংসাবশেষ ছিটিয়ে ছড়িয়ে পড়ে আছে। ডিপোর ভেতরে ৬৫০ মিটার দীর্ঘ একটি আধাপাকা টিনশেড ভবন ছিল। সেটিও ধ্বংস হয়ে পড়ে আছে। সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ ব্রিগেডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম বলেন, আপনারা অনেক ধোঁয়া দেখছেন। কন্টেইনারে কাপড় ছিল, সেগুলো কন্ট্রোলে আসার পর পানি দেয়ার পর ধোঁয়া বেরুচ্ছে। জানা যায়, বিএম কন্টেনার ডিপোতে ঢাকা-চট্টগ্রামের ২৮ পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ১ কোটি ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫৯৬ ডলারের রপ্তানি পণ্যের থাকার তালিকা তৈরি করেছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

 

বিজিএমইএর কর্মকর্তারা বলছেন, তালিকাটা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। এখনো ক্ষতিগ্রস্থ অনেক পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হিসেব পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এখন পর্যন্ত যে হিসেব পেয়েছি সেই মতে বিএম ডিপোতে ২৮টি পোশাক কারখানার ১ কোটি ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫৯৬ ডলারের রপ্তানি পণ্য ছিল। আমরা সবগুলো পোশাক কারখানা থেকে হিসেব পাওয়ার পরে মোট ক্ষতির পরিমাণ জানতে পারবো। বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের পরিচয় শনাক্তে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

 

গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি বিভাগের সামনে নির্ধারিত বুথে এসব নমুনা সংগ্রহ করে সংস্থাটির ফরেনসিক বিভাগ। এতে নিহতদের স্বজনরা ডিএনএ প্রদান করেন। একদিনে ২১ জন মরদেহের বিপরীতে ৩৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি। অগ্নিকাণ্ড এবং বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে ভর্তি প্রায় ৫৮ শতাংশ রোগীর চোখের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে একজনের চোখ নষ্টও হয়ে গেছে। গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়ায় অগ্নিদগ্ধ রোগীদের ১৫ জনকে স্থানান্তর করা হয়েছে চক্ষু বিভাগে। চিকিৎসকরা বলছেন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কারণে চোখ-মুখ জ্বালাপোড়া করে ফুলে যাবে।

 

এতে করে চোখের ক্ষতি বেশি হবে। চোখ জ্বলবে এবং লাল হয়ে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে চোখের দৃষ্টি শক্তিও কমে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের পেছনে ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’ নামক দাহ্য রাসায়নিকের মজুদকে দুষলেও ডিপো কর্তৃপক্ষ এখন সেটাকে নাশকতা বলে দাবি করছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে এসে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, ডিপোতে আট থেকে নয়শ’ কনটেইনার ছিল। কোনোটাই বিস্ফোরিত হয়নি। একটা কনটেইনারে কেন বিস্ফোরণ ঘটেছে। এখানে নাশকতার বিষয়টি স্পষ্ট। তিনি বলেন, আমাদের ডিপো থেকে কোনও কনটেইনার বের করতে কিংবা প্রবেশ করাতে কাস্টমসের অনুমতি নিতে হয়।

 

এখানে যদি কোনও বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ থেকে থাকে তা কাস্টমস কর্মকর্তাদের জানার কথা। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায়, বিএম ডিপোর একই মালিকের আরেক প্রতিষ্ঠান আল রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্সই ৩৩টি কনটেইনারে করে দাহ্য কেমিক্যাল ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’ ডিপোতে মজুদ করেছিল। সেখান থেকে ১৬টি কনটেইনার কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তানে রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল। বিএম কনটেইনার ডিপোর ম্যানেজার বাবুল কুমার দেব জানান, ডিপোতে চার হাজার ৩০০ কনটেইনার ছিল। এরমধ্যে ৯০ শতাংশ কনটেইনারে ছিল পোশাক কারখানার পণ্য।

 

বাকি ১০ শতাংশ ছিল অন্যান্য পণ্যের কনটেইনার। এখানে আমদানি ও রপ্তানির কনটেইনার ছিল। আলাদা স্থানে রাখা হয় বিপজ্জনক কনটেইনার। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা প্রথাগতভাবে পানি দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করেছেন, কারণ ডিপোতে যে হাইড্রোজেন পারক্সাইড ছিল, সেটা ডিপোর কেউ ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের জানায়নি। রাসায়নিক থাকার কথা জানতে পারলে তারা হয়ত অন্যভাবে কাজ করতেন। আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে ফোম ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হতো। তাছাড়া তাদের ৯ কর্মীকেও জীবন দিতে হতো না। বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কনটেইনার ডিপোতে রাসায়নিক দ্রব্য থাকার বিষয়ে কিছুই জানেন না।

 

বিস্ফোরক অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ডিপোতে বিপদজনক পণ্য বা রাসায়নিক রাখার কোনো অপশনই নেই। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কিংবা প্রক্রিয়া অনুসরণ করার আগে এসব বাইরে রাখতে হয়। এসবের কিছুই কাস্টমস কর্তৃপক্ষ করেনি। তাহলে ধরে নেয়া হবে এখানে অন্য কোনো বিপদজনক পণ্য আনা হয়েছে যা কাস্টমস রেজিস্ট্রারই করে নাই। এমনকি এই বিষয়টাতেও আমাদের জানানো হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম বলেন, এই রাসায়নিক দ্রব্যের অনুমতি কিংবা এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি ডিপো কর্তৃপক্ষ।

 

আমরা জানিনাও সেখানে রাসায়নিক দ্রব্য মজুদ ছিল। এদিকে এই ঘটনার পর সোমবার (৬ জুন) বিকাল তিনটায় চট্টগ্রাম বন্দরের ৮ নম্বর ইয়ার্ডে থাকা দুটি কনটেইনার ৩০ টন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড তড়িঘড়ি নিলামে তোলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। প্রকাশ্য এই নিলামে চট্টগ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এয়াকুব ট্রেডিং সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে কিনে নেয় ৩০ টন হাইড্রোজেন পারক্সাইড। দুই কনটেইনার পণ্য নিলামে বিক্রি হয় ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায়। তবে এর মধ্যে আরও ১৭ শতাংশ ভ্যাট ও কর জমা দিতে হবে বিডারকে। শনিবার (৪ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ৯ টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে অবস্থিত বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

 

পরে ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে পানি দিলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো ডিপো এলাকা। দ্রুত চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে শত শত লোকজন হতাহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতাল ও বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারায় ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মীও। এ ঘটনায় রোববার (৫ জুন) রাত পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃতদেহ পাওয়ার তথ্য জানানো হলেও সোমবার (৬ জুন) প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয় ৪১ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top