মঞ্চ জুড়ে সিনেমা — অতীনপুরের রাতকথা। ফেব্রুয়ারি মাসের এক রাত। প্রত্যন্ত গ্রামের অনামী এক ছোটো স্টেশন। নাম অতীনপুর। শেষ ট্রেন মিস করে গল্পের নায়ক সারস্বত সেই স্টেশনেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে আলাপ হয় গল্পের নায়িকা কামিনীর সাথে। কে এই কামিনী? এত রাতে এই নির্জন স্টেশনে কী করছে সে? দুজনের কথোপকথনে এগিয়ে চলে গল্প। কথায় কথায় উঠে আসে অতীতের স্মৃতি। একের পর এক চমক আসতে থাকে সারস্বতের সামনে। ক্রমশই ঘণীভূত হতে থাকে রহস্যজাল।
বাগুইআটি সহজিয়া নাট্যসংস্থা’র প্রযোজনায় রহস্যঘন উত্তেজনায় পরিপূর্ণ টানটান এক রোমাঞ্চকর নাট্য “অতীনপুরের রাতকথা”-র প্রিমিয়ার শো মঞ্চস্থ হয়ে গেল গত ১৩ নভেম্বর ২০২২ উত্তর কলকাতার মিনার্ভা থিয়েটারে। নাট্যকার ও পরিচালক শ্রী প্রশান্ত সেনের অনোন্য উপস্থাপনাগুণে মঞ্চের এই নাট্য যেন হয়ে ওঠে সিনেমা — মঞ্চে চলচ্চিত্রের অনুভূতি পায় দর্শক। এই নাট্যে প্রেম আছে, আছে প্রতারণাও; বিশ্বাস আছে,আছে বিশ্বাসঘাতকতাও, অ্যাকশন আছে, কমেডি রিলিফ আছে। সব মিলিয়ে দর্শক পেয়েছে পরিপূর্ণ বিনোদন— এটা বলাই যায়। এই নাটকের মূখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাট্যকার ও নির্দেশক প্রশান্ত সেন স্বয়ং।
তাঁর বলিষ্ঠ অভিনয়গুণে মুগ্ধ হয়েছে দর্শক। নাটকের নায়িকা কামিনীর ভূমিকায় মহুয়া সরকারও বেশ সাবলীল, বিশেষ করে তার শরীরী বিভঙ্গ ও চোখের অভিব্যক্তি। নাটকের মুখ্য খল চরিত্র সুভাষ চাকলাদারের ভূমিকায় তন্ময় মন্ডলের অভিনয় ও শরীরী ভাষা নজর কেড়েছে দর্শকদের। মালতীর ভূমিকায় তনিমা মুখার্জী ও রেলপুলিশ মদন মাকালের ভূমিকায় জগন্নাথ ঘোষের জুটি উপস্থিত দর্শকদের সম্মিলিত করতালি কুড়িয়ে নেয়। তাদের কৌতুকাভিনয় এই নাটকের কমিক রিলিফ দিয়েছে দর্শকদের। বিশেষ একটি চরিত্রে সৌরভ নায়েকের অভিনয়ও উল্লেখ্য।
এছাড়া পঞ্চায়েত প্রধানের ভূমিকায় রবীন চক্রবর্তী, সারস্বতের মায়ের ভূমিকায় র্অর্ণিশা সেন, তরুণ সারস্বতের ভূমিকায় অপূর্ব খাঁড়া, মণীষা মণ্ডল চরিত্রে সোমা সাহা, দুটি খল চরিত্রে যথাক্রমে জ্যোতিষ্ক চ্যাটার্জী ও সুদান হালদার এবং অন্যান্য চরিত্রে রিঙ্কি দাস, অঙ্কিতা দে ও কোমল দাস নিজ নিজ জায়গায় বেশ স্বচ্ছন্দ্য।
এই নাট্যে ব্যবহৃত গান প্রযোজনায় একটি অন্যতম অলঙ্কার। নাট্যকার-নির্দেশক প্রশান্ত সেন রচিত দুটি মৌলিক গানে সুর দিয়েছেন অর্ণিশা সেন, গেয়েছেন তনিমা মুখার্জী, জ্যোতিষ্ক চ্যাটার্জী ও কৃত্তিকা বোস।
আরও পড়ুন – রাহুল গান্ধীর ”পাপ্পু’ নামটা এবার কাটল, বিজেপির ঘুম উড়ল
এই প্রযোজনাটির আলোক পরিকল্পনা ও নির্মানে সুবল কর্মকার এবং আবহ পরিকল্পনা ও শব্দ নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োগে অর্ণিশা সেন। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও প্রপস্ ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে করেছেন রেণু দাস, কৃত্তিকা বোস ও প্রত্যুষা সেন। মঞ্চ সজ্জা ও নির্মাণে মদন হালদার ও সুদান হালদার। সামগ্রিক সহযোগিতায় গৌরব শর্মা।
নাটকের শেষে নির্দেশক প্রশান্ত সেন বলেন, “এই নাটকের বেশিরভাগ কলাকুশলী প্রথম মঞ্চে পা রেখেছেন। নবাগতদের নিয়ে এই সফল নাট্যের মঞ্চায়ন করতে পেরে আমি অত্যন্ত আহ্লাদিত।”