পুরাণ মতে ‘শুভ মহালয়া’ বলা উচিত নয়

পুরাণ মতে ‘শুভ মহালয়া’ বলা উচিত নয়

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

পুরাণ মতে ‘শুভ মহালয়া’ বলা উচিত নয়। অধুনা একটি বিশেষ রীতি চালু হয়েছে সকলের মধ্যে। বিশেষভাবে বলতে গেলে সোশ্যাল মিডিয়াতে। যে কোনও বিশেষ দিন এলেই তার আগে শুভ কথাটা জুড়ে দিয়ে চলে পোস্টের বন্যা। তবে সেই ধারা থেকে বাদ নেই মহালয়া। তবে, মহালয়াকে কি আদৌ শুভ বলা যায়! কারণ, সনাতন শাস্ত্রমতে তা বলতে নেই, এমনই তার ব্যাখ্যা দেওয়া রয়েছে।

 

সচরাচর দেখা গিয়েছে, আমাদের সমাজে সনাতন শাস্ত্র ও তৎ সম্বন্ধে বিশেষ পড়াশোনা জানার প্রক্রিয়া ও আগ্রহ হাতেগোনা কিছু মানুষের মধ্যেই রয়েছে। আর বাকি অংশের মানুষের মধ্যে তা ধর্মীয় গোঁড়ামি। কারোর কাছে বা মান্ধাতা আমলের বিষয়। তবে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্টই বিভ্রান্ত বর্তমানের শিক্ষিত (?) সনাতনী সম্প্রদায়ে। শাস্ত্র বলছে, মহালয়ার সঙ্গে দুর্গাপূজোরও আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। তাই যাঁরা দেবী দুর্গার ছবির সঙ্গে ‘মহালয়া’ লিখে মহালয়ার দিনে বার্তা দিচ্ছেন, তাঁরা নিজেরাও জানেন না যে তা কত বড় ভুল। পাশাপাশি আরেকটি বিষয় বিশেষ করে বাঙালী সমাজের কাছে। তা হল মহালয়া মানে ভোর ৪ টের সময় রেডিওতে মহালয়া শোনা। এটা কমবেশি সকল বাঙালীর মুখেই শোনা যায়। যাকে তাঁরা নস্ট্রালজিয়া বলতেই স্বাছন্দ বোধ করেন।

 

তবে বাস্তবে মহালয়ার ভোরে রেডিওতে যে অনুষ্ঠানটি চলে তা আদতে মহালয়া নয়। বরঞ্চ বলা ভালো ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ নামের একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। এর সঙ্গে মহালয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এই দিনে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার হয় এই পর্যন্তই। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবে মহালয়া কি? আসলে পুরান মতে মহালয়া শব্দটির উৎপত্তি ‘মহত্‍ আলয়’ থেকে। সনাতন ধর্মের মতে আমাদের পিতৃপুরুষের আত্মা এই সময়ে পরলোক থেকে ইহলোকে আসেন, তাঁদের উত্তর পুরুষদের থেকে জল ও পিণ্ডলাভের আশায়। আজকের এই বিশেষ দিনের তিথিতে প্রয়াত পিতৃপুরুরা জল-পিণ্ড গ্রহণ করে তাঁরা তৃপ্ত হন।

 

তবে, তাঁরা আজকের দিনেই কেন আসেন তার ব্যাখ্যাও সনাতন শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। যার সঙ্গে মহাভারতের নিবিড় যোগ আছে। মহাভারতে উল্লেখিত মহাদানবীর কর্ণের আত্মা স্বর্গে গেলে সেখানে তাঁকে খেতে দেওয়া হল শুধুই সোনা আর ধনরত্ন। কর্ণ আশ্চর্যন্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাঁকে জানান হয়, সে সারাজীবন সোনাদানাই সকলকে দান করেছে, কখনোই তার পিতৃপুরুষকে তিল জল দান করেন নি।

আরও পড়ুন – পুজোর আগে সেভাবে জমলো না বাম কর্মচারীদের নবান্ন অভিযান

যা শুনে কর্ণ প্রশ্ন করেন, এতে তার তো দোষ নেই। কারণ তার পিতৃপুরুষের কথা সে জানতে পারে যুদ্ধ শুরুর আগের রাতে। মাতা কুন্তী তাঁকে যখন বলেন সে তাঁরই সন্তান। এরপরে যুদ্ধে তার মৃত্যু হয়। পিতৃ তর্পণের সময়ও সে পায় নি। কর্ণের উত্তর প্রমাণ করল যে সে নির্দোষ। তাই কর্ণকে ১৫ দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দিতে অনুমতি দেওয়া হয়। আর এই এক পক্ষকাল ধরে কর্ণ মর্ত্যে অবস্থান করে পিতৃপুরুষকে অন্নজল দিলেন।

 

তাঁর পাপস্খলন হলো এবং যে পক্ষকাল কর্ণ মর্ত্যে এসে পিতৃ পুরুষকে জল দিলেন সেই পক্ষটি পরিচিত হল পিতৃপক্ষ নামে। এরপর থেকেই হিন্দুদের মধ্যে তর্পণের প্রথা চালু হয়। পারলৌকিক ক্রিয়াকর্মের তিথি হিসেবে নির্দিষ্ট হওয়া দিনকে শুভ বলা নিষিদ্ধ শাস্ত্র মতে। অর্থাৎ, প্রিয়জনের মৃত্যুর পারোলৌকিক ক্রিয়ার দিনে কেউ যদি ‘শুভ শ্রাদ্ধ’ বলে, সেটা বড়োই বেমানান। ঠিক সেভাবেই মহালয়াকেও শুভ মহালয়া বলাটা একইভাবে বেমানান। তাই জেনে না জেনে অনেকেই যারা এই দিনটিকে শুভ বলে প্রচার করে থাকি তাঁদের মধ্যেও নিজের সনাতনী শিক্ষা লাভের মধ্যে দিয়েই সমাজে কবে উন্মোচিত হবে সত্যের প্রকাশ, তার অপেক্ষাতেই বসে আছেন ভারতীয় সনাতন সভ্যতার পূর্ব পুরুষরা।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top