রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের সম্পূর্ণ দায় রাশিয়ার উপর চাপাতে চায় ইউরোপ আমেরিকা। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুধু অস্ত্রে লড়াই হয় না। সঙ্গে থাকে পশ্চিমা মিডিয়ার গোয়েবলীয় অপপ্রচার। রাশিয়া যুদ্ধাপরাধী এটা বলে বাইডেন ইতিমধ্যে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় থেকে যেতে চাইছেন। তাই রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ টিকিয়ে রাখতে চাইছেন।পাঠাচ্ছেন অস্ত্র আর চালাচ্ছেন অপপ্রচার।ইংরেজিতে একটি কথা রয়েছে “Whoever controls the media, controls mind”.Jim Morison.
অর্থাৎ,যে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে সে মনকেও নিয়ন্ত্রণ করে।এই স্বত:সিদ্ধ বাক্য আজ মিডিয়ার কাব্য রচনা করে মিডিয়াকে মহান শক্তিশালী তকমা সেটে দিয়েছে। মানুষ নয় মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে মানুষের মনকে তাই মননে বাসা বাধে এক দ্বৈত দৈত্য। সে খেলায়। সে চালায়। সে নাচায়। নাচে বিশ্ব বিবেক। তাইতো পশ্চিমা শক্তিশালী মিডিয়া বিশ্বকে পরিচালনা করছে বলে চলে আসা ধারণার বাস্তবতা অনস্বীকার্য।
সম্প্রতি ভারতের একটি ইংরেজি জাতীয়তাবাদী চ্যানেলের বকবকুম করা বড় আঙ্করকে ভদ্র ভাষায় তার ভুল ধরিয়ে বেপর্দা করে দিলেন চ্যানেলের এক বক্তা। তিনি বুঝিয়ে বললেন ,ওই আঙ্কর যেভাবে খবর পরিবেশন বা যে আলোচনার এপিসোড চালাচ্ছেন তা ভারতের স্টান্ড ও স্বার্থের পরিপন্থী। তথা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। আঙ্করটি বেশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন এই আকস্মিক আক্রমণে তাই চ্যানেলে যখন লাইভ চলছে। তিনি নিজে একজন জাতীয়তাবাদী রিপোর্টার এবং তার চ্যানেলও জাতীয়তাবাদী। তার মুল শ্লোগান ‘নেশন ওয়ান টু নো’। নেশন তো দেশের পক্ষের কথা জানতে চায়। দেশ বিরোধীদের নয়।
এই বিবেচনা আঙ্করের কাছে প্রত্যাশিত। যদিও আঙ্করের বাতিক আছে নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করার। বক্তাটি ছিলেন রাশিয়ার এক রাষ্ট্র দুত। যখন তার বলার সময় বা পালা এসেছিল, তখন তিনি বুঝিয়ে বলেন, “আপনার সংবাদ পরিবেশন আপনার দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।” ভারতের বন্ধু দেশের বিরোধীতা করা জাতীয়তাবাদের পরিপন্থী। রাশিয়ার এই রাষ্ট্রদূতের কথা শুনে চূড়ান্ত বিব্রত বোধ করেছিলেন ‘রিপাবলিক চ্যানেলে’র এডিটর ও সঞ্চালক ‘অর্ণব গোস্বামী’।
কিন্তু পশ্চিমা নিউজ হাউস এই ভুল করেনা। তারা তাদের মনের মত করে খবর তৈরি করে আর সেই খবর কয়েক হাজার মিডিয়ার মাধ্যমে নিমেষে ছড়িয়ে দেবার কাজ করে। এটা তারা দীর্ঘদিন ধরেই করে চলেছে নিঁখুতভাবে। “একবার একটি বাংলা মিডিয়া জোর দিয়ে বলেছিল ‘আমরা যা লিখব সেটাই খবর।’ পশ্চিমা মিডিয়া এই ধারণায় বিশ্বাস করে। পৃথিবীর বাকি কোন মিডিয়ার এত বড় শক্তি নেই যে সত্যকেও মিথ্যা বানিয়ে বিশ্বাসযোগ্য করে পরিবেশন করবে। এর পেছনে মোটা অর্থ ও সূক্ষ্ম মাথা লাগে যা আছে ইউরোপের। যা আছে মার্কিনীদের। সঙ্গে আছে খুব উন্নত প্রযুক্তি।
রাশিয়া ইউক্রেন দখল করতে তিনদিনের বেশী সময় লাগত না। কিন্তু সাধারণ মানুষের ওপর যেন আঘাত না আসে। বা সাধারণ নিরাপরাধ মানুষের ওপর যেন অস্ত্র বর্ষণ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে যুদ্ধ করছে। অথচ ইউরোপীয় মিডিয়া উল্টো প্রচার করে চলেছে। ভারতের কিছু মিডিয়া তাদের ফাঁদে পা দিয়ে তাদের সরবরাহ করা ভুল সংবাদ পরিবেশন করে চলেছে।
রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে আমেরিকাসহ ইউরোপের ৩০টি উন্নত দেশের যে প্যাক্ট ন্যাটো তারা শক্তিধর রাশিয়ার বিরুদ্ধে হাতধুয়ে লেগে পড়েছে অপপ্রচারে। এমনকি রাশিয়া পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি দিয়েছে, যা সর্বৈব অসত্য। কিন্তু ভারতের অনেক মিডিয়া কিন্তু বিভ্রান্ত হচ্ছে ওইসব প্রচারের আলোকে। তাদের ফোটেজ নিয়ে ক্রশ চেকিং না করেই খবর চালাচ্ছে স্বীকার করছে “এই সব খবরের সত্যতা তারা যাচাই করিনি”। করনি যখন তখন খবরকরা কেন? আসলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার দৌড়। টিআরপির দৌড়।
“পশ্চিমা মিডিয়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেতিবাচক একচেটিয়া অসত্য প্রচার করে চলেছে। একটা প্রোপোগান্ডা প্রচার চলছে। এটা একপ্রকার যুদ্ধ ঘোষণার সামিল”- বলেছেন লেখক জিন্নাডি টিমচেঙ্কো। এই ধরনের খেলা দেখাচ্ছে পশ্চিমা মিডিয়া। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক বিষোদ্গার। ইউক্রেন তাদের সদস্য না হলেও ইউক্রেনের জন্য কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন চলছে।
রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের শত বছরের সুসম্পর্ক। পঞ্চাশ বছরের পুরণো চুক্তি যে দুইদেশের কেউ আক্রান্ত হলে পরস্পরের পাশে এসে দাঁড়াবে। প্রয়োজনে যুদ্ধে অংশ নেবে। সেই সুসম্পর্ক ভুলে কিছু অর্বাচীন মিডিয়া রাশিয়া বিরোধী খবর পরিবেশন করছে। ভুললে চলবে না ১৯৭১ পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের কথা। সেদিন রাশিয়া পাশে না পেলে বাংলাদেশ স্বাধীন করা যেতনা।
আমেরিকা পাকিস্তানের সাহায্যে ভারত মহাসাগরে ভারত অভিমুখে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল। বোমা ফেলার হুমকি দিয়েছিল। রাশিয়া তখন বিশ নৌবহর পাঠিয়েছিল। আমেরিকা সরে পড়তে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বুদ্ধির প্রশংসা করতে হয়। তিনি তড়িঘড়ি রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেন যার নাম হয় ইন্ডিয়া সোভিয়েত ট্রিটি অফসপিস,ফ্রেন্ডশিপ এন্ড কোঅপারেশন, স্বাক্ষরিত হয়েছিল আগষ্ট ১৯৭১। এরফলে পাকিস্তানের হয়ে আমেরিকার ভয় দেখানোর খেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
আমেরিকার মত মাও সে তুংয়ের চায়নার সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল ইয়াহিয়া খানের। তবুও চীন এই যুদ্ধে ভারতের বিপক্ষে যায় নি। এর কারণ আজো বিশ্লেষকদের কাছে বিস্ময়কর যে কেন চীন পাকিস্তানের পাশে ভৃরতের বিরুদ্ধে এসে দাড়ায়নি। যে চীন সিয়াচীন দখল করে নেয় ১৯৬২ তে সেই চীনের ৯ বছর পর বাগে পেয়েও ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে কোনরূপ সাহায্য করেনি কেন !সেদিনও ভারত-রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা মিডিয়া বেশ লেগে পড়েছিল। তবে বেশীদুর এগোয়নি।
আজ ইউক্রেন যুদ্ধ জয় করবে রাশিয়া এটা নিশ্চিত হয়ে গেছে। সেখানে জেলেসেঙ্কোর বদলে রাশিয়ার কোন বন্ধু প্রেসিডেন্টের কুর্শিতে বসবে নিশ্চিত। তবে ন্যাটোর চিল চিৎকারে আর একতরফা মিথ্যকপরিবেশন কাজ দেবেনা। সোশ্যাল মিডিয়াও ইউরোপীয়দের দটবৃরা নিয়ন্ত্রিত হওয়া এগুলিতেও অসত্য খবর পরিবেশিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। এমনকি কমিউনিস্ট দলগুলোর কোন হেলদোল নেই রাশিয়ার পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
অথচ ইউরোপ দ্বিচারিতা করছে। অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে ইউক্রেনকে। আবার বলছে রাশিয়া যুদ্ধের নেশায় মেতেছে।
“পশ্চিমী মিডিয়া কেবলমাত্র ভয়ের ও সুরক্ষাহীনতার পরিবেশ তৈরি করে থাকে” – মো:আহমদিনেজাদ।
“মানুষের জীবনে দুটি দিন সবথেকে মূল্যবান প্রথমটি যেদিন সে জন্মগ্রহন করেছে। আর দ্বিতিয় যেদিন বুঝতে পারে কেন তার জন্ম হয়েছে।”- মার্ক টোয়েন।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়াত করছেও মিডিয়া। কেননা বিভ্রান্তী ছড়ানো হচ্ছে। যেমন ইউক্রেনের রাজধানী কিইভে আক্রমণ শুরুর আগেই পশ্চিমা মিডিয়া পরিবেশন করে যে রাশিয়া কিইভ আক্রমণ করেছে। এভাবেই বিকৃত করা হচ্ছে খবরকে। একজন বা দুজন সাংবাদিক পাঠিয়ে একটি দেশের কতটুকু কভার করা সম্ভব? সেটা অনুমান করলে খবরের ভিতটা কত শক্ত ও সঠিক তা প্রমাণ হয়ে যাবে। তবুও তারা যা দেয় সেটুকুর ওপর নির্ভর করে মননে যুদ্ধের কাছে পৌঁছাতে হয় পাঠক ও দর্শকদের। ‘নান্য পন্থা’।