দেবীর অকালবোধনে অপরিহার্য ‘পদ্ম’। তবুও বিষাদের সুর পদ্ম চাষীদের। রবিরার মহালয়া। দেবী উমার মর্তে আগমনের সুচনা। মা আসছেন এই ধরিত্রিতে। আকাশে, বাতাসে কাশ ফুলের সুবাস মেখে রয়েছে প্রকৃতি। নীল আকাশে ভাসছে সাদা তুলোর মতো মেঘের ভেলা। আর আশ্বিন মাসে দেবী দুর্গার অকালবোধোনের আরাধনায় মূল উপকরণ রূপে থাকতেই হয় ১০৮টি ‘পদ্ম’। বলাই বাহুল্য দুর্গাপূজার মধ্যে সবচেয়ে মহার্ঘ দশ মহাবিদ্যার অন্যতম রূপ ‘দেবী চন্ডির’ পূজো। অষ্টমীর সন্ধি পূজোতে এই ১০৮ পদ্মই দেবী চন্ডির মূল উপকরণ।
এই পূজোয় প্রধান উপকরণ হল ‘১০৮ পদ্ম’। তবে এই বছর ফুলের ফলন যেমন কম, তেমনই ভালো বৃষ্টি না হওয়ায় ফুলের মানও তেমন থাকবে না বলে আশঙ্কা চাষীদের। হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় দক্ষিণ পূর্ব বেলের খড়্গপুর শাখার আবাদা থেকে জকপুর পর্যন্ত রেলের খাদেই মূলত ভালো মানের পদ্ম পাওয়া যায়। কিন্তু, এবছর তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় সেই পদ্মের মানের উৎকৃষ্টতা সেভাবে নেই। কারণ, বৃষ্টির ফলে জলস্তর যত বাড়বে ততই পদ্ম ফুলের মান বাড়বে। কিন্তু, এখনো পর্যন্ত তা না হওয়ায় মাথায় হাত পদ্ম চাষীদের।
দেবী এবারে গজে আগমন অর্থাৎ শষ্য শ্যামলা হবে ধরিত্রী। তবে, এই বছরই পদ্মের ফলন নিয়ে যথেষ্টই চিন্তিত আবাদা এলাকার পদ্ম চাষী প্রশান্ত মান্না। তিনি বলেন, এবারে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার দরুন পদ্মের ফলনে সেই গুনমান নেই। গত বছরে লাভের মুখ দেখলেও এই বছরে সেই গুড়ে বালি। এখানে প্রায় ১০০-১৫০ চাষী এই পেশাতে আছেন। তাঁরা পার্শ্ববর্তী কোলাঘাটের কাছে বাজারে পদ্ম দিয়ে বসেন। সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গাতে তা ছড়িয়ে পড়ে।
তবে পদ্ম চাষে সরকারি সাহায্য তাঁরা পান না বলেই দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি জানান তবে, এই বছর কৃষি দফতর থেকে আধিকারিকরা এসেছিলেন এবং তাঁদের পাশে থাকার কথা দিয়েছেন। যদিও অপর এক পদ্ম চাষী বাপ্পা মাইতি জানান, সমস্যা অনেক আছে পদ্ম চাষের। এখানে খালের কোনও নিকাশি ব্যবস্থা নেই, যে খালের জলের জলস্তর বাড়বে। তার উপরে এই বছরে বৃষ্টিও কম হয়েছে তাই উৎকৃষ্ট মানের পদ্ম পাওয়া খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি দাবি করেন, এই জলাধার থেকে প্রত্যহ ১০০ জন চাষী পদ্ম তোলেন।
কারোর ৬০ কারোর ৫০ এইরকম বিভিন্ন সংখ্যায় পদ্ম পান তাঁরা। বাজারে এখন আড়াই থেকে তিন টাকা পদ্মের দাম যাচ্ছে। অনেকসময় বিক্রি না হওয়া পদ্ম ফেলে দিয়ে আসতে হয় তাঁদের। এখানকার উৎকৃষ্ট পদ্ম দিল্লি, মুম্বাই সহ অনেক জায়গাতে যায়। সরাসরি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা নিজেরাই পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তবে, দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে পদ্মের যে দাম হওয়া উচিৎ বাজারে, এখন সেই দাম নেই বলেই আক্ষেপ করেন তিনি।
জলের অপ্রচুর্য থাকার কারণে একদিকে যেমন মার খাচ্ছে ভালো পদ্মের ফলন, অপরদিকে ততটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে পদ্ম চাষের সঙ্গে যুক্ত থাকা চাষীদের অর্থ উপার্জন। যে পদ্মে দেবীর অকালবোধনে ঝলমলে হয়ে উঠবে পুজো মণ্ডপ, সেই দেবীর কৃপাতে কবে তাঁদের ঘরে জ্বলবে উজ্জ্বল সৌভাগ্য ও অর্থের উদয়, এখন তার দিকেই তাকিয়ে আছেন আবাদা এলাকার শতাধিক পদ্ম চাষীরা।