হাওড়ার বার্জার পেইন্টস রঙের কারখানায় বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড, ফরেনসিক তদন্ত হবে জানালেন দমকল মন্ত্রী। হাওড়ার বার্জার পেইন্টস রঙের কারখানায় বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে। সেই আগুন থেকে এসি মেশিনে আগুন লাগে বলে অনুমান। এবং সেটি ফেটে যায়। এরপর এই আগুন বিধ্বংসী চেহারা নেয়।
কারখানার অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন কর্মীরা। পরে একে একে দমকলের ৮টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। আগুন নেভাতে গিয়ে কারখানার জেনারেল ম্যানেজার অশোক কুমার ভার্মা সহ মোট ২২ জন আহত হন বলে জানা গেছে। আহতদের কলকাতার সিএমআরআই, উডল্যান্ডস সহ হাওড়ার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বুধবার দুপুরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বি গার্ডেন থানার পুলিশ ও হাওড়া সিটি পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।
ঘটনার খবর পেয়ে দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়, বিধায়ক নন্দিতা চৌধুরী সহ অন্যান্যরা ছুটে আসেন। প্রায় ঘন্টা দুয়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মোট ২২ জন জখম হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন বার্জার পেইন্টস কারখানার ম্যানেজার অশোক কুমার ভার্মা। তিনি ভর্তি রয়েছেন কলকাতার উডল্যান্ডস নার্সিংহোমে। এছাড়াও ১৪ জনকে ভর্তি করা হয়েছে কলকাতার সিএমআরআই হাসপাতালে। চারজন ভর্তি রয়েছেন হাওড়া জেলা হাসপাতালে। তিনজনকে ভর্তি করা হয় হাওড়ার নারায়না হাসপাতালে। যদিও পরে সেখান থেকে তাদের কলকাতার দিশানে স্থানান্তরিত করা হয়েছে বলে সূত্র মারফত জানা গেছে। যদিও এদিন দমকল মন্ত্রী জানিয়েছেন ১৭-১৮ জন আগুনে পুড়ে জখম হয়েছেন।
কিভাবে আগুন লাগলো তা জানা যায়নি। যেহেতু রং কারখানায় প্রচুর দাহ্য জিনিস মজুত থাকে তাই আগুন আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে বলে জানা গেছে। হাওড়া, শিবপুর এবং দমকলের অন্যান্য কেন্দ্র থেকে বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন এদিন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এদিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ বার্জার পেইন্টসের কারখানায় আগুন লাগার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই কারখানায় প্রচুর রাসায়নিক সহ দাহ্য বস্তু মজুত থাকার কারণে আগুন কার্যত বিধ্বংসী আকার ধারণ করে। দমকল কর্মীরা যুদ্ধকালীন তত্পরতায় আগুন নেভানোর কাজ করেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খান দমকল কর্মীরা।
আগুন লাগার পর কালো ধোঁয়ায় চারপাশ ভরে যায়। দাউদাউ করে গোটা কারখানায় জ্বলতে থাকে আগুন। কারখানার পাশেই বসতি এলাকা থাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কারখানার শ্রমিকদের দ্রুত বাইরে নিয়ে আসা হলেও তার আগেই কয়েকজন কর্মী আগুনে পুড়ে জখম হন। এদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতর জখম হয়েছেন। এসি ফেটে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হলেও আগুন লাগার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। এদিন দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, “দুপুর আড়াইটের সময় আমাদের কাছে ফায়ার ব্রিগেডে একটা খবর আসে বার্জার ফ্যাক্টরিতে আগুন হয়েছে বলে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হাওড়া ফায়ার স্টেশন থেকে এবং লোকাল বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা এখনো পর্যন্ত ৮টা ইঞ্জিন পাঠিয়েছি। আগুন কন্ট্রোল করা হয়েছে।
কিন্তু এখানে যারা কর্মরত ছিলেন তাদের মধ্যে ১৭ থেকে ১৮ জন আগুনে পুড়ে আহত হয়েছেন। তাঁদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখানে সবাই আমরা এসেছি। আমাদের সিনিয়র অফিসারদের আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। আহতদের ব্যাপারে হাসপাতালে খোঁজখবর নিচ্ছি আমরা। যাতে তাদের চিকিৎসা ভালো করে হয় সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা। আগুন কিভাবে লাগলো সেটাতো এইভাবে বোঝা যাবেনা। ওরা বলছে ইলেক্ট্রিক্যাল ফায়ার। এটা আমাদের তদন্ত হবে। ফরেনসিক হবে। এরপরই আমরা বলতে পারব আগুন কোথা থেকে হয়েছে। দমকল কর্মীরা খুব ভালো কাজ করেছেন। আমাদের ফায়ার ব্রিগেডের লোকেদের সঙ্গে কারখানার কর্মীরাও কাজ করেছেন। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল কিনা সেটা বলতে পারবো না। তবে যতটুকু আমরা জেনেছি জলের একটু সাপ্লাই পেয়েছি।
বাদবাকি তো আমাদের নিজস্ব ওয়াটার ট্যাঙ্কার আমরা পাঠিয়েছি। সেগুলো দিয়ে কাজ করছে ওরা। ৮টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ১৭-১৮ জন আগুনে পুড়ে জখম হয়েছেন। এদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আগুন লাগার কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” এলাকার বাসিন্দা তাপস দাস বলেন, এখানে এসে দেখছি আগুন লেগেছে। প্রথমে কারখানার কর্মীরাই এসি অফিস ঘরে আগুন নেভানোর কাজ করছিলেন। কিন্তু তাঁরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। তা আরও ছড়িয়ে পড়ে। কারখানার জেনারেল ম্যানেজারও আগুনে পুড়ে জখম হন। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসি বিস্ফোরণের কারণেই এই অগ্নিকান্ড বলে আমাদের ধারণা। আগুন দাহ্য পদার্থে লেগে তা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর খবর দেওয়া হয় দমকলকে।