বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের গাড়ি আটকাতে গিয়ে তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীদের দিয়ে বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের ব্যাপক মারধর করার অভিযোগ উঠল। পড়ুয়াদের আরও অভিযোগ,উপাচার্য নিজের নিরাপত্তাকর্মীদের উপরে হামলার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ পেয়ে নিরাপত্তা কর্মীরা ক্ষুধার্ত বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে পড়ুয়াদের উপর।শুধু তাই নয়,এক ছাত্রীকে মহিলা নিরাপত্তাকর্মীরা কার্যত তুলে নিয়ে গিয়ে পাশের ঝোপের ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়।যা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। তীব্র সমালোচনা করেছে রাজ্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদও।তবে এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ধর্না মঞ্চ করে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেছে গত চোদ্দ দিন ধরে।
আরও পড়ুন – ইউক্রেনজুড়ে নতুন করে মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করল রাশিয়া
এদিন বিকেলে আচমকাই উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নিজের বাসভবন থেকে গাড়ি নিয়ে বিশ্বভারতীর ছেড়ে যাবার পরিকল্পনা করে , কিন্তু বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা বুঝতে পেরে উপাচার্যের গাড়ির সামনের রাস্তায় উপর শুয়ে পড়ে আটকে দেয় উপাচার্য কে , সেসময় উপাচার্য গাড়ি নিয়ে বাসভবনের ভেতরে ফিরে যায় , কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ আসে ভবনের সামনে , দ্বিতীয়বার পুলিশের ঘেরাটোপে উপাচার্য বাসভবন ছেড়ে চলে যেতে চায় , দ্বিতীয়বার ও পড়ুয়ারা তৎপর হয়ে আটকে দেয় উপাচার্য কে। ফলে নিজের বাসভবন থেকে আর বেরোতে পারে না উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। এরপর ক্ষিপ্ত উপাচার্য নিজের নিরাপত্তাকর্মীদের ছাত্র-ছাত্রীদের উপরে হামলার নির্দেশ দেয়।
যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি সুদীপ রাহা। বীরভূম সফরে এসে রাজ্য ছাএ নেতা জানিয়েছেন ,বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী আরএসএস এর রাজনৈতিক আখড়ায় পরিণত করতে চাইছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে বাধা পেয়ে তাদের ওপর অত্যাচার শুরু করেছে। ভারতীয় আন্দোলনরত পড়ুয়াদের পাশে রাজ্যের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আছে।
উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী মনে করছেন , আর মাথার উপর আচার্য হিসাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রয়েছেন বলে তিনি যা খুশি তাই করবেন। হিটলারি শাসনব্যবস্থা কায়েম করে নিজের স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্তগুলো বিশ্বভারতীর ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন বারবার। পড়ুয়ারা উপাচার্যের মনোকামনা পূরণের ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা তৈরি করছে , তাই উপাচার্য চটছেন। ছাত্রনেতা হিসেবে উপাচার্যকে পরিষ্কার বলে দিতে চাই , এইভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে চক্রান্ত করে অথবা নিরাপত্তারক্ষীদের নামে গুন্ডা বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে দমানো যাবে না।
পড়ুয়াদের উপর যতবার আক্রমণ নেমে আসবে ততবার তাদের আন্দোলন আরো সংঘবদ্ধভাবে। এখন পঞ্চাশ জন পড়ুয়া হয়ত আন্দোলনে নেমেছে, এই ধরনের অত্যাচার চলতে থাকলে আগামী দিনে পঞ্চাশ হাজার পড়ুয়া আপনার সম্মুখসমরে দাঁড়িয়ে আপনার অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করবে। উপাচার্য মহাশয় এর বন্দুকে কতগুলি আছে , আর ওনার হাতে কত লেঠেল বাহিনী আছে তা আমরাও সময় হলে দেখতে চাই।
যেভাবে একজন গবেষণারত ছাত্রীকে রাস্তার উপর টেনে হিছড়ে ফেলে বিশ্বভারতীর মহিলা নিরাপত্তাকর্মীরা নিয়ে এলো তা দেখে স্তম্বিত , বিশ্বভারতী আর বাসযোগ্য নেই। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নেতৃত্বে শান্তিনিকেতন জুড়ে জঙ্গল রাজ কায়েম হয়েছে। এমনই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সদস্য ও প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর। বিশ্বভারতীর আরেক আশ্রমিক সুবোধ মিত্র জানিয়েছেন , অত্যন্ত প্রতিহিংসাপরায়ণ , একগুঁয়ে , অসংযমী মানুষ বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। একজন নিরীহ নিরস্ত্র গবেষণারত ছাত্রীর উপরে উপাচার্যের নির্দেশে মহিলা নিরাপত্তাকর্মীরা যেভাবে হামলা চালালো তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
এই ঘটনার আমরা তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। আসলে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী আরএসএসের দপ্তর হিসেবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কে ব্যবহার করতে চেয়ে ছিলেন , কিন্তু সেই কাজে তিনি প্রতিবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের কাছে। উনার এতো রাগ নিজের সন্তান সম পড়ুয়াদের উপর। সবকিছুর একটা শেষ আছে , এই উপাচার্যের সময় ফুরিয়ে আসছে। বিশ্বভারতীর মানুষ একদিন ওনাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এখান থেকে বিতাড়িত করবে।