মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মালদহে এক পঞ্চায়েতের উন্নয়নের কাজ স্তব্ধ। পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। বকেয়া কাজ দ্রুত শেষ করার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও প্রায় এক বছরের উপর হতে চলল এলাকায় কোন উন্নয়নের কাজ হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এমন কি তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্ধে বিগত অর্থ বর্ষের বাজেট পেশ করতে পারেননি। এই অবস্থায় তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান পঞ্চায়েতের ২ বিজেপি সদস্যকে নিয়ে ২০২৩-২৪ সালের খসড়া বাজেটই পেশ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে অধিকাংশ দলীয় সদস্যদের বাধায় তা করতে পারলেন না পঞ্চায়েত প্রধান।
এই সভাকে কেন্দ্র করে পঞ্চায়েতে তীব্র অশান্তিরও আশঙ্কা ছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোতায়েন করা হয়েছিল পুলিশও। উপস্থিত ছিলেন প্রায় সব পঞ্চায়েত সদস্য থেকে পঞ্চায়েত প্রধানও। কিন্তু দেখা গেল পঞ্চায়েত প্রধানকে নিয়ে প্রধানের পক্ষে মাত্র ৪ জন সদস্য রয়েছেন। আর বাকি ১৫ জনই প্রধানের বিপক্ষে! ফলে সাধারণ সভায় বাজেট পাশ না হওয়ায় সকলেই ফিরে গেলেন।
শুক্রবার বিকালে এমনই ঘটনা ঘটেছে পুরাতন মালদা ব্লকের মহিষবাথানি গ্রাম পঞ্চায়েতে। এই গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট ২১ জন সদস্য। পঞ্চায়েতটি শাসক তৃণমূলের দখলে। কারণ,এখানে বিজেপির সদস্য রয়েছেন মাত্র ২ জন।
তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সারাফত আলি বলেন,’আমরা ১৫ জন তৃণমূল সদস্য একদিকে। প্রধানের দিকে ২ জন বিজেপির ও একজন তৃণমূলের সদস্য রয়েছেন। একজনের মৃত্যু হয়েছে। কোনও পঞ্চায়েত সদস্যের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই প্রধান নিজের খুশি মতো কাজ করছে। ফলে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনও উন্নয়ন হয়নি। বিগত বৎসরের উন্নয়নের তালিকা বা হিসেবও দিতে পারেননি। চলতি আর্থিক বছরেরই বাজেট বা হিসেব কিছু নেই, তাহলে আগামি ২০২৩-২৪ সালের খসড়া বাজেট পেশ করার দরকার কী? তাই আমরা সই করিনি। ফলে বাজেট পাশ হয়নি।”
আরও পড়ুন – তৃণমূলের জনসভায় মহিলাদের উপস্থিতি কম, লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধের নিদান!
পুরাতন মালদহ তৃণমূল ব্লক কমিটির সদস্য তথা মহিষবাথানি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধানের স্বামী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ১৪ মাস হল এই গ্রাম পঞ্চায়েতে অনাস্থার মাধ্যমে নতুন প্রধান হয়েছেন রুকসানা বিবি। ২০২১-২২ অর্থ বর্ষে প্রস্তাবিত বরাদ্দ অর্থে কোন কাজই হয়নি। সেই টাকা গেল কোথায়। সেই টাকার কোনও খতিয়ান পঞ্চায়েতে তুলে ধরতে পারেননি প্রধান। উল্টে ২০২৩-২৪ সালের খসড়া বাজেট পাশ করার চেষ্টা করছিলেন প্রধান। তাও আবার বিজেপির দুই সদস্যকে নিয়ে। অথচ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এই গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল রয়েছে। তৃণমূল সদস্যদের পাত্তাই দিচ্ছেন না উনি। এভাবে একটা পঞ্চায়েত চলতে পারে না।
স্থানীয় বাসিন্দা মহ: শুকুর আলী বলেন, অঞ্চলে গেলে প্রধানের দেখা ঠিক মত পাওয়া যায় না।আমরা তো উন্নয়ন চাই। এভাবে পঞ্চায়েত অচল হলে এলাকার উন্নয়ন বন্ধ হবে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ক্ষতি হবে।
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩-২৪ সালের বাজেট পাশ করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান। সাধারণ সভা ডাকা হয়েছিল সে জন্য। কিন্তু সাধারণ সভায় বাকি পঞ্চায়েত সদস্যরা বিগত বছরের বাজেট ও কাজকর্মের হিসেব দেখতে চান। তা নিয়ে উত্তাল হয় সভা। এমন পরিস্থিতিতে চরম অস্বস্তিতে পড়ে পঞ্চায়েত অফিস ছেড়ে বাড়ি চলে যান তৃণমূলের প্রধান রুকসানা খাতুন। ফলে বাজেট পেশ হয়নি। ফলে পঞ্চায়েতে অচলাবস্থা তৈরির আশঙ্কা। যদিও এব্যাপারে মহিষবাথানি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল দলের প্রধান রুখসানা বিবি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।