দারিদ্রতাকে জয় করে জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে রাজ্যের হয়ে দ্বিতীয় স্থানে মালদহের সপ্তমী সিংহ

দারিদ্রতাকে জয় করে জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে রাজ্যের হয়ে দ্বিতীয় স্থানে মালদহের সপ্তমী সিংহ

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

দারিদ্রতাকে জয় করে জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে রাজ্যের হয়ে দ্বিতীয় স্থানে মালদহের সপ্তমী সিংহ। দারিদ্র্যকে জয় করে জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে ৩০০০ মিটার রেস ওয়াকিংএ পুরস্কারের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন মালদহের আইহোর টোটো চালকের মেয়ে সপ্তমী সিংহ। এর আগে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় রেকর্ড সময় করে প্রথম হয়েছেন।

 

কঠোর পরিশ্রম আর নিষ্ঠার কারণে কোনো বাধাই তার সাফল্যের রথ থামাতে পারেনি। তার ধারাবাহিক সাফল্যে তার কোচ থেকে তার সহপাঠী সবাই খুশি। কিন্তু আনন্দ নেই সপ্তমীর । ভবিষ্যতে খেলা চালানো নিয়ে হতাশ সপ্তমীর পরিবার। তার বাবা পেশায় একজন টোটো চালক।
দৈনিক গড়ে দুই থেকে তিন শত টাকা আয়ে ৪ সদস্যের পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। সপ্তমীর ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি ঝোক। কিন্তু তার এই যাত্রার পথ ছিল কণ্টকাকীর্ণ। দারিদ্রতার কারণে শত বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে।

 

প্রতিদিন তাকে প্র্যাকটিস করার জন্য আসতে হয় মালদহ শহরে। মালদা থেকে আইহো যাতায়াতের পয়সা দেওয়ার মতো সামর্থ্য তার পরিবারের নেই। তার প্রশিক্ষক অমিতাভ রায় এই যাতায়াতের ব্যায়ভার বহন করেন।
এবার ৩৭ তম ন্যাশনাল জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ওয়াকিং রেসে পশ্চিমবঙ্গের হয়ে দ্বিতীয় হলেন মালদার আইহোর সপ্তমী সিংহ। সে আইহো স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। বৃহস্পতিবার সকালে মালদা এয়ারপোর্ট ময়দানে তাকে সংবর্ধনা জানানো হয়। সংবর্ধনা জানান তার কোচ অমিতাভ রায় সহ তার সহকর্মীরা। উল্লেখ্য চলতি মাসের ১১ ই নভেম্বর থেকে ১৫ ই নভেম্বর পর্যন্ত আসামের গুহাটিতে অনুষ্ঠিত হয় ৩৭ তম ন্যাশনাল জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়ন।

 

ভারতের ২৯ টি রাজ্যের প্রতিযোগিরা অংশ নেয়। রাজ্য থেকে ৪২ জনের মধ্যে মালদা থেকে অংশ নেয় দুজন। ৩ কিলোমিটার রেস ওয়াকিং এ অংশ নিয়ে জাতীয় স্তরে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে সে। ওই ভাবেই তার এই সাফল্যে গর্বিত তার কোচ অমিতাভ রায়। তিনি জানান, রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল আসামের গৌহাটিতে। এখানে তার বিভাগ ৩০০০ মিটার রেস ওয়াকিং এ দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। আগামী ২০২৩ এর ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক স্তরে যুব এশিয়া প্রতিযোগিতা রয়েছে সেখানে সে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

 

কারণ জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় ভারতের নির্বাচকরা উপস্থিত ছিলেন। সপ্তমীর জাতীয় প্রতিযোগিতার পারফরমেন্সে তারা খুবই খুশি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে যুব এশিয়া প্রতিযোগিতার জন্য তাকে তৈরি থাকতে বলেছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সপ্তমীদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তার বাবা টোটো চালান। তার পক্ষে তার চার ছেলে মেয়ের সংসার চালিয়ে তার খেলাধুলার খরচ যোগাড় করা কঠিন। তাই আমাকে প্রতিদিন আইহো থেকে মালদা যাতায়াতের খরচ বহন করতে হয়।

 

এই জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য মালদহে একজনের বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে রাখতে হয়েছিল আমার নিজের খরচে। তার উপর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে প্রশিক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা ও জায়গা নিয়ে। মালদহে সিনথেটিক ট্রাক নেই উপরন্তু ৪০০ মিটারের কোন ট্রাক নেই। আন্তর্জাতিক স্তরে খেলতে গেলে সিনথেটিক ট্রাকে প্র্যাকটিস করতে হয় নতুবা অনেক পিছিয়ে পড়তে হয়।

 

আমরা নিজেদের খরচে এয়ারপোর্ট এর কাছে একটি ৪০০ মিটারের সাধারণ ট্রাক তৈরি করেছি কিন্তু সেখানেও সমস্যা হচ্ছে প্রতিদিন জেলা পরিবহন দপ্তরের গাড়ি গুলি ট্রায়াল দেওয়ার জন্য সেখানে যায়। প্রায় বিকাল পর্যন্ত এই ট্রায়াল চলে হলে এদের প্রশিক্ষণের খুবই অসুবিধা হয়। আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন করছি যাতে এই টায়াল এর জায়গাটা এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। পাশাপাশি তিনি জানান
তার এই সাফল্যে গর্বিত গোটা রাজ্য।

আরও পড়ুন – রাহুল গান্ধীর ”পাপ্পু’ নামটা এবার কাটল, বিজেপির ঘুম উড়ল

জেলা ক্রীড়া সংস্থা সাধারণ সম্পাদক তথা ইংরেজবাজার ৎপৌরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী জানান, তার এই সাফল্যে জেলার ক্রীড়া মহল খুবই খুশি। ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে তাকে মালদহ টাউন স্টেশনে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। আগামীতে জেলায় জাতীয় স্তরের সফল প্রতিযোগীদের কেন্দ্রীয়ভাবে সম্বর্ধনা দেওয়া হবে। সিনথেটিক ট্রাকের সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন জেলায় বিবেকানন্দ স্কুলের সামনের মাঠে সিনথেটিক ট্রাক প্রস্তুতির কাজ চলছে। এয়ারপোর্ট মাঠে প্রশিক্ষণের সমস্যার ব্যাপারে তিনি জানান, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সাথে তিনি কথা বলবেন।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top