হাওড়া পৌর নিগমের ৫০টি ওয়ার্ডের পুনঃবিন্যাসের তালিকা ঘিরে নতুন বিতর্ক শুরু। হাওড়া পৌর নিগম এলাকার ৬৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৫০টি ওয়ার্ডের ভোটার তালিকা বিন্যাস প্রকাশ করলো হাওড়ার জেলাশাসক মুক্তা আর্য। সেই তালিকাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে উঠে এসেছে আইন ভাঙা সহ জেলাশাসকের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন।
রাজ্য সরকার হাওড়া থেকে বালিকে পৃথক করার জন্য বিধানসভাতে বিল পাস করায় গত বছর। যদিও সেই বিলে এখনও রাজ্যপালের স্বাক্ষর না হওয়ায় তা আইনে রূপান্তরিত করতে পারে নি রাজ্য সরকার। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কিসের উপর ভিত্তি করে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে হাওড়াকে আলাদা পৌর নিগম বলে দেখানোর প্রয়াস করা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে, সংবিধান বিশেজ্ঞদেরও দাবি রাজ্য সরকারের কোনও এক্তিয়ারই নেই এই ধরণের কাজ করার। তাই জেলাশাসকের মাধ্যমে প্রকাশিত এই তালিকা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসংবিধানিক। তবে, সমালোচনা যাই হোক না কেন শুরু থেকেই হাওড়া পৌর নিগমের থেকে বালীকে পৃথকীকরণে বিল নিয়ে রাজ্য সরকার তার একগুঁয়েমি দেখিয়েই চলেছে।
যদিও আদতে তাতে কাজের কাজ কিছুই করতে পারে নি রাজ্য সরকার। রাজ্যে সবকটি পৌরসভার নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পারলেও আজও হাওড়া পৌর নিগমের নির্বাচন সম্পূর্ণ করতে পারে নি জেলা প্রশাসন। কয়েক মাস পূর্বে একই ভাবে বালির ১৬টি ওয়ার্ডেকে ভেঙে ৩৫টি ওয়ার্ডে পুনঃবিন্যাসের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে। সেই ক্ষেত্রেও জেলা শাসকের এক্তিয়ার নিয়ে একইভাবে উঠেছিল প্রশ্ন। যদিও এই পুনঃবিন্যাসকে কেন্দ্র করে শাসকদলের অন্দরেই রয়েছে ধোঁয়াশা।
শাসকদলের অনেকেই মনে করছেন, দীর্ঘ দিন নির্বাচন না হওয়ার দরুন দলীয় সংগঠনের কর্মী ও সমর্থকদের চাঙ্গা রাখতে মাঝে মধ্যেই এই ধরণের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে রাজ্যের শাসকদল। যদিও এতে দলীয় কর্মীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হলেও বাস্তবে তার কোনও প্রতিফলন ঘটছে না। মঙ্গলবার, প্রকাশিত হওয়া তালিকা নিয়ে জেলা প্রশাসন সহ রাজ্যের শাসক দলকে একহাত নেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাই। তিনি স্পষ্ট অভিযোগ করে জানান, যেখানে রাজ্যপাল এখনও ওই বিলে সই করেন নি। সেই বিল কিভাবে আইনে পরিণত হয়।
আর কোন সাংবিধানিক ক্ষমতার বলে জেলাশাসক এই তালিকা প্রকাশ করতে পারেন, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, এতদিন তাঁরা কানাঘুশো শুনে আসছিলেন যে রাজ্য সরকার পুনঃবিন্যাস করছে। যদিও এর আগে এই বিষয়কে নিয়ে আলোচনার জন্য সর্বদলীয় সভা ডাকা হয় নি। যেটা জরুরি ছিলো। রাজ্য সরকার নিজের মর্জিমত সংবিধানকে পাত্তা না দিয়েই গায়ের জোরে, সবকিছু করে নিতে চাইছে।
এতদিন তাঁরা অপেক্ষা করেছেন এই সংক্রান্ত তথ্য প্রমান তাঁদের হাতে আসার জন্য। এখন পেয়েছেন তাঁরা। দ্রুত কলকাতা উচ্চ আদালতে এই অসংবিধানিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করবেন তাঁরা। এছাড়াও তিনি দাবি করেন, শুধু দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর অপেক্ষা করেও নির্বাচন না হওয়ার কারণে দলীয় কর্মীদের মনোবল যাতে না ভেঙে যায় তা বুঝেই শাসলদলের উচ্চ নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে কর্মীদের মনোবলকে চাঙ্গা রাখার জন্য এই ধরণের বিভ্রান্তিকর চেষ্টা চালাচ্ছে।