সম্প্রীতির বার্তা দিতে পাড়ায় পাড়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান গেয়ে জোড় প্রচার আট বছরের শিশু সঙ্গীত শিল্পীর

সম্প্রীতির বার্তা দিতে পাড়ায় পাড়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান গেয়ে জোড় প্রচার আট বছরের শিশু সঙ্গীত শিল্পীর

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

সম্প্রীতির বার্তা দিতে পাড়ায় পাড়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান গেয়ে জোড় প্রচার আট বছরের শিশু সঙ্গীত শিল্পীর। গুজবের জেরে যখন ভাই ভাই এর মধ্যে বিদ্বেষ ধরানোর চক্রান্ত চলছে সেই মুহুর্তেই এলাকায় শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে কখনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপরে গান, কবিতার ছলে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে চলেছে উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙ্গার আট বছরের ছোট্ট সঙ্গীত শিল্পী দেবাঙ্কিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গুজবের জেরে টিভিতে খবর দেখতে দেখতে দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে ছোট্ট দেবাঙ্কিতার। এরপর সকাল হতে না হতেই তার বাবা মা কে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিতে। সম্বল বলতে তার গলার কন্ঠের গান ও কবিতা।

 

এই দুটোকে সম্বল করেই ছোট্ট দেবাঙ্কিতা তার বাবা ও মায়ের হাত ধরে পৌঁছে যায় আমডাঙ্গায়, আবার কখনো বা পৃথিবা, দেগঙ্গা, হাড়োয়া, বাদুড়িয়া। আবার কখনো বা ধান্যকুড়িয়া, বাগজোলাতে। পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের লেখা গান “মা গো তুমি সর্বজনীন আছো হৃদয় জুড়ে। মা আম্মি মাদার একই ভুলি তা কি করে।…… হৃদয় মাঝে তাই তো বাধা দুই মা একই সুরে” আবার কখনো বা কবিতার ছলে “মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান,মুসলিম তার নয়ণমণি হিন্দু তাহার প্রাণ।” গেয়েই চলেছে। উদ্দেশ্য তার একটাই মানুষের মধ্যে আরও যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকে। “ধর্ম তোমার, উৎসব আমাদের”।

 

ঠিক এই বার্তাই মানুষের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কখনো আদো আদো কন্ঠে তাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, কাজী নজরুল ইসলাম মুসলমান হয়েও তিনি শ্যামা সঙ্গীত লিখেছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামের লেখা সেই সব বিখ্যাত শ্যামা সঙ্গীত ( মা কি আমার কালো রে। কলো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা রে আলোর নাচন।) একের পর এক গেয়েই যাচ্ছে ছোট্ট এই মেয়েটি। শুধু গান কবিতা বলেই শেষ নয়, বিগত দিনে ফাংশন করার টাকা দিয়ে এলাকায় এলাকায় গিয়ে গরীব দুঃস্থ মহিলাদের কে বস্ত্রদানও করছে সে। ছোট্ট দেবাঙ্কিতার কথায়,” স্কুলে ও মামারবাড়ি এলাকায় রোজিনা, মারিয়া এরকম আমার অনেক বন্ধু আছে।

 

তার বাবা, মা আমাকে খুব ভালোবাসে। ঈদের সময় ওদের বাড়িতে যাই। আর ওরা আমাদের বাড়িতে পূজোর সময় আসে। আমি চাই আমাদের মধ্যে এই সম্পর্ক চিরকাল বজায় থাকুক।” এ বিষয়ে বাদুড়িয়া বিধানসভার বিধায়ক কাজী আব্দুল রহিম বলেন, “ছোট্ট এই মেয়েটির প্রচেষ্টাকে বড়োদেরকে হার মানায়। ওর প্রচেষ্টা সার্থক হোক। ঈশ্বর, আল্লা ওকে আশীর্বাদ,দোয়া করুক”। গোবরডাঙ্গা শ্রীমা মঠের মহারাজ স্বামী সত্যরুপানন্দ বলেন, “শুনেছি হিন্দু ব্রাক্ষ্মন ঘরের ওই ছোট্ট মেয়েটি ছোটবেলার থেকেই এরকম মনোভাবাপন্ন। একবার আমাদের এখানে যেমন খুশী তেমন সাজো তে গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, মাথায় মুসলমানদের টুপি ও একহাতে যীশুখ্রীষ্টের ছবি ও তার এক হাতে সম্প্রীতির বার্তা লেখা একটি প্ল্যাকার্ড ছিল।

 

সমাজকে সচেতন করার জন্য অনেক পরিশ্রম করছে ও। ওর এই মহৎ উদ্দেশ্য সফল হোক। ” বসিরহাট উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক এ টি এম আবদুল্লা বলেন,” দুপুরের এই গরমের মধ্যে এই ছোট্ট মেয়েটি এ গ্রাম ও গ্রাম ঘুরে যেভাবে সচেতনতার বার্তা দিচ্ছে তাতে করে তার এই মহৎ উদ্দেশ্যকে কুর্নিশ জানাই।” বাদুড়িয়া পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান গৌতম সিংহ বলেন, করোনা কালে লকডাউনের সময় এই ছোট্ট মেয়েটিকে দেখেছিলাম নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ কে সচেতন করতে রাস্তায় রাস্তায় করোনা সম্বন্ধীয় গান গাইছিল। তার গান শুনে অনেকেই তাকে টাকা দিয়েছিল।

 

সেইসব টাকা সে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রান তহবিলে দান করোছিল।” অশোকনগরে বাসিন্দা অভিজিৎ বক্সি, অভিষেক রায় হাবরার বাসিন্দা দেবাশিষ মজুমদারেরা বলেন,” এই রকমের মেয়েই আমাদের রাজ্যের গর্ব। আমাদের মতো বড়োদেরকে ওইটুকু বাচ্চার কাছে অনেক কিছু শেখার আছে”। যদিও বা এ বিষয়ে দেবাঙ্কিতার মা পরমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,” আমার মেয়ের এরকমের ইচ্ছাতে কখনো বাধা দিই নি। আমার মেয়ের সামান্য এটুকু প্রয়াসে যদি সমাজের একটুকুও কাজে লাগে তাহলে আমাদের সকলের ভালো লাগবে। আমরা চাই আমাদের সমাজে রাম, রহিমের সুসম্পর্ক আরও যেন দৃঢ় হোক।” গোবরডাঙ্গার বাসিন্দা অ্যাম্বুলেন্স চালক নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন,” আমার দুই মেয়ে। দেবাঙ্কিতাও আমার মেয়ে। ওদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এক আত্মা এক প্রান”।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top