কোভিড জড়া কাটতেই হাজার হাজার ভক্ত সমাবেশে জমজমাট ইসকনের রথ। দু বছর বন্দি দশা কাটিয়ে পুরোনো ছন্দে ফিরে উৎসবে গা ভাসালো শিলিগুড়ি বাসী। রথ যাত্রা থেকেই দুর্গোৎসবের ঢাকে কাঠি। শুক্রবার জমজমাট রথ যাত্রার পুরোনো চেনা ছবিতে ফেরে শহরে। চিরচরিত ভাবেই এদিন শিলিগুড়ি ইসকনের রথ যাত্রার মধ্য দিয়ে
একাধিক সামাজিক সচেতনতার বার্তা ফুটিয়ে তোলা হয়। পরিবেশের সার্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী যেমন “গাছ লাগাও পরিবেশ বাঁচাও”, “সেভ ড্রাইভ সেভ লাইভ” “নেশা মুক্ত সমাজ গড়ে তোলার আবেদন জানিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে ইস্কনের রথ উদ্বোধন করেন উচ্চ পদস্থ রাজ্য পুলিশ অধিকর্তা উত্তরবঙ্গের আইজি ডিপি সিং, শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার গৌরব শর্মা।
ঈশ্বর বলদেবের রথের যাত্রা শুরু হয় আইজির হাতে। রথ রঞ্জুতে প্রথম টান দিয়ে ঈশ্বর জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার সূচনা করেন পুলিশ কমিশনার গৌরব শর্মা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই সুদূর রাশিয়া থেকে চার ভক্তের ইসকনে আগমন এদিনের রথযাত্রাকে আরও মহিমান্বিত করে তোলে। এদিন ইসকন মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে কয়েক হাজার ভক্ত সমাবেশে শহরের রাজপথে নামে জগগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রতায় তিনটি রথ। রথ দর্শনে ব্যাকুলতার সঙ্গে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। অন্যদিকে শিলিগুড়ির প্রাচীন রথযাত্রা গৌড়ীয় মঠ, রথখোলা রাধা মাধব মন্দিরের রথ ঘিরেও ছিল অন্যমাত্রার উন্মাদনা।
রথ যাত্রার অংশ গ্রহন কারী ভক্তেরা জানায় রথযাত্রা মানেই ভিড়ে ঠাসা। একসঙ্গে মিলেমিশে উৎসবে পাতা। আর রথের মেলার ঠাসাঠাসি ভিড়ের তো প্রবাদ তো বহু পুরোনো। দু বছর পর সেই চেনা রথের মেলার জমজমাট ভিড়ে লক্ষ্য করা যায় শহরবাসী তুমুল উন্মাদনা। একইসঙ্গে এদিন দূর্গোৎসবের আমেজ চড়ে শহরে।একাধিক বিগ বাজেটের পুজো উদ্যোক্তারা খুঁটি পুজো করে এদিন থেকেই মায়ের আগমনের প্রস্তুতিতে নেমে পড়েন। এবারে কোভিড জড়া কাটিয়ে গাঁ ঝাড়া দিয়ে উঠছে শহরের বিগ বাজেটের পুজো আয়োজকেরা। বিগ বাজেটের থিম পুজোয় শিলিগুড়ি উত্তরবঙ্গে নজির পুরোনো। তবে বাণিজ্যিক শহর হওয়ায় কোভিডের আর্থিক মন্দার আঘাতে বিগত দু বছর পুজোর চমক খুইয়ে বসে শিলিগুড়ি। রাজ্যের আর্থিক অনুদানেই পূজো উদ্যোক্তারা পুজো সারেন।
আরও পড়ুন – কাঁথি পুরসভা ডেপুটেশন দিতে এসে কাউন্সিলরের হাতে শ্লীলতাহানি শিকার এক মহিলা
তবে এবার ফের শরের প্রায় ৩৫-৪০টি বিগ বাজেটের পুজো হতে চলেছে। শহরের পরিচিত বিগ বাজেটের পুজো উদ্যোক্তা সুব্রত সঙ্ঘ, সেন্ট্রাল কলোনি দূর্গোৎসব কমিটি, নবীন সঙ্ঘ, দাদাভাই, মাটিগাড়া মায়াদেবী, জিটিএস খুঁটি পূজার সেরে পুজো প্রস্তুতিতে ময়দানে নেমে পড়েছে। সুব্রত সংঘ পুজো কমিটির সম্পাদক রবীন্দ্র কুমার নাথ বলেন বাজেট কোনো কাটছাঁট নেই। বিগ বাজেটে তো হবেই তবে কত টাকায় তা পৌঁছবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। নবীন সঙ্ঘও থিমের সাজসজ্জায় চমক আনতে চলেছে। বাজেটে কাটছাঁট নেই তাদেরও। এদিকে দিন জুয়েল অ্যাথলেটিক ক্লাবের খুঁটিপুজোয় হাজির ছিলেন শিলিগুড়ি শহরের ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার ও মেয়র পারিষদ। শহরবাসী বলছে ফের ক্লাবে ক্লাবে সেরা পুজোর টক্কর এবারে ফিরবে এবারে।
এদিকে টানা দু বছর কালো মেঘের ঘটঘটা সরিয়ে রথ যাত্রার দিনে বায়না হাতে পেয়ে চনামনা হয়ে উঠেছে কুমোরটুলি। কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী নারায়ণ পাল জানান সময়তেই বরাত মিলেছে। মা যেন মুখ তুলে তাঁকিয়েছে। প্রতিমার কাঠামো ও মাটির কাজ শেষের দিকে। এরপর আবহাওয়া মুখ তুলে তাকালেই সারি দিয়ে প্রতিমার মাটির উপর প্রলেপে রোদে তাপ মিললেই নকশা ও সাজসজ্জার কাজে হাত লাগাবে শিল্পীরা।এই মুহূর্তে তাই তুমুল ব্যস্ততা কুমারটুলি জুড়ে। একটু অন্য সুরে শম্ভু পাল জানান পাহাড়ের শান্তি ফিরেছে তাই পাহাড়ের পূজো উদ্যোক্তারা যোগাযোগ করেছেন। খানিক হেঁসে বলেন সপরিবারে সমতললোক থেকে পার্বত্যলোকে যাবে দূর্গা।