দু ‘ শো বছরের মৃতপ্রায় বটগাছ প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। দৃশ্যটা প্রায় সাত বছরে আস্তে আস্তে বদলে যাচ্ছে। উলুবেড়িয়ার মহিষরেখায় দামোদর নদের ধারে একটি মৃতপ্রায় বটগাছ এলাকার বাসিন্দাদের পরিচর্যায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে। একটা সময়ে এই বটতলা অসামাজিক কার্যকলাপ ও দুষ্কৃতীদের আখড়া হয়ে উঠেছিল।এখন সেই দৃশ্যটা পাল্টে গেছে।এখন এই বটতলা অনেকের পড়াশোনা, শরীরচর্চা এবং মুক্তবাতাস গ্ৰহণ ও ভ্রমনের জায়গা হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়,পুর্নজম্ম পাওয়া বটগাছটির বয়স আনুমানিক দু ‘ শো বছর।বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছটি আসল চেহারা হারাতে বসেছিল পুষ্ট হওয়া অসংখ্য ঝুরির ঘেরাটোপে।আস্তে আস্তে সেই ঝুরি গুলি ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল চড়ুইভাতি করতে আসা লোকজনদের উৎপাতে।ঝুরি গুলিতে দোল খেত নানান পাখি সহ এলাকার কচিকাঁচা শিশুরা।
চড়ুইভাতি করতে আসা লোকজনদের উৎপাতে ঝুরি গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হত। এই সব বন্ধ করার কেউ ছিল না। বটতলা আগাছা আর জঞ্জালে ঢেকে গিয়েছিল। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুষ্কৃতীরা এই স্থানটি অসামাজিক কাজ করার জন্য বেছে নিয়েছিল।
এ সব বন্ধ করার জন্য এগিয়ে আসেন স্থানীয় পরিবেশ প্রেমীরা।তারা একত্রিত হয়ে গড়ে তোলেন ” মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি। তাঁরা মৃতপ্রায় বটগাছের ক্ষতিগ্রস্ত ও নতুন ঝুরি গুলি বাঁচানোর জন্য পরিকল্পনা করেন।বাঁশকে দু ‘ ফালা করে তার ফাঁকের মধ্যে ঝুরি গুলি ঢুকিয়ে লোহার তার দিয়ে প্রথমে বেঁধে ফেলে। তারপরে বাঁশের গোড়ার দিকটা মাটিতে পুঁতে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্ৰহণ করে। এই কাজ গুলি করার জন্য প্রয়োজন ছিল অর্থ ও লোকবল।
সমিতি গাছটির নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। এই আবেদনে সাড়া দিয়ে অনেকেই এগিয়ে আসেন।” মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি ” মানুষের কাছ থেকে সহায়তার সাড়া পেয়ে ২০১৬ সালের ৯ আগষ্ট সমিতির সদস্য – সদস্যরা ১৯ টি বট ঝুরি সংরক্ষণ করেন। সংরক্ষিত বটের ঝুরি গুলির যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেই জন্য বটগাছটির চারপাশ বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেন সমিতির সদস্যরা।
উলুবেড়িয়া ১ নং ব্লক প্রশাসনের কাছে এই কাজের জন্য সহায়তার আবেদন জানিয়েছিল ” মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি ” র সদস্য -সদস্যারা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে ব্লক প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় চন্ডীপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে লক্ষাধিক টাকা খরচ করে বটগাছটির চারপাশ ইঁট দিয়ে গেঁথে মাটি ফেলা হয়।
এই স্থানে অসামাজিক কাজ বন্ধ করার জন্য সমিতির সদস্য -সদস্যারা ঘন ঘন স্থানটি পরিদর্শন করেন।বট গাছের নিচের চত্বর তাঁরা নিয়মিত পরিষ্কার – পরিচ্ছন্ন , জঞ্জাল পরিষ্কার করেন।আমফানে গাছের ডালে ঝুলতে থাকা পাখির বাসা গুলি উড়ে গিয়েছিল। ভেঙে গিয়েছিল। সমিতির তরফ থেকে মাটির হাঁড়িতে কৃত্রিম বাসা করে দেওয়া হয়।বাসা গুলিতে পাখিরা ডিম পাড়ে।
আরও পড়ুন – চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে
এখন এই পুর্নরুজ্জিবিত বট গাছে হাজারো পাখির মেলা।ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ডাক। সামনে দিয়ে বয়ে চলেছে দামোদর নদ। এই নদের চড়ে হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন সবজির চাষ। কাছে মাঠ থাকায় সেখানে আগে থেকেই শরীর চর্চা করতে আসতো অনেকেই।এখন সেই শরীর চর্চা অনেকটা সরে এসেছে এই বটতলায়।একই সঙ্গে নানান প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি ও চালাচ্ছে শিশু থেকে যুবক – যুবতীরা এই বটতলায়।
শরীর চর্চা করার ফাঁকে একজন ছাত্র বলে,’ প্রকৃতির মাঝে শরীর চর্চা আমাদের বাড়তি উৎসাহ দেয় ‘ ।
এই উদ্যোগের প্রধান কারিগর তথা ” মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি ” র সম্পাদিকা জয়িতা কুন্ডু কুঁতির কথায়, ‘ স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রশাসন হাত মিলিয়ে গাছ ও প্রকৃতির ধ্বংস যে ঠেকাতে পারে , এই বটগাছটিই তার প্রমাণ ‘ ।