ধীমাল সম্প্রদায়কে তপশিলি জনগোষ্ঠীর তকমা পাইয়ে দিতে লড়াই করে চলেছেন মাস্টারমশাই গর্জন মল্লিক। “সাংসদ মন্ত্রীরা বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে কাজের কাজ এখনো কিছুই হয়নি। জনগোষ্ঠীর দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরেও ফল পাইনি” বলে জানান গর্জন বাবু।
‘দান্তাওয়ারাং বেরাংগ’ বা পরিবেশ ও প্রকৃতিই ধর্ম এই জনগোষ্ঠীর। কোনরকম মূর্তিপূজা করেন না তাঁরা। ইংরেজ শাসন করার আগে উত্তরবঙ্গ জুড়ে এই জনগোষ্ঠীর প্রভাব ছিল। মূলত কৃষিকাজ ও শিকার করেই তাদের জীবন ধারণ করতো। তবে ইংরেজ শাসন কালে শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয় এরপরই নেপালের মেচী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে নিজেদেরকে মিশিয়ে দিয়ে সেই দেশে চলে যান বহু ধীমাল। বর্তমানে নকশালবাড়ি মনিরামজোতের কেতু গাবুর, হাতিঘিসা এবং খড়িবাড়িতে এই জনগোষ্ঠীর প্রায় দু’ হাজার জন বসবাস করেন। তবে সবচেয়ে বেশি এক হাজার জন বসবাস করেন কেতুগাবুর এলাকাতেই।
এই এলাকাতেই গ্রামের বাড়ি গর্জন বাবুর। অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় এই জনগোষ্ঠীর বর্তমানে এবং সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নানান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। চলতি বছরে ৩০ জন ধীমাল মাধ্যমিক, ২০ জন উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন। সাত থেকে আটজন স্নাতক স্তরে পড়াশুনা করছেন। দু’জন স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশুনা করছেন। তবে দুঃখের খবর চলতি বছরেই ১৫-১৬ জন তাদের পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছেন। তাদের দাবি সরকারি চাকরি যখন মিলবেই না দিনমজুরি রাজমিস্ত্রি কাজ করে খেতে হবে। তাহলে পড়াশোনা করে কি লাভ? পুরো ধীমাল গোষ্ঠীর মধ্যে গর্জনবাবুকে নিয়ে মধ্যে মাত্র তিনজন সরকারি চাকরি করেন বা করতেন। তপশিলি জনগোষ্ঠীর তকমা না পেলেও ডেভলপমেন্ট বোর্ডের দাবি করেছিলেন গর্জন বাবুরা। তাও এখনো পাওয়া যায়নি। কাজেই ভোট নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামাতে অনিচ্ছুক এই জনগোষ্ঠী।
“আমাদের মধ্যে কেউ যদি ভোট না দেয়, তাতেও ওদের কোনো যায় আসবেনা। আমরা সংখ্যায় কম, তাই আমাদের নিয়ে কেউ ভাবে না।” গলায় এক রাশ ক্ষোভ নিয়ে মনের দুঃখ প্রকাশ করলেন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ধীমালদের এক গৃহবধূ প্রতিমা মল্লিক। পাশে বসে থাকা মাস্টারমশাই গর্জন মল্লিক যিনি ধীমাল সম্প্রদায়কে তপশিলি জনগোষ্ঠীর তকমা পাইয়ে দিতে আজন্ম লড়াই করছেন। বারবার কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করলেও তার লড়াই এখনো সুফল পায়নি।
তবে থামতে রাজী নন ষাটোর্ধ্ব গর্জন মল্লিক। এতদিন রাজ্য সরকার, কেন্দ্র সরকার সবার দোরে কড়া নেড়েছেন। প্রয়োজনে আবার নাড়বেন। দিল্লি পর্যন্ত নিজের সম্প্রদায়কে জায়গা করে দিতে লড়াই করেছেন তিনি। তবে ভোট আসে ভোট যায় প্রতিশ্রুতি ছাড়া কেন্দ্র না রাজ্য কোন সরকার কেউই সেই অর্থে কোনো পদক্ষেপ করেনি বলে দাবি তার। মূলত কেন্দ্র সরকারের প্রতি খানিকটা হলেও আগের মতো আর ভরসা রাখতে পারছেন না তাঁরা। তাই মহাকুমা পরিষদ নির্বাচনেও মালদা গ্রামে সেই অর্থে কোন উত্তাপ নেই।
আরও পড়ুন – বাংলাদেশে পাচারের আগে উদ্ধার দশ লক্ষ টাকার ইয়াবা ও টাইডেল ট্যাবলেট
গর্জনবাবু বলেন, “সাংসদ মন্ত্রীরা বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে কাজের কাজ এখনো কিছুই হয়নি। জনগোষ্ঠীর দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরেও ফল পাইনি। কেন্দ্র সরকারের প্রতি আবার আমাদের বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ জানাবো।” এছাড়াও তিনি বলেন তপশীলি তকমা পেলে ধীমাল সম্প্রদায়ের মানুষেরা অনেক সুযোগ সুবিধা পাবে।
যদিও দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ বলেন, “ওই জনগোষ্ঠীর তরফে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। আমি তাদের দাবি রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা অবশ্যই কাজ করবেন।বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন রাজ্য নেতৃত্বরা”
মাটিগাড়া নকশালবাড়ি বিজেপি বিধায়ক তথা শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আনন্দময় বর্মন বলেন, “তৃণমূল ভোটের সময়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নিয়ে রাজনীতি করে। তবে প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারই কাজ করছে।”