বুধবার সুভাষিনী চাবাগানের গণ বিবাহের মঞ্চ থেকে ৩৭ টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ২৮ টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী । এদিন মোট ৬৮৪২ দশমিক ৩৫ লক্ষ টাকার কাজের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আলিপুরদুয়ারের জেলা শাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা বলেন, “ আমরা এদিন মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে ৩৭ টি প্রকল্পের উদ্বোধন করিয়েছি। মোট ১২৭৮ দশমিক ৬১ লক্ষ টাকার কাজের উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়া ৫৫৬৩ দশমিক ৭৪ লক্ষ টাকার মোট ২৮ টি কাজের শিলান্যাস করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে শিলান্যাস হওয়া কাজগুলো দ্রুত শুরু করা হবে। ” ভালোবাসার টানে ঘর বেধেছিলেন বীরপাড়া চাবাগানের বিকাশ মুন্ডা । দীর্ঘ ছয় বছর আগে পছন্দের মেয়ে ফুলমিতাকে ঘরের বউ করে নিয়ে এসেছিল বিকাশ। কিন্তু চরম দারিদ্রতার কারনে বিয়েটা আর করা হয় নি। ঘর সংসার আর একটা চার বছরের ফুটফুটে ছেলে সন্তান হলেও কেমন যেন সামাজিক মর্যাদার দিক দিয়ে পিছিয়েই ছিলেন বীরপাড়া চাবাগানের ডিভিশন লাইনের বাসিন্দা বিকাশ মুন্ডারা।
কারন সামাজিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন করতে পারেন নি তারা। বুধবার আলিপুরদুয়ারের সুহাসিনি চাবাগানের মাঠে ৫১০ জোড়া আদিবাসি দম্পতির বিয়ের আসর বসেছিল। এর মধ্যে আলিপুরদুয়ার জেলার ৩০৪ জোড়া, জলপাইগুড়ি জেলার ২০০ জোড়া ও কোচবিহার জেলার ৬ জোড়া আদিবাসি দম্পতির এদিন গণ বিবাহের আসরে বিয়ে হয়। একেবারে আদিবাসি রীতি নীতি মেনে বিয়ে দিয়েছেন আদিবাসি পুরোহীত যাকে আদিবাসী সমাজের পাহান বলা হয় সেই ভগবান দাস মুন্ডা। আদিবাসীরা প্রকৃতির পুজারি। সেই কারনে বাশগাছ, ধান গাছ, সিধা গাছ সহ সাত রকম গাছকে সাক্ষি রেখে বরমালা, শাখা সিদুর সব দিয়ে একেবার ষোল আনা নিয়ম নিষ্ঠা সহকারে এদিন বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। বর পক্ষ ও কনে পক্ষ দুই পক্ষ থেকে এদিন যারা বিয়ে দেখতে এসেছেন তাদের কেউ এদিন আদর আপ্পায়ন করে দুপুরে মাংস ভাত খাইয়েছে প্রশাসন। শুধু কি খাওয়া দাওয়া , গ্ণ বিবাহের মঞ্চে বিয়ে হওয়া প্রত্যেক নব বধুই রুপশ্রী প্রকল্পে ২৫ হাজার টাকা করে পেয়েছেন।
এছাড়াও এই নব দম্পতিদের সংসারের হাড়ি করাই গামলা সহ বিভিন্ন বাসন দিয়েছে রাজ্য সরকার। আর এই বিয়ের আসরে এসেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে নেচেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একেবারে কাছে থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে শুধু ছুইয়েই দেখেন নি নব দম্পতিরা। মুখ্যমন্ত্রীর নাচও উপভোগ করেছেন তারা। এদিন বীরপাড়া চাবাগানের বিকাশ মুন্ডা বলেন, “ ভালোবেসে ফুলমিতাকে ঘরে এনেছিলাম ঠিকই। কিন্তু অভাবের কারনে আর বিয়েটা করে উঠতে পারি নি। ঢাক ঢোল পিটিয়ে বিয়ে করা কার না ইচ্ছে থাকে। সেই ইচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পুরন করে দিলেন। বিয়ে করে সামাজিক মর্যাদা পেলাম আমরা। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।” এথেল বাড়ি চাবাগানের নব বধু সঙ্গিতার অশ্রু বেয়ে তখন আনন্দের জল গড়িয়ে পড়ছিল।
তিনি বলেন, “ এভাবে ঢাক ঢোল পিটিয়ে এত ঘটা করে কোনদিন আমার বিয়ে হবে আমি স্বপ্নেও ভাবি নি। জাকজমক করে বিয়ে করতে কোন মেয়ে না চায়! প্রশাসন আমাদের সেই সাধ পুরন করল। মুখ্যমন্ত্রী দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের বিয়ে দিলেন, উপহার দিলেন।এই ঋন কোনদিন ভোলার নয়।” আদিবাসীদের এই গণবিবাহের অনুষ্ঠানে এদিন ্মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রী মলয় ঘটক, অরূপ বিশ্বাস, বুলু চিক বড়াইক, বীরবাহা হাসদা উপস্থিত ছিলেন। এদিন মঞ্চে যুব কল্যান দফতরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, “ সন্তানকে বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব থাকে বাবা মায়ের উপর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সেই দায়িত্ব পালন করলেন। যাদের কেউ নেই তাদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন। সেই কারনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্তিশালি করতে হবে। ”